নেতাজী ফাইল, ‘কংগ্রেসমুক্ত’ ভারত ও প্রণবের অশ্রু by মিনা ফারাহ

দুই বাংলার দুই পরিত্যক্ত বীর। রাজনৈতিক মারদাঙ্গাতেও একই খলনায়কদের চরম নৃশংসতার শিকার। তাদের একমাত্র অপরাধ- আপস নয় বরং সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা। একজন দূরে থেকে জ্বালিয়ে দিলেন স্বাধীনতার আগুন, অন্যজন সশস্ত্র সংগ্রামে মাঠে। এর পরেও তারা ‘পরিত্যক্ত’ কেন, সেটাই লিখব।  প্রণব বাবু কাঁদছেন, কিন্তু কেন? ৬০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়া দিল্লির মসনদে একটি পদও নেই, যা তিনি ভোগ করেননি। ‘যেখানেই পা রেখেছেন, প্রণববৃক্ষগুলো এমনভাবে রোপণ করেছেন, যেখান থেকে বেরিয়ে আসা দুই দেশের পক্ষেই অসম্ভব, বিশেষ করে প্রায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে তার রেখে যাওয়া বাংলাদেশবিষয়ক নীতিনির্ধারণ।’ অধিকাংশই রাজনীতিতে ‘প্রণব ফ্যাক্টর’ বুঝতে অক্ষম। সে জন্যই তিস্তার পানি কিংবা ৫ জানুয়ারির দোলাচলে এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনীতি। ইন্দিরার হাত ধরে সোভিয়েত মডেলের করাপ্ট কমিউনিস্ট গণতন্ত্র এবং ক্যাস্ট্রো মডেলের পারিবারিক রাজতন্ত্র, দুটোই ভারতকে খাইয়েছেন; বাংলাদেশেও পাচার করেছেন বলেই সংসদের চেহারাটা এরশাদের মতো। ব্যতিক্রম একটাই, বিএনপিমুক্ত রাজনীতির চিফ আর্কিটেক্ট এখন কংগ্রেসমুক্ত ভারতের বিরুদ্ধে কাঁদছেন। তীব্র প্রতিরোধের মুখে, ৬০ বছর দেরিতে হলেও কংগ্রেসের হাতে জিম্মি নেতাজীর প্রায় দেড় শতাধিক সিক্রেট ফাইল অবমুক্ত করে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিলো বিজেপি। ফাইলগুলো বন্দী রাখতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়েছে চক্রান্তবাদীরা। তারা চায়নি, ভারতীয় রাজনীতিতে অন্য কারো আধিপত্য থাকুক।
অধিকাংশেরই বিশ্বাস, নেহরু নয়, নেতাজীর সশস্ত্র সংগ্রামের প্রভাবেই ব্রিটিশদের ভারত ছাড়ার সূত্রপাত। ১৯৫৬ সালে যে কথাটি স্বীকার করেছিলেন, ৪৭-এর ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারী সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রিসেন্ট অ্যাটলি। প্রায় ৭০ বছর নেতাজীর অবদান অস্বীকার করা ছাড়াও দিল্লির মসনদে একক আধিপত্য কংগ্রেসের। নেতাজীর ফাইলে ২০ বছর ধরে গুপ্তচরবৃত্তি। তাকে অবলুপ্ত করারও প্রমাণ। ঘটনাগুলোকে চরম বিশ্বাসঘাতকতার চোখে দেখছে অধিকাংশ ভারতীয়। ক্ষমতায় গেলে বন্দী ফাইলগুলোকে কংগ্রেসের থাবা থেকে মুক্ত করার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল বিজেপির; স্বাধীনতার প্রকৃত বীরকে যথাযথ সম্মান দেয়ারও প্রতিশ্র“তি। বিজেপি মনে করে, জওয়াহেরলাল নেহরু একজন খলনায়ক, আসল বীর নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস। লিখেছিলাম, ‘লিবারেলিজম একটি মানসিক ক্যান্সার। শত্রুদের সাথে আপস করে ক্ষমতায় থাকে।’ নেহরু ডায়নেস্টিকে জাদুঘরে পাঠাতে বিনা কারণে বিজেপিকে ভোট দেয়নি ভারতীয়রা। ফাইলে প্রমাণ, নেহরুই সুভাষকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন। বিদেশে গেলেও চক্রান্ত। এমনকি ওয়ার ক্রিমিনালের তকমা লাগিয়ে দেশে ঢোকাও বন্ধ করেছিলেন। মৃত্যু নিয়েও গুজব ছড়িয়েছিলেন। ২০ বছর ধরে গুপ্তচরবৃত্তি- নেতাজী বনাম নেহরু, স্ক্যান্ডেল এখন গ্লোবাল।
বিপ্লবী নেতাজী
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্রিটিশের শত্রুশক্তির সমর্থন এবং পৃষ্ঠপোষকতায়, জাপানের হাতে যুদ্ধবন্দী প্রায় এক লাখ সৈন্য দিয়ে সশস্ত্র আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন। ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনে এ ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। নেতাজী বিশ্বাস করতেন, সশস্ত্র বিপ্লব ছাড়া ভারত ছাড়বে না ব্রিটিশ। ১৯৪৩ সালেই গান্ধীর ব্যর্থ ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন বুঝতে পেরেছিলেন। নেহরুর মতিগতিও টের পেয়ে গৃহবন্দী অবস্থায় লুকিয়ে দেশের বাইরে গিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের আয়োজন।‘ বীর নাকি বিট্রেয়ার’ প্রশ্নে, খলনায়কদের মুখোশ খুলে দিলো অবমুক্ত ফাইল। প্রধানমন্ত্রী হয়েই পাঠ্যবই সব কিছুর ওপরেই নেতাজীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নেহরুর। নেহরু থেকে সোনিয়া, একচুল ব্যতিক্রম হয়নি। নেতাজী থাকলে, ইনডিপেনডেন্ট অ্যাক্ট ১৯৪৭-এর অধীনে স্বাধীনতার নামে দু’টি ডোমিনিয়ন স্টেট গছিয়ে দেয়া অসম্ভব (১৯৫০ এবং ১৯৫৬, পাকিস্তান-ভারত ডোমিনিয়ন থেকে রিপাবলিক)। ভেতরে ইংলিশ, বাইরে ভারতীয় নেহরুকে ব্রিটিশের পছন্দের কারণ, একমাত্র তাকে দিয়েই আপসের স্বাধীনতা সম্ভব। মাউন্টব্যাটেনের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার সুযোগও নিয়েছিল ব্রিটিশ। এ ছাড়া উপায় ছিল না। কারণ, সশস্ত্র বিপ্লব রুখতে তখন যে পাঁচ লাখ সৈন্য প্রয়োজন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ইংল্যান্ড থেকে তা আনা অসম্ভব। এ দিকে অনুগত ভারতীয় সৈন্যরাও তত দিনে আজাদ হিন্দ ফৌজের আদর্শে অনুপ্রাণিত। ১৯৪৫ সালে ফৌজের বিচার শুরু হলে, আরো বেশি অনুপ্রাণিত। কারণ এতে নেতাজীর আদর্শই ছড়িয়ে যাচ্ছিল। তদন্ত কমিটির কাছে নেহরুর স্টেনোগ্রাফারের বক্তব্য, স্ট্যালিনের হাতে বন্দী নেতাজীকে ‘যুদ্ধাপরাধী’র খাতে ফাঁসি দিতে ব্রিটিশ সরকারকে চিঠি। ১৯৪৬ সালের আরেকটি চিঠিতে প্রকাশ, নেতাজী দেশে ফিরলেই তরবারি দিয়ে মোকাবেলার হুমকি। এতেই প্রমাণ, জীবিত নেতাজী নেহরুর জন্য কত বড় হুমকি।
আইন অনুযায়ী ৩০ বছর পরে কোনো ফাইলই সিক্রেট থাকে না। প্রায় ৮০ হাজার পৃষ্ঠা কেলেঙ্কারি প্রকাশের পরেও নেতাজীর বীরত্বকে অস্বীকার প্রণব বাবুদের? পার্লামেন্টে উন্মুক্ত আলোচনায়ও বাধা। ১৯৯৯-২০০৫ পর্যন্ত ‘মুখার্জি কমিশনের’ সরেজমিন তদন্ত রিপোর্টটিও প্রণবদের নাকচ। মুখার্জি কমিশনের কাছে প্রণবের অসহযোগিতা এবং হুমকি-ধমকিরও অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তার। স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন বীরের কপালে রাজাকারের তকমা পরিয়ে, আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যদের রেডফোর্টে বিচারে নেহরুকেই সমর্থন প্রণবদের। এর মানে, নেতাজীই ‘প্রথম প্রধানমন্ত্রী’ হওয়ায় ঈর্ষা? আমাদের মতো পক্ষ-বিপক্ষের বিতর্ক বাদ দিয়ে, ইতিহাস স্বীকার করলে, নেতাজীই ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টির সমর্থনে ইতিহাসে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ। ‘আমি সুভাষ বলছি’ খ্যাত নেতাজীর আন্দোলনের শুরুতে সাবমেরিনে ছয় মাস। বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সিঙ্গাপুরে পৌঁছে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি। ২৩ অক্টোবর ১৯৪৩ সালে জাপান সরকারের সহায়তায় স্বাধীন সরকার গঠন। ব্রিটিশমুক্ত আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে উৎসবমুখর পরিবেশে তিনরঙা পতাকা উত্তোলন। কয়েকটি ফ্রন্টে তুমুল যুদ্ধ করে বিজয়; কিন্তু পরাজয় ঘটল বার্মায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি ও জাপানের পতন না হলে, লক্ষ্যে পৌঁছাতেন নেতাজী। সেই সুযোগেই মৃত্যুর গুজব রটাল ব্রিটিশ-নেহরুচক্র। কারণ নেতাজী ফিরলে, সামলানোর ক্ষমতা ছিল না কারোই। তত দিনে আজাদ হিন্দের দেশপ্রেমে ভারত উদ্ভাসিত। অবমুক্ত ফাইলের আরেকটি কলঙ্ক, ‘ওয়ার চেস্ট’ নিয়ে প্রতারণা। সশস্ত্র সংগ্রামের খরচ পোষাতে দেশপ্রেমিক প্রবাসী ভারতীয়রা তখন পূর্ণ আস্থা দেখিয়ে মুক্তহাতে দান করেছিলেন নিজেদের স্বর্ণ-মুদ্রা। ১৯৫৬ সালে প্রায় ৫০০ কিলোগ্রাম স্বর্ণসহ ‘ওয়ার চেস্টের’ খবর জানানোর পরেও পুরোপুরি উপেক্ষা করলেন নেহরু। ফলে মাত্র ১১ কেজি বাদে সব লুট, যা এখন ন্যাশনাল মিউজিয়ামে। বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেসই লুটপাট করেছে। এমনকি গান্ধীও বিশ্বাস করেননি, নেতাজী মৃত। তাইপেতে ওই দিন কোনো বিমান দুর্ঘটনাই হয়নি বলে মুখার্জি কমিশনকে নিশ্চিত করেছিলেন তাইওয়ানের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪৮-১৯৬৮, ২০ বছর ধরে গুপ্তচরবৃত্তির কারণ, জীবিত নেতাজীর গতিবিধির ওপর চোখ রাখা। বিমান দুর্ঘটনার খবর ভুয়া না হলে, গুপ্তচরবৃত্তির প্রয়োজন ছিল কি? বীরের সম্মান তো দেয়া হয়নি বরং পরিবারের ওপর গুপ্তচরবৃত্তিতে ক্ষিপ্ত বোস পরিবার জানতে চায়- কেন?
২ কংগ্রেসমুক্ত ভারত বিতর্ক তুঙ্গে কেন
০১. নেতাজী এবং পরিবারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। ০২. কংগ্রেস শাসনামলে ব্যাপক দুর্নীতি।
উইকি লিক্স এবং পানামা পেপার্স অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের অন্যতম, সোনিয়া গান্ধী ১৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক। মার্কিন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অফশোর অ্যাকাউন্টের টাকা বৈধ করে ফিরিয়ে আনাও প্রমাণ। তিনি টাটার মতো ব্যবসায়ী নন যে, এত টাকা থাকবে। সংবাদটি সোনিয়াও অস্বীকার করেননি। বরং ড. শুব্রামানিয়াম স্বামীর মতো চৌকস বিজেপি নেতাদের কারণেই, ২০১৭ সালে পার্টি চেয়ারম্যানশিপ থেকে সোনিয়ার পদত্যাগ। হার্ভার্ড-কেমব্রিজের ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে মা-ছেলের কারচুপি প্রকাশের পরেই অজুহাত, এটা নাকি ‘টাইপোগ্রাফিকাল’ ভুল। দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েও চালবাজি। ভারতীয় আইনে দ্বৈত নাগরিক হলে প্রধানমন্ত্রিত্বে নিষেধাজ্ঞা। সোনিয়ার জন্ম ইতালিতে। রাহুলেরও তিনটি নাগরিকত্ব। তার বিরুদ্ধে বিপুল ডলারসহ মার্কিন এয়ারপোর্টে গ্রেফতার এবং কোকেন অ্যাডিক্সনের অভিযোগ। রাহুলকে বেশির ভাগ ভারতীয়ই ‘বোকা’ মনে করে। অনেকের মতে মা-ছেলে দু’জনেরই প্রধানমন্ত্রিত্বের সম্ভাবনা শেষ। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সোনিয়াই শপথ নেবেন কিন্তু ওই দিন সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে সশরীরে হাজির হয়ে প্রেসিডেন্ট ড. আব্দুল কালামকে সোনিয়ার দ্বৈত নাগরিকত্বের কথা জানিয়ে দিলেন ড. স্বামী। এর পরই বিকেলে শপথ নেন মনমোহন সিং। ড. স্বামী তাকে ‘সার্কাস সিং’ ডাকার কারণ, সার্কাসের সিংহরা রিং মাস্টারের কথায় চলে। অভিযোগ, সোনিয়াই রিং মাস্টার, যার কথায় উঠবোস করতেন মনমোহন সিং। কয়েকটি মামলা নিয়ে আদালতে ড. শুব্রামানিয়াম স্বামীর কূটকৌশলে ফেঁসে গেছে গান্ধী পরিবার। ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, সোনিয়াকে ইনকাম ট্যাক্সের ৪১২ কোটি রুপি জরিমানার সিলগালা ফাইলটি মার্চে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ। নেহরু প্রতিষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ পত্রিকাটির নামে হাজার হাজার কোটি টাকার ভূমি জালিয়াতি এবং পাঁচ হাজার কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণের মামলাও আদালতে। ঋণের সুপারিশ করেছিল ‘ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি’ যা বেআইনি। ‘ইয়াং ইন্ডিয়ান’ নামে একাধিক কোম্পানি খুলে, ছদ্ম নামে হাজার হাজার কোটি রুপি ‘প্রতারণা’র মামলাও রাহুলের বিরুদ্ধে।ইন্দিরার বিরুদ্ধেও imposter-এর অভিযোগ। তার নাম ‘গান্ধী’ নয়। মহাত্মার সাথেও সম্পর্ক নেই। স্বামীর নাম ফিরোজ Ghandy. চালাকি করে যাকে গান্ধী বানিয়ে মহাত্মার সাথে নিজেকে যুক্ত করাই উদ্দেশ্য? জরুরি আইন করে বন্দুকের নলে ক্ষমতায় থাকা, নেতাজীর ওপর গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি ইন্দিরার লেগেসির অন্তর্ভুক্ত।
এখান থেকে কী শিখতে পারি? ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের ঘটনা যদিও ২৪ বছর পর, কিন্তু আওয়ামী এবং কংগ্রেসের লিবারেলিজমে অদ্ভুত মিল। উভয়েই আধিপত্যবাদ, প্রতিহিংসা এবং নীলনকশা রাজনীতিতে বিশ্বাসী। ব্রিটিশরা ডোমিনিয়ন মার্কা স্বাধীনতা গছিয়ে ভারত ছেড়েছিল। আগেও লিখেছি, কার্যত ভারতীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকসেনারা। বিজেপির অভিযোগ, প্রাদেশিক ভোটে জিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের। কিন্তু গান্ধীকে নেহরুর হুমকি, তাকেই প্রধানমন্ত্রী না বানালে কংগ্রেস তচনছ করে দেবেন। তাই ভারাক্রান্ত চিত্তে গান্ধীর কথাই মেনে নিয়েছিলেন প্যাটেল। গান্ধীও চাননি, কোনো অজুহাতে ব্রিটিশ থাকুক। প্যাটেলের সাথে মরহুম তাজউদ্দীনের দুর্ভাগ্যকে কিভাবে মিলিয়ে দেখতে পারি? তার মেয়ের লেখা ‘নেতা ও পিতার’ বিস্ময়কর তথ্যের সাথে অবমুক্ত ফাইলের স্ক্যান্ডেলকে কিভাবে মিলিয়ে দেখতে পারি? ভারতীয়রা নেহরুকে কোন দৃষ্টিতে দেখে? অনেকেই ডাকে ‘নিক্সন’। তাদের মতে, ২০ বছরের স্ক্যান্ডেলের তুলনায় ‘ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি’ কিছুই না। আমিও লিখেছিলাম, এশিয়ান কিসিঞ্জারের কলাম। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের উদাহরণ দিয়ে ভারতীয়রা বলছে, তিনি নাকি সেই প্রাণী, প্রতিটি দরজায় ঢুকে হাড়-মাংস খেয়েও যার পেট ভরে না। অভিযোগ, ইন্দিরার মৃত্যুর পর বলেছিলেন, ইন্দিরা নাকি আমার মায়ের মতো। সম্ভবত এর উদ্দেশ্য, প্রধানমন্ত্রিত্ব বাগিয়ে নেয়া। প্রধানমন্ত্রী হতে না পেরে, নিজের দল খুলে নির্বাচনে গোল্লা খেয়ে ফের কংগ্রেসে প্রত্যাবর্তন। নেতাজীকে ‘ভারতরত্ন’ উপাধি দিতে চাইলে মামলা করে বন্ধ করে দেয়া হলো। তাদের যুক্তি, হঠকারী রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিতে দেবে না। বরং নেহরুর মরণোত্তর বিচারের মতো, বিচারের দাবি জাতীয়তাবাদীদের। ‘কংগ্রেসমুক্ত ভারত’ গড়ার সেন্টিমেন্ট নিয়ে মাঠে অমিত শাহ্রে দল। এই দুঃখেই প্রণবের কান্নাকাটি। কাঁদছে আনন্দবাজার এবং কলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীরাও। তাদের প্রশ্ন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশে কী করে ‘কংগ্রেসমুক্ত’ ভারত সম্ভব? আমরাও তা বলি। বাংলাদেশ থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিদায় করতে প্রণব উল্লেখ্য, চিফ আর্কিটেক্ট। এ জন্য কোনো ফাইল ডিক্লাসিফাই করার প্রয়োজন নেই। কারণ খোলামেলাভাবেই বিএনপিমুক্ত বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২০০৬ সাল থেকে, যা নিজের বইতেই লিখেছেন। ‘ভাপা ইলিশের রাজনীতি’তে লিপ্ত হয়ে শতভাগ বিএনপি-জামায়াতমুক্ত রাজনীতি কায়েম করে ছাড়লেন। নিজে বাঙালি হয়েও অন্য বাঙালি বীরের প্রতি চরম প্রতিহিংসা আমাদের ঘোষক বিতর্ককেও ডিক্লাসিফাই করে ’৭১-এর বীর বনাম বিট্রেয়ার প্রশ্নের অবসান ঘটাল। নেতাজীর বিরুদ্ধে নেহরুর পরিবার বনাম জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে আওয়ামী পরিবারের প্রতিহিংসাÑ পরিষ্কার। প্রশ্ন, কংগ্রেসমুক্ত ভারত অন্যায় হলে, বিএনপিমুক্ত বাংলাদেশ কি ন্যায়? বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই ভারতকে দুষছেন কিন্তু তাদের ধারণা ভুল। আগেও লিখেছি, ‘সমস্যা দিল্লি নয় বরং ব্যক্তি প্রণব। আমাদের সব বিষয়ে ৬০ বছর ধরে অক্ষরে অক্ষরে তার কথা শুনছে দিল্লি। তিনি একমাত্র রাজনীতিবিদ, যিনি দিল্লির মসনদে বাঙালি হয়েও একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। এমনকি রাষ্ট্রপতির পদে না থেকেও দোর্দণ্ড প্রভাব। ‘সুবীর ভৌমিক লিখেছিলেন, নির্বাচন বিষয়ে ঢাকাকে এবং ফিরে গিয়েই মোদিকে যথাযথ পরামর্শ দেবেন প্রণব। যথানুযায়ী মোদির কান বিষিয়েছেন। এর পরে খালেদা জেলে। এর মানে কী? প্রণবমুক্ত রাজনীতি ছাড়া বাংলাদেশ বাঁচবে না? শুধু এই রোগ শনাক্ত হলেই, বিজেপির অনুকরণে, রোগমুক্ত বাংলাদেশও সম্ভব।
তথ্যসূত্র : ডিক্লাসিফাইড নেতাজী ফাইল
ইমেইল: farahmina@gmail.com
ওয়েবসাইট : www.minafarah.com

No comments

Powered by Blogger.