লোকসানের বৃত্তেই বিমান ১৯ বছরে মাত্র চারবার লাভ

লোকসানের বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে বিমান। নিম্নমুখী যাত্রী সেবার কারণে ধীরে ধীরে অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে জাতীয় পতাকাবাহী এ বিমান সংস্থাটির ভবিষ্যৎ। গত পাঁচ অর্থবছরে বিমানের লোকসান হয়েছে প্রায় এক হাজার ৪৬২ কোটি ৭৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে গত শনিবার জাতীয় সংসদে দেয়া তথ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানান, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৯৮ কোটি ৮০ লাখ ৫৩ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। এ ছাড়া ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৯১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৫৯৪  কোটি ২১ লাখ ও ২০১০-১১ অর্থবছরে ২২৪ কোটি ১৬ লাখ লোকসান দিয়েছে বিমান। এদিকে গত ১৯ বছরে মাত্র চার বছর লাভের মুখ দেখেছে বিমান। সর্বশেষ এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুই বছর লাভের মুখ দেখেছে তারা। এর মধ্যে ২০০৩-০৪ সালে তিন কোটি ৫০ লাখ, ২০০৭-০৮ সালে পাঁচ কোটি ৯১ লাখ এবং ২০০৮-০৯ সালে ১৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা লাভ করে প্রতিষ্ঠানটি। বিমানের লোকসানের বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৯৯০ সালের পর বিমানের লোকসানের প্রবণতা বেড়েছে। বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আধুনিকায়নের কর্মসূচি চলছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জ্বালানি সাশ্রয়ী অত্যাধুনিক বোয়িং বিমান বহরে যোগ হয়েছে। বাদ পড়েছে চারটি পুরনো ডিসি-১০ উড়োজাহাজ। আগামী নভেম্বরে আরও দুই বোয়িং যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। নতুন বোয়িংগুলো বিমান বহরে যোগ হওয়ায় বেড়েছে যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা। তবে নতুন নতুন বোয়িং যোগ হলেও লোকসান যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। জাতীয় পতাকাবাহী এ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বিমানের ১৯টি আর্ন্তজাতিক রুটের মধ্যে অন্তত নয়টি এখন লোকসানি। বাকি ১০টি রুটের মধ্যে তিনটিতে মাঝে মধ্যেই লোকসান হচ্ছে। লোকসানের কারণে ২০০৬ সালে বিমান কর্তৃপক্ষ ফ্রাংকফুর্ট, নারিতা, ম্যানচেস্টারসহ আটটি রুট বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সম্প্রতি আবার ফ্রাংকফুর্ট ফ্লাইট চালু হয়েছে। বাণিজ্যিক সুবিধার কথা ভেবে চালু করা হয়েছে ইয়াংগুন ফ্লাইট। কিন্তু জনপ্রিয় নয় বলে এই দুটি রুটে পুরোপুরি লোকসান দিচ্ছে বিমান। এদিকে ইউরোপের মধ্যে লন্ডন ফ্লাইটও ক্রমেই যাত্রী হারাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে ভাড়া কম রেখেও এই রুটে লোকসান গুনছে বিমান। গত ডিসেম্বরে বিমানের লন্ডন ফ্লাইটের ভাড়া ছিল এক হাজার ২৩১ ডলার (ইকোনমি ক্লাস) ও দুই হাজার ২১৫ ডলার (বিজনেস ক্লাস)। একই সময় একই রুটে বাড়তি ভাড়া গুনেও লাভ করেছে এমিরেটস এয়ারলাইনস। তাদের ভাড়া যথাক্রমে দুই হাজার ৭৭৭ ডলার (ইকোনমি) ও এক হাজার ১৬৯ (বিজনেস) ডলার। কারণ তাদের রয়েছে আরামদায়ক ভ্রমণের পেশাদার সেবা। এদিকে লোকসানের কারণ চিহ্নিত করতে গিয়ে বিমান দেখেছে, ইন-ফ্লাইট সার্ভিসে নানা সমস্যার কারণে যাত্রী সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া খাবার ও পানীয়ের মান খুবই খারাপ। টয়লেট থাকে নোংরা। ট্রানজিট বা বিলম্বিত যাত্রীদের বিমান কর্তৃপক্ষ  মোটেও দেখভাল করে না। ওই তুলনায় কিছুটা বেশি ভাড়া গুনেও অন্য এয়ারলাইনসে আরামদায়ক ভ্রমণ সম্ভব। প্রতি বছর লোকসানের কারণ জানতে চাইলে বিমানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, বিশ্বের কোন দেশের রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ বিমানের মতো চড়া দামে জেট ফুয়েল কেনে না। এয়ার ইন্ডিয়াও বিমানের তুলনায় অনেক কম দামে জেট ফুয়েল কিনতে পারে। এসব কারণে বিমানের ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৪৯ শতাংশ অর্থই এখন ব্যয় হচ্ছে জেট ফুয়েলের জন্য। ফলে কিছুতেই লাভে যেতে পারছে না বিমান। তিনি বলেন, যথাযথ রুটবিন্যাস না করায় ফ্রাংকফুর্টসহ বেশ কয়েকটি রুটে টানা লোকসান হচ্ছে। নানা খাতের অপচয় ও দুর্নীতির কারণেও লোকসান হচ্ছে। অপচয়-দুর্নীতি রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.