বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে খালেদার স্বাস্থ্য পরীক্ষার দাবি

বাইরের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে খালেদা জিয়াকে কারা কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে সচেতন চিকিৎসক সমাজ। গতকাল দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক  সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকদের সংগঠনটির তরফে এ অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বিএমএ’র সাবেক সহ-সভাপতি প্রফেসর ডা. রফিকুল কবির লাবু বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট, হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁটু সংক্রান্ত রোগে ভুগছিলেন। কারাগারে যাওয়ার পর সেসব সমস্যা বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে খালেদা জিয়া বাইরের ডাক্তারদের পরামর্শ নিতে চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিচ্ছে না। ডা. লাবু বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ দেখা করার অনুমতি দেননি। পরে আইজি প্রিজনের কাছে চিঠি দিলেও কোনো ধরনের সাড়া পাইনি। আমরা বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মিলে দেখা করতে গিয়েছিলাম। বাইরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারলে তিনি ভালো হতেন বলে আমরা আশাবাদী। খালেদা জিয়া নিজেও বাইরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে চেয়েছেন। অথচ কারাগারের একজন জুনিয়র ডাক্তার বলে দিয়েছেন তিনি দীর্ঘদিন ধরে হাঁটুর সমস্যায় ভুগছেন, এখন সেই ব্যথা বেড়েছে। ডা. লাবু বলেন, চক্রান্ত করে খালেদা জিয়াকে ভালো চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। ওই জুনিয়র চিকিৎসকের কি দোষ দেব, সে তো উপর থেকে যে নির্দেশ আসে সেটাই বলে। এর বাইরে কিছু বলতে পারে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া কিছুদিন আগে চোখের অপারেশন করিয়েছেন। ৩০ বছর ধরে হাঁটু সংক্রান্ত অষ্টিও আর্থোসিস রোগে ভুগছিলেন। প্রচণ্ড হাঁটু ব্যথা ওনার স্বাভাবিক চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল। এক পর্যায়ে হাঁটু সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করে কৃত্রিম হাঁটুর জোড়া লাগানোর অপারেশন করান। এরপর থেকে কঠোর নিয়মকানুনের মধ্যে থাকায় তার হাঁটুতে কোনো সমস্যা হচ্ছিল না। তবে কারাগারে যাওয়ার পর আবার হাঁটুর ব্যথা বেড়েছে। ওনার চলাচলের অবস্থা, ওয়াশরুম ব্যবহারের পদ্ধতি সবকিছুর ব্যাপারেই একজন হাঁটু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।  তা নাহলে কারাগারের পরিবেশের জন্য কৃত্রিম জোড়া লাগানো দুটি হাঁটু কোনোভাবে ঢিলে হয়ে গেলে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে। এসময় তিনি বাইরের চিকিৎসক দিয়ে খালেদা জিয়ার শরীরের সার্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান। অন্যথায় কোনো ক্ষতি হলে তার দায় সরকারকে নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা বলেন, ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তিনি বক্ষব্যাধিতে আক্রান্ত বহু বছর ধরে। এমন অবস্থায়ও উদ্দেশ্য মূলকভাবে পরিত্যক্ত কারাগারের জরাজীর্ণ ভবনে রাখা হয়েছে। যেখানে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের জন্য ওনার পূর্বের শ্বাসকষ্টজনিত বক্ষব্যাধি মারাত্মকভাবে বেড়ে যেতে পারে। যা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ব্যবস্থা ওই কারাগারে নেই। তিনি গত ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। জরাজীর্ণ পরিবেশ, একাকিত্ব এবং সরকারের মানসিক নির্যাতনের কারণে ওনার রক্তের শর্করা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে অথবা কমেও যেতে পারে। যা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। সংবাদ সম্মেলনে বিএমএ’র সাবেক সভাপতি ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. একেএম আজিজুল হক, বিএমএ’র সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুস সালাম, ড্যাবের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. শহীদ হাসান, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক ডা. শহীদুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 
খালেদার স্বাস্থ্য পরীক্ষার দাবিতে কারাফটকে চিকিৎসক দল
বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার কয়েকজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে চায়। জেলসুপার বরাবর তেমন একটি আবেদন নিয়ে গতকাল পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারাফটকে গিয়েছিলেন একটি চিকিৎসকদের একটি টিম। তবে জেলসুপারের সাক্ষাৎ না পেয়ে আইজি প্রিজন কার্যালয়ে আবেদনের একটি কপি জমা দেন তারা। কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে দু’-একদিনের মধ্যেই নতুন আবেদনসহ কেরানীগঞ্জে জেল সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন চিকিৎসকরা। অনুমতি পেলে কারাগারে গিয়ে তারা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন। বিএনপি’র সহস্বাস্থ্য সম্পাদক প্রফেসর ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু এ তথ্য জানান। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে পুরান ঢাকার পুরাতন কারাগারের মেইন গেটে যান একটি চিকিৎসক প্রতিনিধি দল। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা তাদের আইজি প্রিজন কার্যালয়ে যেতে বলেন। চিকিৎসকরা আইজি প্রিজন কার্যালয়ে গেলে তাদের জানিয়ে দেয়া হয় জেল সুপার বসেন কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে গিয়েই অনুমতি আনতে হবে। পরে চিকিৎসকরা আইজি প্রিজন কার্যালয়ে আবেদনের একটি কপি জমা দিয়ে ফিরে আসেন। জেলসুপার বরাবর আবেদনে তারা বলেন, বিগত ২৬ দিন ধরে সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ অমানবিকভাবে নাজিমউদ্দিন রোডস্থ নির্জন কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। আমাদের জানামতে, এই দীর্ঘ সময় কারান্তরীণ থাকাকালে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেননি। অথচ বয়স বিবেচনায় তার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি ছিল। তাই অত্যন্ত স্বাভাবিক কারণে আমরা চিকিৎসক সমাজ ও দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়, বয়োজ্যেষ্ঠ দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আবেদনে বলা হয়, বিএসএমএমইউসহ বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কারা ফটকে অপেক্ষা করেছেন। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বয়স, একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানের স্ত্রীর মর্যাদা এবং দেশের মানুষের উদ্বেগের বিষয়গুলো বিবেচনা করে একটি চিকিৎসক টিমকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ দিতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানান। কারা ফটকে যাওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন- বিএসএমএমইউ’র অর্থোপেডিক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ, বিএসএমএমইউ’র গ্যাস্ট্রোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এমএ রায়হান, চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক প্রফেসর ডা, মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, প্রফেসর ডা. আমিনুল ইসলাম, চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মো আবদুল কুদ্দুস, বিএনপি’র সহ-স্বাস্থ্য সম্পাদক প্রফেসর ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ডা. সাইফুল ইসলাম সেলিম, মোফাখ্‌খারুল ইসলাম রানা, ডা. এবিএম শফিউল্লাহ ও হৃদরোগ ডা. মনোয়ারুল কাদির বিটু।
খালেদার সঙ্গে সাক্ষাতে কারাফটকে ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক
এদিকে খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়ে গতকাল কারাফটক থেকে ফিরে এসেছেন ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকরা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর অনুমতি না পেয়ে তারা ফিরে যান। বিএনপি’র ক্রীড়া সম্পাদক ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকের নেতৃত্বে খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়া ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকরা হলেন- দলের সহ-ক্রীড়া সম্পাদক আরিফুল হক প্রিন্স, বিসিবি’র সাবেক পরিচালক ও সাবেক এমপি শাহ্‌ নুরুল কবির শাহীন, বাফুফের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনজুর হোসেন মালু, সাবেক বিসিবি পরিচালক রফিকুল ইসলাম বাবু, সাঁতার ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আমিনুল হক দেওয়ান, অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী ইমাম তপন, ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন বুলবুল, সাবেক জাতীয় ফুটবলার এনামুল হক, ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব, মাসুদ রানা, জাতীয় দলের ফুটবলার জাহিদ হাসান এমিলি, সাবেক হকি তারকা আসাদুজ্জামান চন্দন, সাবেক জিমন্যাস্ট কামরুজ্জামানসহ আরও অনেকে। এ সময় তাদেরকে কারাফটক থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। কারাফটক থেকে ফিরে আমিনুল হক বলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও একটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রধানের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। তাকে চিকিৎসা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এটা কেমন আচরণ? তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের প্রাণের নেত্রী, আমাদের নেত্রী; আমাদের মা। মিথ্যা মামলায় তাকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। বিচারের নামে প্রহসন করা হচ্ছে। এভাবে একটা স্বাধীন দেশ চলতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.