চার নারী নিয়ে মোদির বিপত্তি by সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

কথায় আছে, রত্নের মধ্যে নীলা নাকি কারও সয় কারও সয় না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাগ্যে নীলার কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে কি না জানা নেই, তবে নারীকেন্দ্রিক বিতর্ক এই গৃহী-সন্ন্যাসীকে বিব্রত করেই চলেছে।
প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম বছর না কাটতেই নারীকেন্দ্রিক বিতর্ক মোদিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে দিয়েছে। শুরু পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে নিয়ে। সেই সুষমা, বিজেপির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মেরুকরণে যিনি কোনো দিনই নরেন্দ্র মোদির ধারেকাছে ছিলেন না। আইপিএলের সাবেক কমিশনার দেশত্যাগী ললিত মোদির ভিসার জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে তদবির করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সুষমা ফেলে দিয়েছেন মহাবিতর্কে। হয়তো সামান্য বুদবুদ কেটে বিতর্কটা মিটে যেত, কিন্তু সুগ্রীব দোসরের মতো এসে হাজির রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। ললিত মোদির ইস্যুতে মিডিয়া-আক্রমণ যত তীব্র হচ্ছে, ততই মুখে কুলুপ এঁটেছেন দুই নারী। মোদির মুখও বন্ধ। বিতর্কের ঠেলায় তাঁর টুইট সংখ্যাও তলানিতে এসে ঠেকেছে।
সুষমা স্বরাজ, বসুন্ধরা রাজে, স্মৃতি ইরানি, পঙ্কজা মুন্ডে
দুই নারীর প্রতি এই অতর্কিত ও অঘোষিত আক্রমণে বিব্রত প্রধানমন্ত্রীর বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়ে তুলেছেন অপর দুই নারী। এঁদের একজন তাঁর খুবই প্রিয় ও কাছের, স্মৃতি ইরানি। তবে এত দ্রুত স্মৃতি যে বিড়ম্বনার কারণ হয়ে উঠবেন, নরেন্দ্র মোদি তা হয়তো ভাবেননি। শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে দেওয়া হলফনামা আজ স্মৃতিকে টেনে এনেছে আদালতের আঙিনায়। আর, মোদিকে করছে বিব্রত। কারণ, স্মৃতির অপসারণের দাবিতে বিরোধীরা সরব।
মহারাষ্ট্রের পঙ্কজা মুন্ডে মোদির চতুর্থ বিড়ম্বনা। পঙ্কজার বাবা গোপীনাথ মুন্ডে ছিলেন মহারাষ্ট্র বিজেপির অবিতর্কিত নেতা। দিল্লিতে এক পথ দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর পঙ্কজার উত্থান। তবে দরপত্র ছাড়া ২০৬ কোটি রুপির জিনিসপত্র কেনায় তাঁকে নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ভারতীয় সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের আগে চারদিক দিয়ে চার নারী-সৃষ্ট এই অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক নরেন্দ্র মোদির বলিরেখা যতটা গভীর করেছে, ঠিক ততটাই বান ডেকেছে কংগ্রেসের মরা গাঙে। কীভাবে এর সামাল দেবেন মোদি, সেটাই আগ্রহ। জয়পুর থেকে এক বেলার জন্য দিল্লি এসে ‘নীতি আয়োগে’র (পূর্বতন পরিকল্পনা কমিশন) বৈঠক সেরে বসুন্ধরা গতকাল শনিবার রাজ্যে ফিরে গেলেন সেই আগ্রহ আরও বাড়িয়ে। কেননা, মোদি তো দূরের কথা, দলীয় সভাপতি অমিত শাহর সঙ্গেও তাঁর দেখা হয়নি। ইস্তফা না টিকে থাকা, চার নারীকে ঘিরে গড়ে ওঠা সেই বিতর্কের জাঁতাকলে আপাতত পিষছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক যে তিনিই।

No comments

Powered by Blogger.