দুর্গোৎসব আজ শুরুঃ চট্টগ্রামে দুই হাজার ৭১৩ মণ্ডপ

ঢাকের শব্দ, উলুধ্বনি ভেসে আসছে চারদিক থেকে। শুরু হয়ে গেছে চণ্ডী পাঠ। আলোর ঝলকানিতে শিশু-কিশোরদের চিত্ত দোলা দিচ্ছে। ভীতি উদ্রেক না করা আতশ বাজি নিয়ে কাড়াকাড়ি তো লেগেই গেছে। সবকিছুই ঘোষণা করছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। শুরু হয়ে গেছে সনাতন সম্প্রদায়ের শারদ উৎসব। বোধনের মধ্য দিয়ে আজ রোববার থেকেই দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। চট্টগ্রামে এবার মোট দুই হাজার ৭১৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তার মধ্যে মহানগরের পূজামণ্ডপ হচ্ছে ২৩৫টি। দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে মণ্ডপগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নগরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। নগরের জেএমসেন হল, হাজারি গলি, নালাপাড়া, ঘাটফরহাদবেগ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, রামকৃষ্ণ মিশন, টেরিবাজারসহ বিভিন্ন স্থানের আকর্ষণীয় পূজা ও সাজসজ্জা দেখতে আগে থেকেই সেখানে ভিড় করছেন উৎসুক লোকজন।
নগরের বেশ কিছু পূজামণ্ডপ পৃথকভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছে। যেমন ঘাটফরহাদবেগ পূজা উদ্যাপন পরিষদ এবার তাদের শারদীয় দুর্গোৎসবের ঐতিহ্যের ৫৫ বছর পালন করছে। এ উপলক্ষে তারা শুক্রবার সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। সপ্তাহব্যাপী উৎসবের প্রথম দিনে তুলসীধামের মোহস্ত মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী নারায়ণ পুরী মহারাজ মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন করে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন।
বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় তাদের আলোচনা সভা। এতে চট্টগ্রাম রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী শক্তিনাথান্দ মহারাজ, স্বদেশ চক্রবর্তী, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রানা বিশ্বাস প্রমুখ বক্তব্য দেন।
একইভাবে উত্তর নালাপাড়া, আসকারদীঘি লোকনাথ মন্দিরসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটক মঞ্চায়ন করবে।
তবে কেন্দ্রীয়ভাবে নগরের জেএমসেন হলে প্রতিদিনই রয়েছে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা বিশ্বাস বলেন, ‘বিভিন্ন মণ্ডপ নিজ নিজ উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে। আমরা সাজসজ্জা, সুশৃঙ্খলতা, আলোকসজ্জা ইত্যাদির ওপর বিভিন্ন মণ্ডপকে পুরস্কৃত করব।’
এদিকে, নগরের বাইরে বিভিন্ন থানায়ও মহাসমারোহে চলছে দুর্গোৎসব। এখানেও আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বোয়ালখালী সারোয়াতলীর ভবানী ভবন মাতৃমন্দির বিজয়া সম্মেলন, নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আনোয়ারার বিলপুর রাধামাধব সেবাশ্রম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
এদিকে পূজামণ্ডপের নিরাপত্তার বিষয়ে মহানগর ও জেলা পূজা পরিষদ পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ সময় তাঁরা মণ্ডপগুলোর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দাবি করেন। নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়।
এ প্রসঙ্গে নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আমেনা বেগম বলেন, ‘আমরা তিনটি ক্যাটাগরিতে মণ্ডপগুলোকে ভাগ করে নিরাপত্তা দিচ্ছি। তবে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে চলফেরার সময় কেউ যাতে ছিনতাই-চাঁদাবাজি কিংবা ইভ টিজিংয়ের শিকার না হন, তার ওপর। এ জন্য এখন থেকেই অভিযান চলছে। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতও কার্যকর রয়েছে।’
জানা গেছে, অতি গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে ১০ জন, গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে আটজন ও সাধারণ মণ্ডপে ছয়জন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। আগামী বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব।
মিরসরাইয়ে ৮২ পূজামণ্ডপ
মিরসরাই প্রতিনিধি জানান, মিরসরাইয়ের সর্বত্র শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। পূজা ঘিরে উপজেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপের কমিটি ব্যস্ত সময় পার করেছে।
মিরসরাই উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি উত্তম কুমার শর্মা ও সাধারণ সম্পাদক অনির্বাণ চৌধুরী জানান, এ বছর মিরসরাইয়ে ঘটপূজাসহ ৮২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে করেরহাট ইউনিয়নে তিনটি, হিংগুলি ইউনিয়নে ছয়টি, বারইয়ারহাট পৌরসভায় একটি, জোরারগঞ্জ ইউনিয়নে ১২টি, ধুম ইউনিয়নে তিনটি, ওসমানপুর ইউনিয়নে চারটি, ইছাখালী ইউনিয়নে দুইটি, কাটাছড়া ইউনিয়নে দুইটি, দুর্গাপুর ইউনিয়নে নয়টি, মিরসরাই ইউনিয়নে তিনটি, মিরসরাই পৌরসভায় চারটি, মিঠানালা ইউনিয়নে আটটি, মঘাদিয়া ইউনিয়নে সাতটি, খইয়াছড়া ইউনিয়নে তিনটি, মায়ানী ইউনিয়নে পাঁচটি, হাইতকান্দি ইউনিয়নে দুইটি ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নে আটটি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
পূজার সময় আইনশৃঙ্খলা ও মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও আঞ্চলিক পূজা কমিটির সঙ্গে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মতবিনিময় করেছে গত ২৭ সেপ্টেম্বর। উপজেলার মির কমিউনিটি সেন্টারে (সামাজিককেন্দ্র) মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহম্মদ (তদন্ত), উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনোয়ার হোসেন খান, মিরসরাই পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনির্বাণ চৌধুরী ও উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপের প্রতিনিধিরা।
কাপ্তাই
এবার কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে দুর্গাপূজা উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাপ্তাই উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর কাপ্তাই উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাজেরা খাতুনের সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যন অংসুই ছাইন চৌধুরী।
কাপ্তাই উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ সূত্র জানায়, এবার ছয়টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা উৎসব পালন করা হবে। তাঁরা বলেন প্রতিবছর নদীতে আনন্দ শোভাযাত্রা করে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এবারও কর্ণফুলীতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে প্রতিমা বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার এবং রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা উপস্থিত থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ এবং প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নেবেন বলে তাঁরা জানান।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই ছাইন চৌধুরী এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাজেরা খাতুন বলেন, পূজামণ্ডপে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে কেউ ঘটাতে না পারে, সে জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি চারজন বিজিবির সদস্য প্রতিটি পূজামণ্ডপে নিয়মিত টহলে থাকবেন বলেও তাঁরা জানান। —কাপ্তাই প্রতিনিধি
রাউজান
আর দুদিন পর শুরু হবে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ বছর রাউজানে পূজা হবে ২০২টি। আনুষ্ঠানিকভাবে পূজার কর্মসূচি শুরু হবে আজ থেকে। স্থানীয় প্রশাসন আনন্দঘন পরিবেশে পূজা উদ্যাপন নির্বিঘ্ন করতে প্রতিবছরের মতো বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।
উপজেলার বিভিন্ন মণ্ডপে চলছে এখন প্রতিমা সাজানোর কাজ। এলাকাবাসী জানান, প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিটি পূজামণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অয়োজন থাকবে। রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দর চৌধুরী জানিয়েছেন, উপজেলা প্রশাসন পূজার আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, পূজার সময় পুলিশ-র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার বিশেষ নজরদারী থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.