খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে আসতেই হবে: হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাবে বলেছেন, দেশে নির্বাচন হবে, হবে, হবেই। বিরোধী দলও সে নির্বাচনে আসবে। খালেদা জিয়াকেও নির্বাচনে আসতেই হবে। একই সঙ্গে বিরোধী দলকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিরোধী দলের সঙ্গে সংসদে আলোচনার পথ খোলা রয়েছে। শেখ হাসিনা শনিবার গণভবনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ১১ দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফর ও জাতিসংঘের ৬৬তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের অভিজ্ঞতা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজিত হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত মঙ্গলবার চার দলের এক জনসভায় হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।' এ সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন হবেই, হবেই, হবেই। বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন করবেই, করবেই, করবেই। রাজনীতি করতে চাইলে খালেদা জিয়াকেও নির্বাচনে আসতেই হবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্য রাখেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতা হস্তান্তরের আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার গঠন করতে চায়। ভোট প্রদান তাদের সাংবিধানিক অধিকার। জনগণের ভোট ছাড়া আমরা ক্ষমতায় আসতে চাই না। ভবিষ্যতে কেউ যাতে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে না পারে তাও নিশ্চিত করা হবে। নির্বাচনও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।
সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে বিএনপির দাবিকে সাধুবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটি উত্তম প্রস্তাব। আমরাও চাই সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গড়ে উঠুক। জনগণের আকাঙ্ক্ষিত গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করা হোক_ সেটাই আমরা চাই। এ জন্য বিরোধী দলকে সংসদে আসতে হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদ ও অর্থ পাচারকারীদের
রক্ষার জন্য বিরোধী দলের দেওয়া কর্মসূচি জনগণ গ্রহণ করবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকে দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল, তারা একের পর এক নাটক করেছে। আজ যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নবিদ্ধ, সেটা তো তিনিই (খালেদা জিয়া) করেছেন। ২০০৭ সালে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো নিজেদের টেক কেয়ারেই ব্যস্ত ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিরোধীদলীয় নেতা নাকি নির্বাচন করবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে কীভাবে নষ্ট করে ফেলা যায়, সেটা বিএনপি-জামায়াতই দেখিয়েছে। বিএনপিই ১৯৯১ সালে লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় এসেছিল।
বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে রূপ আমরা দেখেছি, এরপরও কী আশায় তিনি আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইছেন_ সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এত অত্যাচার-নির্যাতন ও জেল খাটার অভিজ্ঞতা তিনি কীভাবে ভুলে গেলেন?
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ বিলুপ্তি চায় বলেই সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুসরণ করে সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। বিরোধীদলীয় নেতা কী তাহলে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ও মানবেন না?
'তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়'_ ২০০৮ সালে দেওয়া খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি কী তাহলে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র চান বলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান? তিনি কী আবারও জেল-জুলুম ভোগ করতে চান?
১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও পুলিশের ওপর হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নিরীহ মানুষের ওপর এ হামলার উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করা। গণতন্ত্রের কথা বলে বিরোধীদলীয় নেতা জামায়াতের এ ন্যক্কারজনক তা বকে সমর্থন জানিয়েছেন। দেশবাসীকে এদের সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে, প্রতিহত করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বরের জনসভায় বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন দেশের মানুষ নাকি অশান্তিতে আছে। আসলে তিনি নিজে সারাক্ষণ অশান্তিতে ভোগেন। ক্ষমতা থেকে বিদায় হওয়ার কষ্ট তার আছে। দুই দুর্নীতিবাজ সন্তানের লুটপাটের সুযোগ বন্ধ হওয়া ও তাদের বিচার হচ্ছে, এ কারণেও তার কষ্ট থাকবে_ এটাও স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন দেশে গণতন্ত্র অবরুদ্ধ। গণতন্ত্র অবরুদ্ধ হলে তিনি সমাবেশ করলেন কীভাবে? তার রাজনীতির লক্ষ্য দুই দুর্নীতিবাজ ছেলেকে বিচারের হাত থেকে বাঁচানো, একাত্তরের যুদ্ধপরাধীদের রক্ষা করা। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেই তিনি যখন জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেন, তখন তার মুখে ভালো কথা মানায় না। কথায় আছে, 'চোরের মার বড় গলা'।
তিনি বলেন, জনসভায় খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার নাকি সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দিয়েছে। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস না থাকলে 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' সংবিধানে বহাল থাকে কীভাবে? তাছাড়া খালেদা জিয়া তার বক্তব্য চলাকালে মাগরিবের আজান পড়লেও আজানের প্রতি সম্মান জানাতে বক্তব্য বন্ধ রাখেননি। এ অবস্থায় তিনি কীভাবে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখার কথা বলেন?
তিনি বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে যিনি ১০ টাকার চাল ৪৫ টাকা করেছেন, আবারও ক্ষমতায় এলে তিনি কীভাবে দাম কমাবেন? সবকিছু ঠিক করে ফেলবেন? এসব মিথ্যাচার জনগণ কোনোদিনই বিশ্বাস করবে না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তার সরকারের সময় জ্বালানি তেলের দাম বাড়েনি বলেও মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। ওই সময় নয়বার জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে ভর্তুকি বেড়ে যাওয়া ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়াতেই বর্তমান সরকার জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তবে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিনিসের দাম বেড়েছে সত্যি। তবে এর সঙ্গে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে।
র‌্যাবকে প্রশিক্ষণ না দিতে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর প্রতি খালেদা জিয়ার আহ্বানে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, র‌্যাব তাদের সৃষ্টি। আজ তারাই কীভাবে এর বিরোধিতা করেন? ২০০৫ সালে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ক্রসফায়ার মিডিয়ার ভুল ব্যাখ্যা। র‌্যাব ও সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিজেদের রক্ষা করার অধিকার রয়েছে। সে সময় আমিই প্রথম ক্রসফায়ারের প্রতিবাদ করেছিলাম।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ইচ্ছা কী? জনগণকে নিরাপত্তাহীন করা? দেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করা? জঙ্গিদের কাছে বাংলাদেশকে জিম্মি করা?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের নেতা বলেছেন, সরকার বিদেশে শ্রমবাজার ধরে রাখতে পারেনি। এ বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য। বিএনপি-জামায়াত সরকারের দুর্নীতির কারণে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও সরকার সেসব দেশে নতুন করে প্রায় ৯ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান করেছে। শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারি পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, কথায় কথায় হরতাল কি শেয়ারবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পথে বসানোর জন্য?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিভিন্ন সময় যারাই ক্ষমতায় ছিলেন তারা ভারতবিরোধিতার সস্তা রাজনীতি করেছেন। একটি সমস্যারও সমাধান করতে পারেননি। বরং দেশকে ভারতীয় পণ্যের বাজার বানিয়েছেন। অন্যদিকে যখনই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে তখনই বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য পাওনা আদায় করেছে।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরকালে বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিস্তার পানি নিয়েও আলোচনা চলমান। আমরা আশাবাদী, আলোচনার মাধ্যমে সম্ভাব্য দ্রুত সময়ের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান হবে।
প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত 'টক শো'র বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, টক শোগুলোতে অনেক সময় যা বলা হয় সেগুলো নির্জলা মিথ্যা। এগুলো মাঝে মাঝে একটু টকই হয়ে যায়। টকের সঙ্গে একটু মিষ্টি না থাকলে তো হয় না। টক শোগুলোতে কখনও কোনো মিষ্টি থাকে না। তিনি বলেন, সব কাজ শেষে রাত জেগে এসব টক শো দেখতেও কষ্ট হয়। এত কাজ করার পরও টক শোগুলো এমনভাবে বলে যেন সরকার কিছুই করেনি। ভাবখানা এমন যে, আমরা ২২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করে যেন অন্যায়ই করেছি। অথচ আমরা যে কাজগুলো করেছি, তা জনগণের কল্যাণেই করেছি।
প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার ভূমিকারও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, মিডিয়াগুলো মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখেই যাচ্ছে। আমরা সহ্য করেই যাচ্ছি। রাজনীতিবিদদের ঢালাও সমালোচনা করা হলে কেন সাংবাদিকদের সমালোচনা করা যাবে না।
১১ দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফর ও জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের বিস্তারিত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের ৬৬তম অধিবেশনমঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি সারা বিশ্বের জন্য একটি শান্তির মডেল উপস্থাপন করেছেন, যার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে জনগণের ক্ষমতায়ন। একই সঙ্গে বিশ্ব সন্ত্রাস দমনে ৭ দফা সুপারিশ ও সব ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে সাম্যতা ও আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে এর আশু সমাধানে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে আহ্বান জানিয়েছেন।
এ সময় নারী ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে অবদানের জন্য নিজের 'সাউথ সাউথ' পুরস্কার অর্জনের উল্লেখ করে এ পুরস্কার দেশের জনগণকে উৎসর্গ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ পুরস্কার ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের কঠোর পরিশ্রমের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের সাফল্যের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, বিচারের ভার জনগণের কাছেই তুলে দিলাম। বিএনপি-জামায়াত জোট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের তুলনা করলেই বোঝা যাবে, আমরা জনগণের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি। দেশকে শান্তিপূর্ণ রাখতে পেরেছি কি-না?
সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এবং পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস।
সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রশ্ন : বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সরকার পতন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেছেন, আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বর্তমান সরকারকে বিদায় করা হবে। এর আগে এলডিপি প্রধান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ চলতি বছরের জুনের মধ্যে সরকার পতনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
উত্তর : এর আগে তো সরকার পতনের জন্য এ বছরের জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। এখন বিরোধীদলীয় নেতা আগামী বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি আরও ১৫ মাস সময় বাড়িয়েছেন। এ জন্য তাকে ধন্যবাদ। আশা করি পরবর্তী সময়ে আরও সময় বাড়াবেন তিনি।
প্রশ্ন :বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, রোডমার্চ কর্মসূচির পর তিনি সরকার পতন আন্দোলনের ফাইনাল রাউন্ড শুরু করবেন। এই ফাইনাল খেলা মোকাবেলায় আপনারা প্রস্তুতি কী?
উত্তর : প্রথমে তো কোয়ার্টার ফাইনাল, পরে সেমিফাইনাল এবং তারপরই তো ফাইনাল খেলা হবে। তিনি (খালেদা জিয়া) খেলার কোনো স্টেজে আছেন, সেটাই আমার প্রশ্ন। যে যত কথাই বলুন, খেলোয়াড়রা খেলে যাবেন। কাজ করনেওয়ালারাও কাজ করে যাবেন। দেশ ও জনগণের কল্যাণে আমরা আমাদের কাজ করে যাব।
প্রশ্ন : আপনি যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, 'চোর-বাটপাড়দের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না।' আবার আপনিই জাতিসংঘে শান্তির মডেল উপস্থাপন করেছেন। এ অবস্থায় শান্তির মডেল বাস্তবায়নেও কি বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না?
উত্তর : সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। 'চোর-বাটপাড়দের সঙ্গে বসব না'_ এমন কথা আমি বলিনি। আমি বলেছি, বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসলেই তো তিনি রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাদ দিয়ে তার চোর ও দুর্নীতিবাজ দুই ছেলেকে রক্ষার প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলবেন। এ অবস্থায় তার সঙ্গে আলোচনায় বসে কী লাভ?
প্রশ্ন :তাহলে কি ছেলেদের রক্ষার প্রসঙ্গ বাদ রেখে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসতে চাইলে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন?
উত্তর :এটি একটি হাইপোথিটিক্যাল প্রশ্ন। তিনি তো (খালেদা জিয়া) সরকার পতনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন, সরকার উৎখাতের কথা বলছেন_ সেখানে আর কীসের আলোচনা হবে? এখন তিনি তো বিরোধীদলীয় নেতা। তিনি সংসদে চলে আসুন। সংসদে কথা বলুন। সরকারের যত সমালোচনা সংসদেই করুন। সেখানেই আলাপ-আলোচনা হবে।
প্রশ্ন : সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী ভূমিকার কারণে আপনার দলের কয়েকজন নেতাসহ বিভিন্ন মহল থেকে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি?
উত্তর : কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার চিন্তা-ভাবনা এখনও আমরা করছি না। তবে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করুক, সেটাও আমরা চাই না। সন্ত্রাস ও অপকর্ম করলে তাদের অবশ্যই বিচার হবে, শাস্তিও হবে।
প্রশ্ন : বিভিন্ন মহল থেকে মন্ত্রিসভায় রদবদলের দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেবেন কি-না?
উত্তর :এটা তো সম্পূর্ণ এখতিয়ার আমাদের (সরকারের)। কাজেই এ প্রশ্ন করে কোনো লাভ নেই। যখন পরিবর্তন আসবে, তখন তা সবাই দেখবে।
প্রশ্ন :আপনি জাতিসংঘে বিশ্বশান্তির কথা বলেছেন। উপমহাদেশেও বিরোধপূর্ণ অবস্থা নিরসনে আপনার সরকারের পক্ষে কোনো উদ্যোগ নেবেন কি-না?
উত্তর : আমরা সব সময়ই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। এখন উপমহাদেশেও শান্তি বজায় রাখার বিষয়ে আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব, তার সবটুকুই আমরা করব।

No comments

Powered by Blogger.