চট্টগ্রামে ছিনতাইকারীদের টার্গেট বিদেশি নাগরিকের ব্যাগ

ছয় মাস আগে চীনের এক নাগরিকের ব্যাগ ছিনতাই করেছিল সেলিম। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে এক মাস জেল খাটার পর জামিনে বেরিয়ে আসে। ঠিক ছয় মাস পর আবারো ছিনতাই করে বৃটিশ নাগরিকের ব্যাগ। এভাবে গত তিন বছরে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে সাত বিদেশি নাগরিকের ব্যাগ ছিনতাই করেছে সে। বিদেশি নাগরিকদের ব্যাগই মূলত ওই ছিনতাইকারীর টার্গেট। সেলিমের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার কালাপানিয়া এলাকায়। বাবার নাম আব্দুল মালেক। থাকেন চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী থানার ফইল্যাতলী বাজারে। চট্টগ্রাম মহানগরে রয়েছে তার একটি ছিনতাইকারী গ্রুপ। যার বেশিরভাগ সদস্যই কিশোর। গত ২১শে ফেব্রুয়ারি সকালে চট্টগ্রামের খুলশী থানার জাকির হোসেন রোডে এমইএস কলেজের সামনে বাবার সঙ্গে রিকশাযোগে যাওয়ার পথে বৃটিশ নাগরিক জুলিয়া ডেভিসের ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় ছিনতাইকারী সেলিম। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হয় ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশা চালক হেদায়েত উল্লাহ সুজন (২১) ও মনসুর (১৯)। শনিবার দুপুরে নগরীর টাইগারপাস এলাকার মামা-ভাগিনা মাজারের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। আটক করা হয় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশা, একটি এলজি, দুই রাউন্ড কার্তুজ ও দুটি চাপাতি।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে বেরিয়ে আসে ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। এরমধ্যে রয়েছে চীনা নাগরিক ও বৃটিশ নাগরিকসহ মোট সাত বিদেশি নাগরিকের ব্যাগ ছিনতাইয়ের বর্ণনা; যা গতকাল রোববার সকালে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মির্জা সায়েম মাহমুদ। তিনি বলেন, গত ২১শে ফেব্রুয়ারি সকালে নগরীর খুলশী থানার জাকির হোসেন রোডে এমইএস কলেজ মোড়ে কর্মসূত্রে চট্টগ্রামে বসবাসকারী ইংল্যান্ডের নাগরিক জুলিয়া ডেভিস ছিনতাইয়ের শিকার হন। বাবার সঙ্গে যাওয়ার পথে অটোরিকশা থেকে তার ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায় সেলিম ও সহযোগীরা।
ব্যাগের মধ্যে একটি ক্যানন ক্যামেরা ও সানগ্লাস ছিল। জুলিয়া ডেভিস এশিয়ান উইম্যান্স ইউনিভার্সিটির রাইটিং সেন্টারের পরিচালক। এ ঘটনায় রাতেই তিনি খুলশী থানায় একটি মামলা করেন। মামলার তদন্তভার পেয়ে অভিযানে নামেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (দক্ষিণ) মো. ইলিয়াছ খান। তিনি বলেন, ভোরে যেসব অটোরিকশা নগরীর ছিনতাইপ্রবণ সপটগুলোয় ঘোরাঘুরি করে সেগুলোর ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে সেলিমসহ তিনজনকে আটক করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া বর্ণনা হচ্ছে- সুজন অটোরিকশা চালাচ্ছিল। সেলিম ব্যাগ টান দেয়। আগে-পিছে আরও ২টি অটোরিকশা ছিল। সেলিমকে গ্রেপ্তারের সময়ও টের পেয়ে অটোরিকশা দুটি নিয়ে আরও সাতজন পালিয়ে যায়। জুলিয়া ডেভিসের ছিনতাই হওয়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান। এর আগে গত বছরের ১৮ই জুলাই সকালে নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ রোডে অর্কিড হোটেলের সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন চীনা নাগরিক। তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া ব্যাগে একটি ল্যাপটপ, ২ লাখ টাকা, ১ হাজার মার্কিন ডলার ও চীনের জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল। এই ঘটনার পর ২১শে আগস্ট ছিনতাইকারী সেলিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু এক মাস পর সে জামিনে বেরিয়ে আসে। নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মির্জা সায়েম মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামের খুলশীতে ভারতীয়সহ বিভিন্ন দূতাবাস, চকবাজার এলাকায় অলিয়সঁ ফ্রসেসসহ একাধিক বৃটিশ প্রতিষ্ঠান এবং আগ্রাবাদ এলাকায় বিভিন্ন ব্যাংক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূত্রে বিদেশি নাগরিকদের বসবাস বেশি। ফলে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র এই বিদেশি নাগরিকের ব্যাগকে টার্গেট করে। সেলিম সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের প্রধান। সাত-আটটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে তারা প্রতিদিন ভোরে বের হয়। আর সুযোগ বুঝে টান দিয়ে ব্যাগ নিয়ে যায়। অথবা নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে জিম্মি করে মানিব্যাগ-মোবাইল ফোন ছিনতাই করে। ছিনতাইকারী সেলিম ২০১১ সালের ২৩শে জুনও কোতোয়ালি থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। ২০১৪ সালের ৫ই ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পায়। পরদিন তাকে আবারও গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গ্রেপ্তার হয় ২০১৭ সালের ২১শে আগস্ট। প্রতিবারই বিদেশি নাগরিকের ব্যাগ ছিতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় বলে জানান মির্জা সায়েম মাহমুদ। নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (দক্ষিণ) মো. ইলিয়াছ খান জানান, সেলিমের বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালি, ডবলমুরিং ও খুলশী থানায় সাতটি ছিনতাই মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি এবং অস্ত্র আইনে আরও দুটি মামলা করা হয়েছে। তাকে আজ আদালতে হাজির করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.