সড়কের পাশের গাছ কেটে নিচ্ছেন আ.লীগ নেতা

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের রায়পুর মোড় থেকে
কাশিপুর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে সামাজিক
বনায়নের ছয় শতাধিক গাছ কেটে নিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন
পরিষদের এক সদস্য। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের রায়পুর মোড় থেকে কাশিপুর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের ছয় শতাধিক গাছ কেটে নিয়েছেন সদর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সিরাজুল ইসলাম। গত চার-পাঁচ দিন ধরে ওই গাছ কাটছেন তিনি।
বন বিভাগ ও স্থানীয় লোকজন জানান, বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় প্রায় সাত বছর আগে মহম্মদপুর উপজেলা সদরের প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে স্থানীয় বসুরধুলজিডড় সামাজিক বনায়ন সমিতি বিভিন্ন বনজ ও ফলদ গাছের চারা লাগায়। বন বিভাগের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী গাছগুলো পরিপক্ব হওয়ার পর কেটে বিক্রি করার পাশাপাশি সেখানে নতুন চারা লাগানো হবে। ওই গাছ বিক্রির টাকা সমিতির সুফলভোগীরা শতকরা ৬৫ ভাগ ও বন বিভাগ ৩৫ ভাগ পাবে। সড়কের আশপাশের বাসিন্দাদের দিয়ে ওই সমিতি গঠন করা হয়।
স্থানীয় সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি বসুরধুলজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা লোকমান মোল্লা জানান, সমিতির সদস্য ১১০ জন। প্রায় সাত বছর আগে বন বিভাগের সহযোগিতায় রাস্তার পাশে প্রায় আড়াই হাজার রেইন ট্রি, মেহগনি, শিশু, নিম, বাবলা ও গামারিগাছ লাগানো হয়। কিছু গাছ মরে গেছে। বাকিগুলো কাটার সময় এখনো হয়নি। হঠাৎ দেখেন, সিরাজুল ইসলাম গাছগুলো কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বিষয়টি থানা-পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ও বন বিভাগকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে ওই সড়ক এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, শ্রমিকেরা সড়কের পাশের গাছ কেটে ভ্যানে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। সড়কের দুই পাশে কেটে নেওয়া গাছের গোড়া পড়ে আছে। বসুরধুলজুড়ি বাজারের কাছে সড়কের পাশের পাঁচ-ছয়টি মূল্যবান গামারি ও রেইন ট্রি গাছ কাটছিলেন আটজন শ্রমিক। দুই শ্রমিক কাটা গাছগুলো ভ্যানে করে সরিয়ে নিচ্ছিলেন।
গাছ বহনকারী ভ্যানচালক আলী মোর্তজা জানান, সিরাজুল গাছগুলো রায়পুর গ্রামের কাঠব্যবসায়ী আসাদ মোল্লার কাছে বিক্রি করেছেন। গাছগুলো তিনি আসাদ মোল্লার দোকানে নিচ্ছেন। চার-পাঁচ দিন ধরে ছোটবড় প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ গাছ কাটা হয়েছে।
আসাদ মোল্লা বলেন, ‘সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে আমি শুধু খড়ি (জ্বালানি কাঠ) কিনছি। গাছের গুঁড়ি তিনি বিক্রি করবেন। তাঁর কথামতো আমি শ্রমিক লাগিয়ে গাছ কাটছি।’
বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় সামাজিক বনায়ন সমিতির লাগানো গাছ কেটে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
সামাজিক বনায়নের ওই গাছগুলো দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত মাগুরা বন বিভাগের কর্মকর্তা (ফরেস্টের) মোহদ্দীন হোসেন জানান, সামাজিক বনায়নের গাছ অন্য কারও কাটার সুযোগ নেই। সিরাজুল ইসলাম অন্যায়ভাবে গাছগুলো কেটে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে ইউএনও মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমি ফোনে বিষয়টি জেনেছি। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

No comments

Powered by Blogger.