একজন রোগীর জন্য সময় ৪৮ সেকেন্ড!

রোগীদের চিকিৎসায় বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা গড়ে যে সময় দেন সেটি এক মিনিটও নয়। আর তাতে কতটুকুই বা রোগ নির্ণয় আর চিকিৎসা সম্ভব। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে সকাল থেকে বিভিন্ন বিভাগে ভিড় করেন সারা দেশ থেকে আসা নানা ধরনের রোগী এবং তাদের সাথে থাকা আত্মীয়। মোহাম্মদ আবুল কাশেম বগুড়া থেকে এসেছেন ভাতিজাকে নিয়ে।
কিন্তু তাকে ভর্তিই করাতে পারেননি। অনেক দুর থেকে এসে তাই হতাশ হয়ে যাচ্ছেন অন্য কোথাও। তিনি বলছেন, "এখানে আসলে ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশন দিয়ে বলে অমুক যায়গায় যাও। এই কারণে আমি ভুক্তভুগী।" নোমান গাজী ময়মনসিংহ এসেছেন। তার পিত্তথলীর পাথর হয়েছে সেটির চিকিৎসার জন্য। তিনি বলছেন, "ডাক্তাররা বাংলাদেশে রোগীদের সময় দেয় না সেটি ঠিকই। তার প্রমাণ আমি নিজে। কখন দেখবে এখনো বলা যাচ্ছে না। এখন থেকে প্রায় চার ঘণ্টা আগে আসছি।" এই রোগী ও আত্মীয়দের গলায় স্বভাবতই হতাশার সুর, যার কারণ ফুটে উঠেছে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের জরিপে। যেখানে রোগী দেখায় সময় দেয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তান ও ভারত বাংলাদেশের থেকে এগিয়ে। অথচ বাংলাদেশে রোগী প্রতি গড়ে মোটে ৪৮ সেকেন্ড সময় দেয়া হয়। মিনিটের কাটায়ও তা পৌছায় না চিকিৎসকের সময়। যেখানে এই জরিপে সুইডেনের মতো সাড়ে বাইশ মিনিট না হলেও আবুল কাশেমের মতে কমপক্ষে দশ মিনিট তো দেয়া উচিত। কিন্তু বহির্বিভাগে ডাক্তারের মনোযোগ পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে রোগীদের।
কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি?
মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক শারমিন সুলতানা চৌধুরী বলেন, "যেমন ধরেন আমাদের রুমে আমরা এখন দু'জন আছি। যদি এই রুমে দুই শ' রোগী হয়। আর আমার কর্মঘণ্টা যদি আটটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ধরি তাহলে আপনি নিজেই হিসেব করুন এক একজনকে কজন করে রোগী দেখতে হয়। মূল সমস্যাই হল জনসংখ্যা।" দিনে আমাদের ১০০-এর বেশি রোগী দেখতে হয়। অথচ কাজের সময় সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত হলে একজন রোগীর পেছনে কতটুকু সময় দেয়া যায়? কিন্তু প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে অনেক টাকা ভিজিট দিয়েও যথেষ্ট মনোযোগ পাওয়া যায়না বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের জরিপ মতে, ভারতে চিকিৎসকেরা রোগীকে প্রায় আড়াই মিনিট দেন। সেটিও খুব কম। তবুও সেখানেও বাংলাদেশ থেকে বছরে হাজার হাজার রোগী যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য।
বাংলাদেশে ডাক্তারদের উপরে রোগীদের যেন আস্থার সঙ্কট রয়েছে। জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা কম হওয়াই মুল সমস্যা হিসেবে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। গত মাসেই জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানিয়েছেন, দেশে সরকারি নানা ধরনের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ছয় হাজার রোগী প্রতি একজন করে চিকিৎসক। শিশুদের চিকিৎসক রাজেশ মজুমদার বলছেন, রেজিস্টার্ড চিকিৎসক বাড়লে সেবার মানও বাড়বে। তিনি বলছেন, "এত রোগী একজন ডাক্তার কিভাবে সামাল দেবে। সকালে এসে দেখি গিজগিজ করছে রোগী। আমাদের আন্তরিকতার সাথে সেবা দেয়া চেষ্টা করি। যদি রেজিস্টার্ড চিকিৎসক যদি বাড়ে তাহলে সেই সেবার মানটাও বাড়বে।" কিন্তু গড়ে রোগী প্রতি ডাক্তারের সংখ্যা যতদিন না পর্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে ততদিন রোগীদের আক্ষেপ রয়েই যাবে।

No comments

Powered by Blogger.