জলাধার অবৈধ দখলে, জলাবদ্ধ সাতটি গ্রাম

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম দুই সপ্তাহ ধরে জলাবদ্ধ। এতে গ্রামগুলোর পাঁচ শতাধিক পরিবার অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ওই ইউনিয়নের পানিনিষ্কাশনের জলাধারটি অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চাপিলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু জাফর মিয়া বলেন, ১৯৮৬ সালে পানিনিষ্কাশনের জন্য চককান্তপুর এলাকায় পুঁটিমারী হয়ে চাকলের বিল পর্যন্ত সংযোগকারী খাল খনন করা হয়। ১৬ ফুট প্রস্থ ও ৫ ফুট গভীরতার প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাল অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় এখন লোকালয়ের পানি নামতে পারছে না।
সরেজমিনে গত রোববার বিকেলে দেখা যায়, অতিবৃষ্টিতে ভত্তাগাড়ী বিলের পানি উপচে খামারপাথুরিয়া, বৃ-পাথুরিয়া, কুসুমহাটি, মহারাজপুর, কান্তপুর, তেলটুপি, নওপাড়া—এই সাতটি গ্রামে পানি ঢুকে গেছে। মাঠের পর মাঠ পানি থইথই করছে। বসতবাড়িগুলোতে গোড়ালি থেকে হাঁটু সমান পানি। পাকা-আধা পাকা শৌচাগারগুলো ডুবে মলমূত্র ছড়িয়ে পড়েছে। গবাদিপশু পাকা সড়কে রাখা হয়েছে। কালীবাড়ি থেকে বৃ-পাথুরিয়া পাকা সড়কটি কয়েকটি জায়গায় কেটে পানিনিষ্কাশনের চেষ্টা করছেন স্থানীয় লোকজন।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম দুই সপ্তাহ ধরে জলাবদ্ধ। ওই ইউনিয়নের পানিনিষ্কাশনের জলাধারটি অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বৃ-পাথুরিয়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জমে থাকা হাঁটুপানি মাড়িয়ে বাড়ি ফিরছে শিক্ষার্থীরা। ছবিগুলো গত রোববার বিকেলে তোলা l প্রথম আলো
বৃ-পাথুরিয়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে দেখা যায় কোমর সমান পানি। শ্রেণিকক্ষেও পানি ঢুকেছে। উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম জানালেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কার্যত বন্ধ। তাঁর প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ব্যবস্থায় দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলছে। শিক্ষার্থীরা পানিতে ভিজে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল করিম বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে পচে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার একর জমির ফসল। রোববার পর্যন্ত ৫০ হেক্টর জমিতেও আমন চাষ করতে পারেননি কৃষকেরা। ১০ হেক্টর জমির কলাবাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসন করা না হলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শতাধিক ব্যক্তি ওই জলাধার দখল করে পুকুর তৈরি, বাড়িঘরসহ নানা রকম স্থাপনা নির্মাণ করায় পানিনিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বিগত বছরগুলোতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় স্থানীয় লোকজন বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেননি। জলাধারটি দখলমুক্ত করার জন্য এলাকাবাসী গত ২৮ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
চাপিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সামসুর আলম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে ৬০-৭০টি পুকুর খননের সময় পানিনিষ্কাশনের পথটি বন্ধ হয়ে পড়েছে। দখলকারীদের নোটিশ দিয়েও কোনো ফল মেলেনি।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোবারক হোসেন বলেন, উপজেলায় প্রাথমিকভাবে ৪০টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে জলাধার দখল করে নির্মিত ১০-১৫টি পুকুরের পাড় কেটে পানি বের করার পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখন পানি নামতে শুরু করেছে। দখলদারদের চিহ্নিত করার কাজও চলছে। জলাধারটি আগামী শুকনা মৌসুমে পুরোপুরি দখলমুক্ত করার চেষ্টা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম দুই সপ্তাহ ধরে জলাবদ্ধ। ওই ইউনিয়নের পানিনিষ্কাশনের জলাধারটি অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নামানোর জন্য বৃ-পাথুরিয়া-কালীবাড়ী পাকা সড়ক কেটে ফেলেছে গ্রামবাসী। ছবিগুলো গত রোববার বিকেলে তোলা l প্রথম আলো

No comments

Powered by Blogger.