ঐতিহাসিক ভাষণের পটভূমি রচিত হয়েছিল যে প্রেক্ষাপটে by একেএম শাহনাওয়াজ

শিক্ষকতা করি বিধায় শিক্ষার্থীদের নানা রকম সংকট চোখে পড়ে। আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষার সীমাবদ্ধতা ও নতুন প্রজন্মের ইতিহাসবিচ্ছিন্নতা মুক্তিযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিত ও তাৎপর্যকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে দেয়নি তাদের। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ই আজ ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে নতুন প্রজন্মের কাছে। সেদিন এক কৌতূহলী ছাত্র প্রশ্ন রেখেছিল বঙ্গবন্ধুকে কেন ৭ মার্চে এমন একটি ভাষণ দিতে হয়েছিল। ও জেনেছে ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরও বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার কারণে নানা কপট আচরণ করতে থাকে পাকিস্তানি শাসকরা। এ ধারাবাহিকতায় মার্চের প্রথম সপ্তাহে চলতে থাকা আন্দোলনটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। যা স্পষ্ট না হলে ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য অনেকটাই স্পষ্ট হয় না। স্বাধীনতার মাসে গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের কিছু ছবির প্রতিফলন করা তাই জরুরি বিবেচনা করছি। নির্বাচনের পর স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া হয়েছিল পার্লামেন্টে অধিবেশন ডাকা হবে এবং সেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। এ লক্ষ্যে ১৬ ফেব্র“য়ারি আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাদের নেতা নির্বাচন করে। আর সহকারী নেতা নির্বাচিত হন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে ১৯ ফেব্র“য়ারি রাওয়ালপিণ্ডিতে ইয়াহিয়া এবং ভুট্টো গোপন বৈঠকে বসেন।
এর সূত্রেই প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের মন্ত্রিপরিষদ বাতিল করে দেন। এতে একটি রাজনৈতিক অরাজকতা তৈরি হয়। এ অবস্থার পথ ধরে ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেতার ঘোষণার মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন। বেতার ভাষণটির বক্তব্য পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, সুচতুরভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছিল। বাঙালির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার একটি গোপন চক্রান্তের পথে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টো হাঁটছিলেন। পরবর্তী সবকটি ধাপের সরকারি সিদ্ধান্তগুলো সেটাই সমর্থন করে। যেমন- জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার আগেই বাঙালির প্রতি কিছুটা সহানুভূতিপ্রবণ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল আহসানকে পদচ্যুত করা হয়। খুব সঙ্গত কারণেই অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে হতাশ করে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে থাকে চারদিকে। এ অবস্থায় বাঙালিদের দমন করার জন্য ইয়াহিয়া তার আস্থার মানুষ লে. জে. সাহেবজাদাকে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেন।

No comments

Powered by Blogger.