দুর্গোৎসব শুরু

হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব আজ রোববার শুরু হচ্ছে। ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে পাঁচদিনের এ উৎসব। শেষ হবে ৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। দুর্গাপূজাকে ঘিরে সারাদেশে এখন উৎসবের আমেজ বইছে। পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে ইতিমধ্যেই। পুরাণের মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি এ পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাত্রার আগে শ্রীরামচন্দ্র দেবীর পূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবস্যা তিথিতে। এজন্যই দেবীর শরৎকালের এ পূজাকে হিন্দুমতে অকাল বোধনও বলা হয়।

সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার গজে (হাতি) চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন (আগমন)। যার ফল হিসেবে বসুন্ধরা সুজলা, সুফলা ও শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে। দেবী স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন (গমন) দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল মড়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারীর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে।
এবার সারাদেশে প্রায় ২৭ হাজার পূজাম পে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার প্রায় ১ হাজার মণ্ডপ বেড়েছে। সরকারি হিসাবে সারাদেশের পূজার সংখ্যা অবশ্য প্রায় ২৮ হাজার। এবার ঢাকা মহানগরীতে পূজাম পের সংখ্যা ১৯৬টি।
শারদীয় দুর্গাপূজার প্রথম দিনে আজ ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। ষষ্ঠীতিথিতে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ। সায়ংকালে বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনা পূজা করা হবে। সেই সঙ্গে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হবে মূল দুর্গোৎসব। আগামীকাল সোমবার মহাসপ্তমী, মঙ্গলবার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা, বুধবার মহানবমী এবং বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী। শেষ দিনে প্রতিমা বিসর্জন ও বিজয়ার শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
দুর্গোৎসব চলাকালে পূজার প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগআরতির আয়োজন করা হবে। এছাড়া দেশজুড়ে দুর্গোৎসব চলাকালে ম পে ম পে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হবে।
দুর্গোৎসব উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এছাড়া পৃথক বিবৃতিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিত্রয় মেজর জেনারেল (অব.) সিআর দত্ত বীরউত্তম, অ্যাডভোকেট সিরিল সিকদার, ঊষাতন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মঙ্গল চন্দ্র ঘোষ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি বীরেশ চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক বাবুল দেবনাথ, ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জী, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের প্রধান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জয়ন্ত কুমার সেন, প্রধান সমন্বয়কারী মনোজ কুমার মণ্ডল, নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট দিনবন্ধু রায়, মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, মুখপাত্র পলাশ চন্দ্র দে প্রমুখ হিন্দু সম্প্রদায়সহ দেশবাসীকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র‌্যাব ও বিডিআর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুুলিশ এবং র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি ম পে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ম পে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজাম এছাড়া রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরোদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ী, পুরান ঢাকার অভয়নগর দাস লেনের ভোলানন্দগিরি আশ্রম, রাধিকা বসাক লেন, নবেন্দ্র বসাক লেন, ঢাকেশ্বরীবাড়ী, শাঁখারীবাজারের পানি্নটোলা, টিকাটুলীর প্রণব মঠ, ঠাঁটারীবাজার পঞ্চানন শিবমন্দির, সূত্রাপুরের ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, বনগ্রাম তরুণ সংসদ, ওয়ারী সার্বজনীন পূজা কমিটির ম প, উত্তর মৈশুন্ডী, ফরাশগঞ্জ জমিদারবাড়ী, বিহারীলাল জিও মন্দির, গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদের মণ্ডপ, মতিঝিলের অরুণিমা সংসদ পূজা কমিটির মণ্ডপসহ বিভিন্ন মন্দির ও ম পে দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি গতকাল শনিবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে পূজার প্রস্তুতি, আইন-শৃঙ্খলা ও অন্যান্য বিষয়ে মতবিনিময় সভা করেছে। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাবুল দেবনাথ। উপস্থিত ছিলেন পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতারা।
দুর্গাপূজা নির্বিঘ্ন করতে পূর্ণশক্তি ব্যবহার করা হবে : ডিএমপি কমিশনার
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেছেন, দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে উদযাপনের জন্য পূর্ণশক্তি ব্যবহার করবে পুলিশ। এজন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পূজার শুরু থেকে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ শনিবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজার নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকা পরিদর্শন করেন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের পূজার শুভেচ্ছা জানান। এ সময় ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারাসহ পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দুর্গাপূজার নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যেসব পূজামণ্ডপে অধিক লোক সমাগম হয়, সেগুলোর নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বৃদ্ধ ও শিশুদের প্রতি আলাদাভাবে খেয়াল রাখা হবে। পূজা উপলক্ষে আলাদাভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
পূজাকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধরনের হুমকি রয়েছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। তবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে সব ধরনের হুমকির কথা মাথায় রেখে পূজার নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, পূজার নিরাপত্তার জন্য ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ২০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে সাদা পোশাকের পুলিশ।

No comments

Powered by Blogger.