নবাবের মুখোমুখি by মতিউর রহমান

তৌদির নবাব তিনি। এই ২০০৪ সাল পর্যন্তও বিশ্ব ক্রিকেটের কনিষ্ঠতম ক্যাপ্টেন হওয়ার রেকর্ড ছিল তাঁর দখলে। ভারতের হয়ে টেস্ট খেলেছেন ৪৬টি। নেতৃত্ব দিয়েছেন ৪০ টির। অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরকে বিয়ে করার সুবাদে বাঙালিদের ‘জামাই বাবু’ও বটে। সদ্য প্রয়াত মনসুর আলী খান পতৌদির সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা নিয়ে এবারের মূল রচনা। ক্রিকেটপাগল ছিলাম সেই শৈশব থেকেই। ১৯৫৫ সালে আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র, ভারত-পাকিস্তানের টেস্ট ম্যাচের শেষ দিনের খেলা দেখতে বড় ভাই ‘দাদা’র সঙ্গে ঠেলেঠুলে ঢুকে পড়েছিলাম ঢাকা স্টেডিয়ামে।
তারপর নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া দলের আগমন ঘটে ঢাকায়। তখন অনেক বিশ্বখ্যাত খেলোয়াড়কে দেখার সুযোগ হয়। এখনো মনে পড়ে, অনুশীলন শেষ করে গাড়িতে ওঠার আগে গারফিল্ড সোবার্সকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘আর ইউ সোবার্স?’ তার উত্তর ছিল, ‘নো, নো, আই অ্যাম নট সোবার্স।’ তখন আমি নবম শ্রেণীর ছাত্র।
এভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে ক্রিকেটের পেছনে, মাঠে মাঠে। ঢাকা স্টেডিয়াম আর পল্টন ময়দানকে ঘিরে কেটেছে সেই দিনগুলো। ক্রিকেট খেলেছি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে। ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলাম দুই বছর।
সে সময়ে ক্রিকেটবিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়। মনে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গারফিল্ড সোবার্স, রোহান কানহাই, ওয়েসলি হল, ল্যান্স গিবস, নিউজিল্যান্ডের জন রিড, অস্ট্রেলিয়ার রিচি বেনো, নিল হার্ভে, নরম্যান ও’নীল, অ্যালান ডেভিডসন, পাকিস্তানের এ এইচ কারদার, হানিফ মোহাম্মদ, ফজল মাহমুদ, ইমতিয়াজ আহমেদ প্রমুখের কথা।
সে সময়ে ক্রিকেট দেখতে দেখতে, জানতে জানতে আমরা একসময় মনসুর আলী খান, পতৌদির নবাব সম্পর্কে জানতে থাকি। তিনি তখন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে খেলেন। তখন তাঁর এবং তাঁর পিতা সম্পর্কে কাগজ-পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হতো। পিতা পতৌদির অষ্টম নবাব অক্সফোর্ডের হয়ে খেলেছেন, ভারত ও ইংল্যান্ড টেস্ট দলের হয়ে খেলেছেন। পতৌদির নবম নবাব বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ ক্যাপ্টেন ছিলেন; দীর্ঘদিন এই রেকর্ড বহাল ছিল। তবে টেস্ট খেলার আগেই লন্ডনে ভয়াবহ এক গাড়ি দুর্ঘটনায় এক চক্ষু হারান। ১৯৬১ সালের ১ জুলাইয়ের দুঃখজনক এই ঘটনায় তাঁর ডান চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
অবশ্য দুর্ঘটনার পর সুস্থ হয়ে চার মাস ধরে অনুশীলনের পর তিনি ক্রিকেট মাঠে নেমে পড়েন। এ সময় উইকেটে দাঁড়িয়ে তিনি ছয়-সাত ইঞ্চির ব্যবধানে দুইটা বল দেখতে পেতেন। কিন্তু তিনি ভেতরের দিকের বলটিকেই বল ধরে খেলতেন। মাত্র পাঁচ-ছয় মাসের ব্যবধানে তিনি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলার সুযোগ পান। মাদ্রাজে শেষ টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৩ রান করে সেঞ্চুরি করেন। তিনি ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত টেস্ট খেলোয়াড় ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড-এর সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।
পুরো সময়জুড়ে, বা পরেও, জীবনের শেষ পর্যন্ত পতৌদির নবাব মনসুর আলী খান আমাদের কাছে সব সময় একজন আকর্ষণীয় ব্যক্তি হিসেবে থেকে গিয়েছিলেন। একজন দারুণ ক্রিকেটার, অধিনায়ক, নবাব, সুদর্শন এবং ভারতের সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রের নায়িকা শর্মিলা ঠাকুরের স্বামী হিসেবে সব সময়ের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।
এই পতৌদির নবাবের সঙ্গে দেখা ও যোগাযোগের সুযোগ হয়েছিল আকস্মিকভাবে। ১৯৯৬ সালের ৩০ জুন অনুষ্ঠিত আমাদের দেশের জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকায় এসেছিলেন। সেবার শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে অবস্থিত এথনিক স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক জীবন থিয়াগোরাজার উদ্যোগে যে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে ৪০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির সমন্বয়ে পর্যবেক্ষক দল এসেছিল, তাঁদের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম। তাঁদের দেখভাল করার সুবাদে, শেরাটনকেন্দ্রিক যোগাযোগ, সাহায্য-সহযোগিতা, নানা কর্মের মধ্য দিয়ে তাঁদের খুব কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হয়। পতৌদির নবাবসহ যাঁরা ঢাকায় আসেন, তাঁদের সান্নিধ্য পাওয়া ছিল বিরাট আকর্ষণের বিষয়। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে মনসুর আলী খান ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন। তিনি অবশ্য অন্যদের আগেই দিল্লি ফিরে গিয়েছিলেন।
পতৌদির নবাব মনসুর আলী খানকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হন। অবশ্য দুটো শর্ত জুড়ে দেন। শর্ত হলো: তাঁর দিল্লি ফেরার টিকিট দ্রুত সংগ্রহ করে দিতে হবে এবং সাক্ষাৎকারের সময়ে সিনেমা বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। তিনি আরও বলেছিলেন, সিনেমা দেখেন না, সিনেমা নিয়ে কথা বলেন না। এই শর্ত দুটো মেনে নিয়েই তাঁর সাক্ষাৎকার নিই, কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। সঙ্গে ছিলেন ভোরের কাগজ-এর তৎকালীন সহকারী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।
শৈশব-কৈশোর-যৌবনের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা আজও আছে। এখনো কমবেশি ক্রিকেট দুনিয়ার খবর রাখি। ক্রিকেট নিয়ে, পতৌদির নবাব মনসুর আলী খানকে নিয়ে নতুন কিছু পেলে জানার চেষ্টা করেছি সব সময়। এই আগ্রহ, আকর্ষণ শেষ পর্যন্ত ছিল।
পতৌদির নবাবকে ঘিরে সামান্য স্মৃতি, তাঁর সান্নিধ্যের কথা মনে করে এই সাক্ষাৎকারটি শিরোনামসহ হুবহু পুনর্মুদ্রিত হলো...

নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এসে পতৌদি: ‘নিজের ঘরে এলাম’
স্বাগতম, ক্রিকেটশিল্পী পতৌদি

প্রশ্ন: বাংলাদেশে তো আপনার এই প্রথম। কেমন লাগছে?
মনসুর আলী খান পতৌদি: আলাদা কিছু তো মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, ঠিক নিজের ঘরের মধ্যে এসে ঢুকেছি। বাংলাদেশে না এলেও বাংলা আমার পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গ আমার দ্বিতীয় বাড়ি। আপনারা জানেন, শর্মিলা ঠাকুর আমার স্ত্রী। সে পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে। পশ্চিমবঙ্গে তো আমি প্রায়ই যাই। বাংলাদেশকে এ জন্য আমার অচেনা ঠেকছে না।
প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গে কি আপনার নিজের কোনো বাড়ি আছে?
পতৌদি: না, তা নেই। আগে তো ওখানে প্রায়ই যেতাম। এখন একটু কম যাওয়া পড়ে। তবে গেলে সাধারণত আলীপুরেই থাকি।
প্রশ্ন: শ্বশুরবাড়ি বলেই কি ওখানে যাওয়া পড়ে?
পতৌদি: সেটা তো আছেই। তবে কলকাতা থেকে বেরোনো একটা ক্রীড়া পত্রিকা স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড-এর সম্পাদক হিসেবে আমি কাজ করছি। তাই কলকাতায় একেবারে না গেলে তো আমার চলে না।
প্রশ্ন: এখানে এবারে আপনি এসেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে। ভারতে তো একবার আপনি নিজেই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন।
পতৌদি: তা দাঁড়িয়েছিলাম আর কি। তবে ওই একবারই। কংগ্রেস থেকে, মধ্যপ্রদেশে, ১৯৯১ সালে। জিততে তো আর পারিনি। ব্যস, ওইবারই শেষ। এরপর আর কখনো চেষ্টা করিনি।
প্রশ্ন: রাজনীতিতে তাহলে আর নিজেকে জড়ানোর ইচ্ছা নেই আপনার?
পতৌদি: একেবারেই না। রাজনীতিতে এসেছিলাম স্রেফ রাজীব গান্ধীর বন্ধুত্বের টানে। সে অনুরোধ করায় নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলাম। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আমার রাজনীতিরও মৃত্যু ঘটেছে। রাজনীতি-টাজনীতি এখন আর সহ্য হয় না আমার।
প্রশ্ন: তাহলে কি নিজেকে আপনি ক্রিকেটের সঙ্গে জড়াবেন?
পতৌদি: রাজনীতি বা ক্রিকেট—কোনোকিছুর সঙ্গেই আর জড়ানোর ইচ্ছে আমার নেই। ওসবে আমি আর যাব না। অবশ্য ক্রিকেটের জগতেও বিস্তর রাজনীতি আছে। ওইসব আরও অসহ্য। ক্রিকেটে জড়াব না অন্য কারণে। একদম সময় নেই। কিন্তু সেটা একেবারে একটা সার্বক্ষণিক কাজ। ধারাভাষ্যকার হওয়াও বিরাট এক ঝক্কির ব্যাপার। সময় ব্যয় করতে হয় প্রচুর। কিন্তু আমার হাতে খরচ করার মতো সময় নেই। এর মধ্যে অবশ্য ম্যাচ রেফারির কাজ করেছি দু বছর আগে, ইংল্যান্ডে। ব্যস, ওইটুকুই।
প্রশ্ন: এখানে এসে তো প্রচুর মিটিংয়ে থাকতে হচ্ছে। মিটিং আর ক্রিকেট—এ দুটোর মধ্যে নিজের জন্য কোনটা বেছে নেবেন আপনি?
পতৌদি: অবশ্যই ক্রিকেট। উফ্, কোনো মিটিংয়ে বসে বসে কারও কথা শোনার মতো বিরক্তিকর ব্যাপার আর দ্বিতীয়টা নেই।
প্রশ্ন: ক্রিকেট-জীবনে কোনো স্মরণীয় ঘটনা আছে আপনার?
পতৌদি: অনেক ঘটনা। বলে শেষ করা যাবে না। কোনটা রেখে কোনটা বলি। ১৯৭৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে কলকাতা টেস্টের কথা বলতে পারি। ওই টেস্টটিতে আমাদের জেতার কথা ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমরা জিতে যাই। পুরো খেলাটাই আমাদের স্নায়ুর ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। খেলাটাতে আমি ছিলাম ভারতের অধিনায়ক। সেই জয়ের আনন্দ ভোলার নয়।
প্রশ্ন: কাদের আপনি আপনার সময়ের সেরা ক্রিকেটার বলে মনে করেন?
পতৌদি: অবশ্যই গারফিল্ড সোবার্স। খেলোয়াড় বলেন, অলরাউন্ডার বলেন—সে-ই আমাদের সময়ের সেরা। রিচার্ড হ্যাডলি, ইয়ান বোথাম, কপিল দেব, ইমরান খান—এদের সবার কথা মাথায় রেখেই বলছি, সে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়। সবাইকে অবাক করে দেওয়ার এক আশ্চর্য সহজাত প্রতিভা ছিল ওর।
প্রশ্ন: আপনার চোখে এই সময়ের সেরা অলরাউন্ডার কে?
পতৌদি: আমার ধারণা ওয়াসিম আকরাম। সে যে এ সময়ের সেরা বোলার, তাতে আমার কোনো সন্দেহই নেই। সেরা অলরাউন্ডারও সম্ভবত সে-ই হবে।
প্রশ্ন: ভারতের বর্তমান ক্রিকেট নিয়ে কিছু বলবেন?
পতৌদি: আজহারউদ্দিনকে এখন অধিনায়ক পদ থেকে সরানো দরকার। আট-দশ বছর ধরে ও অধিনায়কত্ব করছে। যা দেওয়ার ও দিয়ে ফেলেছে। এখন ওর আত্মবিশ্বাসে ক্ষয় ধরে গেছে। ভারতের ক্রিকেট দলের ভালোর জন্যই এখন ক্যাপ্টেন বদলানো জরুরি।
প্রশ্ন: ভারতের ক্রিকেট দলের নতুন অধিনায়ক কে হতে পারে?
পতৌদি: শচীন টেন্ডুলকার ছাড়া আর কে। খুবই বড়মাপের খেলোয়াড় সে। সবদিক বিবেচনা করেই নির্দ্বিধায় এ কথাটা বলা যায়।
প্রশ্ন: ব্রায়ান লারার তুলনায়?
পতৌদি: সব কিছু বিবেচনা করলে লারার চেয়েও ওকে বড় খেলোয়াড় বলতে হয়।
প্রশ্ন: আপনি কত বছর বয়সে অধিনায়ক হয়েছিলেন?
পতৌদি: আমি? ২১ বছর বয়সে। অধিনায়কত্ব করেছি এর পরের আট-নয় বছর একনাগাড়ে। মজার ব্যাপার হলো, আমার খেলোয়াড়-জীবনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কখনোই খেলিনি। বেশ অদ্ভুত, তাই না?
প্রশ্ন: আপনি তো অনেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে মিশেছেন। মানুষ হিসেবে সবচেয়ে ভালো লেগেছে কাকে?
পতৌদি: ইয়ান বোথামকে। সে আমাদের সময়ের সবচেয়ে সেরা মানুষ। কোনো তুলনাই ওর হয় না। অবশ্য গ্রাহাম পোলক, রোহান কানহাই, ইয়ান চ্যাপেল—ওদেরকেও আমি বাদ দিতে পারব না।
প্রশ্ন: এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। এখন আপনি কী করছেন?
পতৌদি: লিজিং হায়ারিংয়ের একটা ব্যবসা আছে আমার মুম্বাইতে। হাউজিং করেছি ভুপালে। এগুলোই আমার সমস্ত সময় খেয়ে নেয়।
প্রশ্ন: দেখলাম, আপনি একটা বিজ্ঞাপন করেছেন স্ত্রী-পুত্রসহ।
পতৌদি: হ্যাঁ, গোয়ালিয়র স্যুটিংয়ের বিজ্ঞাপন। ওদেরটা ছাড়া টেক্সটাইলে অন্য কারও বিজ্ঞাপন আমি আবার করতে পারব না। বিজ্ঞাপনটা আপনাদের কেমন লেগেছে? বেশ মজার না? শর্মিলা আর সাইফ আলী খানের সঙ্গে তো বিজ্ঞাপনটা করলাম। এখন আবার আমার নাতনি সারা এসেও সেটাতে যোগ দিয়েছে। মজার, তাই না?
প্রশ্ন: আপনি, আপনার স্ত্রী শর্মিলা ঠাকুর, ছেলে সাইফ আলী খান আর পুত্রবধূ অমৃতা সিং—আপনার বাড়ি তো তারকায় ঠাসা। তারকাযুদ্ধ বেঁধে যায় না কখনো?
পতৌদি: তা কেন হবে? ঘরে তো আমরা থাকি মানুষ হিসেবে। তার বেশি কিছু তো নয়। তবে আমরা নিয়ম বেঁধে দিয়েছি। আমি ক্রিকেট নিয়ে কথা বলব না। ওরাও সিনেমা নিয়ে কথা বলবে না। এ দুটো বিষয় নিয়ে আমাদের বাড়িতে কথা বলা, বলা যায়, নিষিদ্ধ। ব্যস, ঘরে পরিপূর্ণ শান্তি।
প্রশ্ন: তবু তো ঘরে আপনার দুটো ভাগ। একদিকে আপনি, অন্যদিকে আর সবাই।
পতৌদি: তা ঠিক। তবে অন্যদিক থেকে আমার কিছু সুবিধা আছে। আমি কখনো সিনেমা দেখি না। শর্মিলার তেমন কোনো ছবি আমি দেখিনি।
প্রশ্ন: বলেন কী? তাহলে পরিচয় হলো কীভাবে?
পতৌদি: ওর সঙ্গে আমার পরিচয় অভিনেত্রী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে। এক বন্ধুর বাড়িতে এক ডিনার পার্টিতে ও এসেছিল। সেখানেই পরিচয়। আমি মানুষ শর্মিলার প্রেমে পড়েছিলাম।
প্রশ্ন: শর্মিলা ঠাকুর এখন কী নিয়ে ব্যস্ত?
পতৌদি: এক অর্থে ফিল্মের সঙ্গেই কিছুটা জড়িত। পতৌদি প্যানেলের কমার্শিয়ালগুলোর সঙ্গে ও কাজ করছে। কাজ করছে টিভিতেও। অভিনয় হয়তো করছে না, এটুকুই। নানা রকম সামাজিক কাজকর্মেও সে ব্যস্ত হয়ে আছে।
প্রশ্ন: সাইফ আলী খান অভিনয় না করে ক্রিকেট খেললে কি আপনি বেশি খুশি হতেন?
পতৌদি: তা কেন হবে? অভিনয় ও নিজে বেছে নিয়েছে। আনন্দ পাচ্ছে কাজ করে। আমার এখানে কী বলার আছে? সেখানে ঠিকঠাক পরিশ্রম করে ও এগিয়ে যেতে পারবে নিশ্চয়ই।
প্রশ্ন: আপনার ছেলেমেয়ে?
পতৌদি: সাইফ খান বাদে দুটো মেয়ে আছে আমার। সাবা আর সোহা। সাবা দিল্লি কলেজ অব আর্টসে পড়ছে। আর সোহা করছে এ লেভেল।
প্রশ্ন: যেখানেই যান, সবাই তো আপনাকে চিনে ফেলে। বিরক্তি লাগে না?
পতৌদি: কী বলেন, না চিনলেই বরং বিরক্ত লাগে। হা হা হা।

ভোরের কাগজ, ১১ জুন ১৯৯৬

No comments

Powered by Blogger.