নেতৃত্বের কাজিয়ায় খুন মোল্লা ওমরের ছেলে

খুনোখুনিতে পৌঁছল তালেবান নেতৃত্ব নিয়ে কাজিয়া। কাবুলে মঙ্গলবার সরকারিভাবে ঘোষণা করা হল প্রয়াত তালেবান প্রধান মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব পাকিস্তানের কোয়েটা শহরে চার দিন আগে খুন হয়েছেন। বাবার মৃত্যুতে আফগানিস্তানের জঙ্গিদল তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার পদের ইয়াকুব ছিলেন দাবিদার। আফগানিস্তানের সংবাদ মাধ্যম টোলা নিউজ জানিয়েছে, মঙ্গলবার আফগান সংসদের নিম্নকক্ষ ‘ওলেসি জিবগার’ ফার্স্ট ডেপুটি স্পিকার জাহির কাদির সাংবাদিক–বৈঠকে ঘোষণা করেছেন, মোল্লা ওমরের মৃত্যুতে তালেবান দলের নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনার জন্য কোয়েটার একটি বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন ২২/২৩ বছর বয়সী মোল্লা ইয়াকুব। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব নিয়ে তার সঙ্গে মোল্লা মুহম্মদ মনসুরের সঙ্গে যে সঙ্ঘাত চলছিল, তারই জেরে খুন হয়ে যান, ওমর–পুত্র মোল্লা ইয়াকুব। গত ২৯ জুলাই এভাবেই কাবুলে সাংবাদিক–বৈঠক ডেকে আফগান সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, ২/৩ বছর আগেই তালেবান প্রধান মোল্লা ওমর মারা গিয়েছেন। এর দুদিন পর তালেবান দলের তরফে এ খবরকে স্বীকৃতি দিয়ে বলা হয় ২০১৩ সালে পাকিস্তানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোল্লা ওমর মারা গিয়েছেন। দু-একদিনের মধ্যেই এরপর তালেবানদের তরফে ঘোষণা করা হয় দলের নতুন সর্বোচ্চ নেতা হয়েছেন মোল্লা মুহম্মদ মনসুর। সম্ভবত ওমর–পুত্র মোল্লা মুহম্মদ খুন হয়েছেন ওই সময়েই নেতৃত্ব নিয়ে দলের কোন্দলে। মোল্লা মনসুর নেতা হতেই তালেবান দলে ব্যাপক গন্ডগোল শুরু হয়ে যায়। তালেবান দলের তাত্ত্বিক নেতা আবদুল মান্নান নিয়াজ মোল্লা মনসুরের নেতা–নির্বাচনকে শরিয়ত–বিরোধী ঘোষণা করেন। তার মতে, নেতা নির্বাচনের জন্য যে শুরা (পরিষদ) ডাকার নিয়ম, সেই নিয়ম মানা হয়নি। তালেবানি জঙ্গি দলের সামরিক কমান্ডার কোয়াম জাকিরও মোল্লা মনসুরের নেতৃত্ব মানতে নারাজ মনোভাব প্রকাশ করেছেন। দলের একটা বড় অংশই দাবি তুলেছিলেন হয় মোল্লা ওমরের ছেলে ইয়াকুব নয় মোল্লা ওমরের ভাই মোল্লা আবদুল মান্নানকে নেতৃত্বে বসাতে হবে। তালেবান দলের নেতৃত্বে অনেকে অভিযোগ তোলেন, পাক তালেবানদের চাপে মোল্লা মনসুরকে নেতা করা হয়েছে। তাদের আরও অভিযোগ, মোল্লা মনসুর সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার সমর্থক। এ সব অভিযোগের চাপে পরদিনই মোল্লা মনসুরের একটি অডিও–ভিডিও ক্যাসেট সাংবাদিকদের তুলে দেওয়া হয়। তাতে মোল্লা মনসুর দলে ঐক্যের ডাক দেন। বলেন, দলে গোষ্ঠী-কোন্দলে শত্রুদেরই লাভ। তিনি শান্তি আলোচনায় ইচ্ছুক, এ অভিযোগ উড়িয়ে মনসুর বলেছেন, এটা শত্রুদের অপপ্রচার। তা সত্ত্বেও তালেবান দলে ব্যাপক গন্ডগোল চলছে। মোল্লা ওমরের পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, নেতৃত্ব ছিনতাই করে নিয়েছেন মনসুর। তালেবান দল ভাঙছেও। বেশ কিছু নেতা দল ছেড়েছেন। এদের মধ্যে আছেন উপসাগরীয় দেশ কাতারের তালেবান প্রধান মুহম্মদ তায়েব আগা। আফগান সংসদের প্রধান উপাধ্যক্ষ জাহির কাদির জানিয়েছেন, মোল্লা মনসুর তালেবান নেতা হওয়ার পর তিনটি গোষ্ঠী–সঙ্ঘর্ষের খবর মিলেছে। মোল্লা মনসুরের কনভয়ের ওপরও বড়রকম আক্রমণের খবর পেয়েছে আফগান সরকার।-ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.