ডিপো থেকে পণ্য পরিবহন হঠাৎ বন্ধ অচল চট্টগ্রাম বন্দর

সোমবার সকাল থেকে হঠাৎ অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলো। আমদানি-রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার পরিবহনকারী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং লরি পরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
শুধু তাই নয়, গেইটপাস, বখশিশের নামে চাঁদাবাজির প্রতিবাদে কন্টেইনার ডিপোগুলোর মালামাল পরিবহন বন্ধ রেখে ব্যাপক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এ নিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত কথিত নামধারী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা চলছে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) পক্ষে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এই চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ করেন আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সমপাদক সুফিউর রহমান টিপু।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বেসরকারি মালিকানাধীন ১৮টি কন্টেইনার ডিপো রয়েছে। যেগুলো থেকে লোড-আনলোডের জন্য ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইম মুভার, লরি প্রবেশের সময় গেটপাস ও পার্কিং বাবদ ১৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
পাশাপাশি মালামাল ওঠানামার জন্য শ্রমিকরা বখশিশের নামে ৬০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে এই চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরাও।
টিপু বলেন, চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে অবৈধ এই চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে শ্রমিকরা সোমবার সকাল থেকে হঠাৎ প্রত্যেকটি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো থেকে মালামাল আনা নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে গত শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরেও স্মারকলিপি দিয়েছেন পরিবহন মালিকদের সংগঠনগুলো। কিন্তু কোন সুরাহা মেলেনি। ফলে কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করেন মালিক ও শ্রমিকরা।
আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি, চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্ল্যাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বন্দর ট্রাক কভার্ডভ্যান মালিক ও কন্টেকটার অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক কভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নসহ অন্তত ১৫টি শ্রমিক সংঠন এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রমিকরা কখন আবার মালামাল পরিবহন শুরু করবে বা আদৌ করবে কি না এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। সন্ধ্যায় বৈঠকের পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন বলেন, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা সকাল থেকে ডিপোগুলোতে কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে  দেয়নি। ফলে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে আমদানি-রপ্তানীকারক ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে ডিপোগুলোতে চরম উত্তেজনা চলছে। তিনি বলেন, গেটপাস ও পার্কিং চার্জ বাবদ ৫০ টাকা করে মোট ১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে, ১৫০ টাকা নয়। গেট পাসের টাকা সব ডিপোতে নেয়া হলেও পার্কিংয়ের টাকা কেবল পার্কিং সুবিধা সংবলিত ডিপোতেই নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, পার্কিংয়ের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরেও ৫৭ দশমিক ৫০ টাকা করে আদায় করা হয়। ডিপোগুলো রক্ষণাবেক্ষনের জন্য যে খরচ হচ্ছে, তা পোষানোর জন্যই এ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
কন্টেইনার শ্রমিকদের ৬০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা করে বখশিস আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো ডিপোই শ্রমিকদের বখশিস আদায়ের বিষয়টি সাপোর্ট করে না। কেউ যদি নিজের মালামাল দ্রুত লোড আনলোডের জন্য বখশিস দিয়ে থাকেন, সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।
এদিকে পরিবহণ বন্ধ করে দেওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আমদানি-রপ্তানীকারকরা। এরমধ্যে নগরীর মনিকা সড়কের একটি বেসরকারী ডিপোতে রাখা কন্টেইনার এজেন্টের মালিক বাবুল চৌধুরী বলেন, একদিন কন্টেইনার পরিবহণ বন্ধ রাখায় ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। পরিবহন কখন শুরু হবে সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নই। এতে শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা।

No comments

Powered by Blogger.