ফ্রান্সে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ, বিমানবন্দর অবরোধ

ফ্রান্সে সরকারের সংস্কার কর্মসূচির বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্রমিক সংঘ ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীরা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবরোধ করে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক ছাত্রী গুরুতর আহত হয়। আন্দোলনকারীরা কয়েক ঘণ্টার জন্য মার্শেই বিমানবন্দর অবরোধ করে রাখে। শ্রমিক সংঘগুলোর নেতারা আরও ব্যাপক আন্দোলন-বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজির সরকারের নেওয়া পেনশন সংস্কার কার্যক্রমে সরকারি কর্মীদের অবসর নেওয়ার বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬২ বছর এবং পূর্ণ অবসরকালীন ভাতা পাওয়ার বয়সসীমা ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ বছর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মূলত এর বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ জানাতে ফ্রান্সজুড়ে সপ্তাহ খানেক ধরে ধারাবাহিকভাবে ধর্মঘট ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন শ্রমিক সংঘ। তারা দেশের প্রধান তেল শোধনাগারগুলো অবরোধ করে রেখেছে। এতে পুরো ফ্রান্সে তেল সরবরাহে মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দেশের ৫৮টি পরমাণু চুল্লির মধ্যে কমপক্ষে ১২টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বুধবার থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করেছে ফরাসি সরকার।
গতকালের বিক্ষোভেও ফ্রান্সের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভে বিপুলসংখ্যক ছাত্রী অংশ নেওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সহিংস বিক্ষোভে ছাত্রীদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সারকোজি।
জ্বালানি তেল সরবরাহে সমস্যা অব্যাহত থাকায় দেশের চার ভাগের এক ভাগ পেট্রলপাম্প তেলশূন্য হয়ে পড়েছে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়াকে ‘চোর-পুলিশ খেলা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন শ্রমিক সংঘগুলোর নেতারা। সে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লিওঁতে লুটতরাজ ও বিক্ষোভের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সারকোজি বলেছেন, ঝামেলাকারীরাই শেষ কথা বলবে না।
রাজধানী প্যারিসে এক আলোচনা সভায় সারকোজি বলেন, ‘এটা গ্রহণযোগ্য নয়, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে এবং শাস্তি দেওয়া হবে। তাদের প্রতি কোনো দুর্বলতা দেখানো হবে না।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রাইস অর্তেফুঁ জানান, গতকাল পর্যন্ত এক হাজার ৯০০-র বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ ১০ বছর বয়সী শিশুদেরও গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কিশোর আদালতে পাঠানো হবে। একটি কনটেইনারে আগুন দেওয়ায় ১৮ বছরের এক ছাত্রীকে এরই মধ্যে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ফ্রান্সের প্রভাবশালী শ্রমিক সংঘ সিজিটির প্রধান বার্নার্ড থাইবল্ট বলেন, ‘সরকারের এ ধরনের কঠোর অবস্থানের পর এই বিক্ষোভ থামানোর কোনো কারণ নেই। আগামী সপ্তাহে আরও কঠোর কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। সম্ভাব্য কঠোরতম কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাব আমরা।’
এদিকে গতকাল ভোরের দিকে একদল আন্দোলনকারী মার্শেই বিমানবন্দরের প্রবেশপথগুলোয় অবরোধ করে। সকাল আটটার দিকে পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের হটিয়ে দেয়। তুলোজে শহরে ও মেডিটেরেনিয়ান বন্দরের প্রবেশের রাস্তায় আবর্জনা ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। পুলিশ গিয়ে সেগুলো পরিষ্কার করে। শহরের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরাও ধর্মঘটে রয়েছেন। ফ্রান্সে এই পরিস্থিতির কারণে প্যারিসে কনসার্টে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও মার্কিন সংগীতশিল্পী লেডি গাগা তা বাতিল করেছেন।
সারকোজির সরকারের এই সংস্কার প্রস্তাব ইতিমধ্যে জাতীয় পরিষদে অনুমোদন পেয়েছে এবং সেটি এখন সিনেটে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আজ শুক্রবার সিনেটে এই সংস্কার প্রস্তাব তোলা হতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজেট ঘাটতি কমানোর জন্য এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন জরুরি। কিন্তু শ্রমিক সংঘগুলো তা মানতে চাইছে না। তারা বলছে, ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.