বেনজির ভুট্টোকে সমাবেশে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল আইএসআই

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে ২০০৭ সালের ২৭শে ডিসেম্বর জনসমাবেশে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র তৎকালীন মহাপরিচালক। রাওয়ালপিন্ডির একটি সন্ত্রাসবিরোধী আদালতে বেনজির হত্যাকাণ্ড মামলায় দেয়া সাক্ষ্যে এ তথ্য জানিয়েছেন তৎকালীন সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ মেজর (অব.) ইমতিয়াজ হুসেইন। তিনি বলেন, আগের দিন রাতে আইএসআই মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) নাদিম তাজ এবং মেজর জেনারেল এহসান-  বেনজির ভুট্টোর নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করতে তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। লিয়াকত বাগে আয়োজিত সমাবেশে যোগ না দেয়ার জন্য তারা বেনজিরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। ইমতিয়াজ জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো সেসময় আমাকে বলেছিলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো, আইএসআই প্রধান এবং মেজর জেনারেল এহসান তার জীবনের ওপর প্রাণঘাতী নিরাপত্তা হুমকির বিষয়টি তাকে জানিয়েছেন। এদিকে অবসরপ্রাপ্ত আরেক সেনা কর্মকর্তা পাকিস্তানের দৈনিক ডনকে জানিয়েছেন, বেনজির ভুট্টোর সঙ্গে আইএসআই প্রধানের ওই বৈঠকটি হয় কয়েক ঘণ্টা ধরে। সেনাবাহিনীর কাছে বিভিন্ন সূত্র থেকে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে, রাওয়ালপিন্ডিতে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা প্রবেশ করেছে। আর তারা বেনজির ভুট্টোকে সেদিনের জনসমাবেশের আগে, পরে বা সমাবেশ চলাকালীন হত্যা করতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এ উদ্বেগ জানানো হয়েছিল প্রয়াত পিপিপি নেত্রী বেনজির ভুট্টোকে। বেনজির হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষী মেজর (অব.) ইমতিয়াজ। ২০০৭ সালের ১৬ই অক্টোবর তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান। আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে তিনি বলেন, বেনজির ভুট্টো তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন অস্ত্রসহ তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য। গাড়িচালকের পাশের আসনে তাকে বসার কথা বলেছিলেন তিনি। ব্যাকআপ গাড়ি বহর ব্যবস্থা করার দায়িত্ব ছিল তার ওপর। ব্যাক-আপ গাড়িগুলোতে ছিলেন ১০ সদস্যের নিরাপত্তা দল। গাড়িগুলোতে অন্যদের মধ্যে ছিলেন ড. জুলফিকার মির্জা, আগা সিরাজ দুররানি এবং মেজর জেনারেল (অব.) মেহমুদ। ইমতিয়াজ আরও জানান, ২০০৭ সালে করাচির কারসাজে যেই ট্রাকে থাকা অবস্থায় বোমা হামলার শিকার হন বেনজির  ভুট্টো সেই ট্রাকেও উপস্থিত ছিলেন তিনি। ওই হামলায় ১৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। ২৭শে অক্টোবর হত্যাকাণ্ডের দিনের ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনায় তিনি বলেন, লিয়াকত বাগের উদ্দেশে বেনজির ভুট্টো জারদারি বাসভবন ছেড়ে বের হন দুপুর একটায়। গাড়ি চালাচ্ছিলেন হাফিজুর রহমান নামের এক গাড়িচালক। আমি বসেছিলাম সামনের আসনে। আমার পেছনে বসেছিলেন,  বেনজির ভুট্টো, আমিন ফাহিম ও নাহিদ খান। আর তাদের পেছনে ছিলেন সফদার আব্বাসী, মিসেস ভুট্টোর ব্যক্তিগত ভৃত্য জাকির এবং পিপিপি শ্রমিক খালিদ হুসেইন শাহেনশাহ। ইমতিয়াজ বলেন, সমাবেশের পর বেনজির ভুট্টো লিয়াকত বাগ থেকে রওনা দেন। তারা যখন লিয়াকত রোডে ছিলেন তখন বেনজির ভুট্টো গাড়ির ভেতরে পড়ে যান এবং রক্ত বের হতে থাকে। এরপরই বিস্ফোরণ ঘটে। আমরা মুরি রোডের একটি হাসপাতালে দ্রুত যাই। অর্ধেক পথ যাওয়ার পর মিসেস ভুট্টোকে আরেকটি গাড়িতে সরিয়ে নেয়া হয় যে গাড়িতে ছিলেন শেরি রহমান। পরে নাহিদ খান তাদেরকে জানান, গুরুতর আহত বেনজির ভুট্টো গুরুতর জখমে প্রাণ হারিয়েছেন। নাহিদ খান ও তার স্বামী সাবেক সিনেটর সফদার আব্বাসী ডনকে বলেন, বেনজির ভুট্টোর সঙ্গে তৎকালীন আইএসআই মহাপরিচালকের সাক্ষাতের কথা তারা জানতেন। কিন্তু আইএসআই প্রধান তাকে নিরাপত্তা উদ্বেগ নিয়ে সাবধান করেছিলেন সেটা তাদের অজানা ছিল। এটা তারা হত্যাকাণ্ডের পর জানতে পারেন বলে উল্লেখ করেন মি. আব্বাসী।

No comments

Powered by Blogger.