নতুন দল নিবন্ধন নিয়ে বিপাকে ইসি by সিরাজুস সালেকিন

আবেদন করা নতুন ৭৬ রাজনৈতিক দলের জমা দেয়া কাগজপত্রের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আবেদন যাচাইকালে নিবন্ধনের যোগ্য দল খুঁজে পাচ্ছে না ইসি’র যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যরা। নতুন করে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন দেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদের রোডম্যাপ অনুসারে মার্চেই নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তালিকা প্রকাশ করতে চায় সাংবিধানিক সংস্থাটি। ইসি সূত্র জানায়, আবেদন যাচাইয়ের শুরুতে নতুন দলগুলোর অগোছালো তথ্য সংযুক্ত দেখে কর্মকর্তাদের কয়েকজন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। প্রায় সব দলের তথ্যে রয়েছে অসংখ্য বিভ্রান্তি। ভুলে ভরা  এবং সাংঘর্ষিক শব্দও যোগ করেছে কোনো কোনো দল। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির গঠনতন্ত্র কপি- পেস্ট করে নিজ দলীয় গঠনতন্ত্র বলে চালিয়ে দিয়েছে একটি দল। কিন্তু এক জায়গায় বিএনপির নামটি মুছতে ভুল করেছে ওই দলটি। আবার গঠনতন্ত্র লিফলেট ও ছাপানো আকারে দিয়েছে দু’-একটি দল। বাস্তবে তাদের গঠনতন্ত্র আছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। আরেক ইসি কর্মকর্তা জানান, নতুন দলের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে পুরো ধাক্কা খেতে হচ্ছে। কোনো একটি দলের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে বলে তাদের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করেছেন। নতুন দলের তথ্য এবং বড় দলগুলোর চাওয়ার মধ্যে খুব একটা তফাৎ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন দলের যে হাল তাতে নিবন্ধন পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। নতুন দলের মতো নিবন্ধিত অনেক দলের অবস্থা হুবহু। পুরনো দলের কার্যালয় ও শাখা অফিস খুঁজতে মাঠে নামলে অনেক দল নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। বাছাই কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন উপ-সচিব বলেন, নতুন দলের বেশ কয়েকটির তথ্য যাচাই করা হয়েছে। এ পর্যন্ত যোগ্য কোনো দল পাওয়া যায়নি। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দলের সর্বস্তরে ৩৩ শতাংশ মহিলা নেতৃত্ব থাকবে গঠনতন্ত্রে তা উল্লেখ নেই। প্রতিটি উপজেলায় ২০০ ভোটারের স্বাক্ষর থাকা বাঞ্ছনীয় তা পুরো তথ্য ঘেঁটে কোথাও পাওয়া যায়নি। বিগত নির্বাচনে (নিবন্ধনের আগে) ওই দল কত শতাংশ ভোট পেয়েছে কাগজপত্র দেখে বোঝা যাচ্ছে এটা পুরোপুরি তৈরি করে (বানানো) দেয়া। একটি দল তাদের ব্যাংকের স্থিতি দেখিয়েছেন মাত্র ১ হাজার টাকা। জমাকৃত কাগজে তথ্যের গরমিল বেশি। আরেক উপ-সচিব বলেন, পার্টির সর্বস্তরে নির্বাচিত নেতৃত্ব থাকতে হবে গঠনতন্ত্রে সেটি নেই। নিবন্ধনের শর্তানুযায়ী তৃণমূলের মতামত ও ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটি থাকবে এই তথ্যের বদলে একটি দল বলেছে, সভাপতি মনোনীত কয়েকজন নির্বাচিত হবেন। কোনো কোনো দল বিস্তারিত ঠিকানা না দিয়ে শুধুমাত্র ছাতক, সুনামগঞ্জ এতটুকু উল্লেখ করেছে। অন্য আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, নিবন্ধনের আবেদনপত্রের সঙ্গে ৫ হাজার টাকার ট্রেজারি চালান দেয়নি কোনো কোনো দল। দলের গঠনতন্ত্র কি সে সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই বেশির ভাগ দলের বলে জানান তিনি। প্রধান কার্যালয়ের অফিস মসজিদ মার্কেট দেখিয়েছেন একটি দল। তথ্য যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে বিড়ম্বনার মুখোমুখি ইসি কর্মকর্তারা। কারণ হিসেবে ওই কর্মকর্তা বলেন, একটি দল গত বছরের ২৭শে নভেম্বর ইসিতে দল হিসেবে তাদের নিবন্ধন করতে আবেদন করেছে। সংশ্লিষ্ট দলটি আবেদন জমা দেয়ার দু’দিন আগে তাদের দলের অফিসের জন্য এক বাড়িওয়ালার সঙ্গে চুক্তি করেন যা দলটির তথ্য ঘেঁটে পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনে বলা হয়েছে, নিবন্ধন পেতে হলে একটি দলকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেকোনো নির্বাচনে অন্তত একটি সংসদীয় আসন পেতে হবে, অথবা যেকোনো একটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ওই আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৫ শতাংশ পেতে হবে, অথবা দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে, অন্তত ২১টি প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা কমিটি থাকতে হবে এবং অন্তত ১০০ উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রামাণিক দলিল থাকতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, তিনটির মধ্যে একটি শর্ত পূরণ হলেই নিবন্ধনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। আবেদন করা দু’-একটি দলের অফিস অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যমতে, ‘বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস-বিজেসি’ নামে একটি নতুন দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে। দলটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন নিজের যে ফ্ল্যাট বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন সেটাকেই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দেখানো হয়েছে। আবাসিক ভবনটি রাজধানীর তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ার বিজয় সরণি টাওয়ার নামে পরিচিত। আর ‘নাকফুল বাংলাদেশ’ নামক দলের আবেদনে অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয় দেখানো হয়েছে রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের বিএনএস সেন্টারের দশম তলা। কিন্তু সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয় নেই। যে কক্ষটিকে দলীয় কার্যালয় হিসেবে দেখানো হয়েছে, সেটি একটি গার্মেন্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। উল্লেখ্য, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিতে ৩০শে অক্টোবর আবেদন আহ্বান করে ইসি। ৩১শে ডিসেম্বর ছিল আবেদন জমা দেয়ার শেষ দিন। রোডম্যাপ অনুসারে চলতি মাসেই নতুন নিবন্ধিত দলের তালিকা প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে ইসি’র।

No comments

Powered by Blogger.