ডায়েট ও স্বাস্থ্যকর চর্বি by অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী

সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্যবিধি কি  হওয়া উচিত এ নিয়ে অনেক আলোচনা ইদানীং হচ্ছে বিজ্ঞানী মহলে। খাদ্যের প্রসঙ্গে যদি বলা হয়, তাহলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো আমরা যে পরিমাণ এনার্জি খরচ করি আর অর্জন করি এদের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা। শুয়ে-বসে থাকা জীবন বাদ দিতে হবে। জীবন হবে সক্রিয়, সচল। চলতে হবে, হাঁটতে হবে বেশি। এ জন্য কোন ওজর-আপত্তি, বৃথা অজুহাত চলবে না। আর যেসব খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল, সেগুলো খেতে হবে। মানুষ সবসময় খুব উদ্বেগে থাকে, কি চর্বি খাবো? আজকাল ডায়েটিশিয়ান নিউট্রিশনিস্টরা ডায়েট সম্বন্ধে যে পরামর্শগুলো দিচ্ছেন, যেসব ধারণার পরিবর্তন হয়েছে, সে ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়ানোর কথা বলছেন।
যেমন ২০১৫ সালে ডায়েট গাইডলাইনে কিছু বিস্ময় আছে। যেসব খাদ্যের ব্যাপারে সীমিত করার কথা ছিল এখন এ ব্যাপারে অনেক উদার বিশেষজ্ঞরা। ডিম মন্দ এমন কথা ঠিক না। কফিও দু’এক কাপ চলতে পারে প্রতিদিন। অবশ্য তারা জোর দিয়েছেন উদ্ভিজ খাবার খাওয়ার জন্য, সবজি, শাক, ফল, মোটা শস্য, লেটুস, বাদাম ও বীজ। কোলেস্টরোলকে ভিলেন আখ্যা দিতে তারা নারাজ। তারা বলছেন কোলেস্টরোল নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তার কোন হেতু নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, খাদ্যের কোলেস্টরোল রক্তে কোলেস্টরোল বাড়ানোর ব্যাপারে তেমন জোরালো ভূমিকা রাখে না। বরং চিনি কম খাওয়ার ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে। আমাদের বরং স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং আঁশ খাওয়ার ব্যাপারে নজর দিতে বলা হয়েছে।
জলপাই তেল স্বাস্থ্যকর তেল, কিন্তু এই তেল একা স্বাস্থ্যকর তাও নয়।
পাম তেলকে নানা কারণে স্বাস্থ্যকর বলা হচ্ছে। অনেক খাদ্যদ্রব্যে এটি প্রয়োজনীয় উপকরণ। এই স্বাস্থ্যকর তেল রক্তের কোলেস্টরোলও বজায় রাখে। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ই’। নতুন ডায়েট গাইডলাইন নীতিতে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ই’ কে শরীরে কম যাচ্ছে এমন বলেছেন, তাই পাম তেল দেহের এ চাহিদা পূরণে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। উদ্ভিজ খাদ্য শ্রেয়তর ও স্বাস্থ্যকর, পরিবেশবান্ধবও বটে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নানা দেশে তেলপামবৃক্ষের তাজা ফলের গোছাকে পেড়ে, জোরে ছেঁচে এ তেল বের করা হয়।
পাম তেলে খুব বেশি আছে যে ভিটামিন ‘ই’ একে নিয়ে হবে আজকের আলোচনা।
ভিটামিন ‘ই’ দুই রকমের: টকোফেরোল ও টকোট্রাইনোল। পামতেল হলো শক্তিশালী ও হিতকরী ভিটামিন ‘ই’ টকোট্রাইনোলের শ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক উৎস। যকৃতের ওপর টকোট্রাইনোলের বিশেষ হিতকরী গুণের কথা এখন জানা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন ওষুধের কারণে যকৃতের ক্ষতি হয় এ থেকেও রক্ষা করে টকোট্রাইনোল। আমরা জানি, যকৃৎ দেহের সব বিষাক্ত পদার্থ নির্বিষ করে। দেখা গেছে এক ধরনের ভিটামিন ‘ই’ খুব বেশি হিতকর। আট ধরনের ভিটামিন ‘ই’ রয়েছে। চারটি হলো টকোফেরোল এবং চারটি হলো টকোট্রাইনোল। আলফা টকোফেরোল আছে ভিটামিন সাপ্লিমেন্টে। পামফলে রয়েছে প্রকৃতিজাত টকোট্রাইনো।
স্বাস্থ্যহিত যা যা হয়:
স্নায়ু সুরক্ষা: স্ট্রোকের আঘাত জমাতে আলফা-টকোট্রাইনোল কার্যকর। শোষণ হয় শরীরে সহজে। মুখে খেলে আলফা টকোট্রাইনোল সবচেয়ে বেশি শোষিত হয়।
লিভার সাপোর্ট: টকোফেরোল ও টকোট্রাইনোল দুটো একসঙ্গে  দিলে নন অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাইটিস (ঘঅঝঐ) নামে রোগে বেশ উপকার হয়।
হৃদস্বাস্থ্য: গামা টকোট্রাইনোল ও ডেল্‌্‌টা টকোট্রাইনোল কোলস্টেরোল কমাতে বেশ পটু।
খাদ্যে তাই পাম তেল যোগ করলে অনেক স্বাস্থ্যহিত।

No comments

Powered by Blogger.