পুলিশ বলছে বন্দুকযুদ্ধ, মা বলছে ঘরে ঢুকে হত্যা

রাজধানীর কাফরুল এলাকায় গত রোববার রাতে আবদুস সালাম ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন, নাকি তাঁকে ঘরের ভেতর গুলি করে হত্যা করা হয়েছে—তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নিহত ব্যক্তির মায়ের অভিযোগ, ঘরে ঢুকে সালামকে গুলি করে পুলিশ বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়েছে। আর পুলিশের দাবি, গত রোববার গভীর রাতে কাফরুল থানা এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতির সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবদুস সালাম (৩০) নিহত হন। তাঁর বিরুদ্ধে ভাষানটেক ও কাফরুল থানায় ৩১টি মামলা রয়েছে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পড়ে থাকা লাশটি শনাক্তের পর মা রওশন আরা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তাঁর ছেলেকে ভাষানটেক ৪ নম্বর বস্তির ঘরে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁর পুত্রবধূ রুবিনা আক্তারকে। তাঁর আড়াই বছরের নাতনি সামিহাও মায়ের সঙ্গে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৪৮/৭ নম্বর পশ্চিম বাইশটেকি এলাকায় ‘স্বপ্ন বিলাস’ নামের একটি বাড়িতে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা—এমন খবর পেয়ে ভাষানটেক ও কাফরুল থানার পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালায়। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি যাওয়ামাত্র ওই বাসার ফটক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে পালাতে থাকে সন্ত্রাসীরা। এ সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতেই তাদের সহযোগী সামনে পড়ে যায়। সন্ত্রাসীদের গুলিতে উপপরিদর্শক (এসআই) জহির রায়হান আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি গুলিভর্তি ম্যাগাজিন, ২০৫ পুরিয়া হেরোইন ও ১০০টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। ওই সময় আবদুস সালামের স্ত্রী রুবিনাকেও গ্রেপ্তার করা হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
তবে মর্গে গিয়ে ছেলের লাশ শনাক্তের পরে মা রওশন আরা বলেন, তাঁদের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে। খবর পেয়ে তিনি গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন। তাঁর দাবি, ভাষানটেকে মাছের ব্যবসা করতেন আবদুস সালাম।
রওশন আরা প্রশ্ন তোলেন, কেউ কি স্ত্রী-কন্যা নিয়ে ডাকাতি করতে যায়। তাহলে তাঁর স্ত্রী-কন্যাকে কোত্থেকে গ্রেপ্তার করা হলো। এই মায়ের অভিযোগ, মধ্যরাতে পুলিশ ভাষানটেকে ৪ নম্বর বস্তিতে তাঁর ছেলের বাসায় অভিযান চালায়। আবদুস সালাম তখন স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে ঘরেই ছিলেন। পরে পুলিশ স্ত্রী রুবিনা ও আড়াই বছরের মেয়েকে অন্য একটি ঘরে নেয়। পরে নিজের ঘরের ভেতরেই সালামকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ঘরে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে যায়।
রওশন আরার দাবি, তিনি পিরোজপুর থেকে ঢাকায় এসে সরাসরি ছেলের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ছেলের ঘরের জানালা দিয়ে ঘরের জামাকাপড় ও বিছানায় রক্তের দাগ দেখেছেন। লোকজনও তাঁকে জানিয়েছে, পুলিশ সালামকে গুলি করার পর গাড়িতে করে নিয়ে গেছে। ওই সময় বাসা থেকে কাউকে বের হতে দেওয়া হয়নি।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাইয়ুম বলেন, ডাকাতির প্রস্তুতির সময়ই গোলাগুলিতে সালাম মারা গেছেন। সালাম ভয়ংকর সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে শুধু ভাষানটেক থানাতেই ২৩টি ও কাফরুল থানায় আটটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া গুলশান ও বনানীসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও জমি দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। আবদুস সালামের স্ত্রীও মাদক ব্যবসায় জড়িত। তাই তাঁকেও অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সালামের দলের আরও সদস্যদের ধরতে অভিযান চলছে।

No comments

Powered by Blogger.