খালেদা জিয়া সবক্ষেত্রে ব্যর্থ :সংসদে মন্ত্রী-এমপিরা

প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করেছেন সরকারদলীয় মন্ত্রী ও এমপিরা। তারা বলেন, ২০১৯ সালের আগে নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। ওই নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ফাঁকা মাঠে গোল নয়, ওই নির্বাচনে আপনার সঙ্গে লড়াই হবে। নির্বাচনের মাঠে আপনাকে ওয়াইটওয়াশ করা হবে। গতকাল সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন। প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় ১১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘মাধ্যমিক শিক্ষায় কোন কাজ হয়নি, অগ্রগতি নেই।’ যা আমাদের বিরোধীরাও বলে না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, শিক্ষা নিয়ে আমরা কি তুলনা করবো আমেরিকার সঙ্গে, নাকি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে কী ছিল তার সঙ্গে? আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শিক্ষা খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, আন্দোলন, নির্বাচন ও রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে খালেদা জিয়া পরাজিত হয়েছেন। সবকিছু হারিয়ে তিনি এখন ইফতার মাহফিলে মোনাজাত করতে গিয়ে বলেছেন, এ সরকারের ওপর গজব নাজিল হোক! কি নীচ তিনি, ভাবতেও অবাক লাগে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঘরে ফিরে যাবেন না। কিন্তু দেশের মানুষসহ পুরো বিশ্ব অবাক তাকিয়ে দেখলো- তিনি পরাজিত হয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে শূন্য হাতে ঘরে ফিরে গেলেন। খালেদা জিয়াকে প্রশ্ন করি, এখন কোথায় আমার মায়েরা, বোন, ট্রাক ড্রাইভাররা। কেন তাদের পুড়িয়ে হত্যা করলেন? এর জবাব তিনি কী দেবেন? খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে যেভাবে মানুষকে হত্যা করেছেন, একদিন তাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া প্রতি পদে পদে ভুল করছেন আর আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই আপনি রাজনীতির মাঠে থাকুন, ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে আপনার সঙ্গে ফাইনাল খেলা হবে। আমরা ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চাই না, আপনার সঙ্গে মাঠে খেলেই জিততে চাই। ওই নির্বাচনে আপনাকে হোয়াইটওয়াশ করা হবে। তাই আমরা চাই আপনি সুস্থ থাকুন। আর সমঝোতা হবে, তবে কোন খুনি, ঘাতকের সঙ্গে নয়। খুনি-ঘাতকের জন্য গণতন্ত্র হবে না, তাদের সঙ্গে কোন আপসও হবে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যেভাবে কথা বলছেন, তা গণতন্ত্রের ভাষা নয়। তিনি বর্তমান সরকারকে জালেম বলেন, কিন্তু খালেদা জিয়ার মতো বড় জালেম এ দেশে আর কেউ নেই। আপনার স্বামী জেনারেল জিয়া, এরশাদ সরকার ও আপনি খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন, কেউ বিচার করেননি। ২১ বছর আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে আমাদের সেই রক্তক্ষরণ বন্ধ করেছেন, খুনিদের বিচার করেছেন, রায়ও কার্যকর করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো বিশ্ব নেতারাও স্বীকার করছেন, সন্ত্রাস-জঙ্গি কীভাবে দমন করতে হয়, তা শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিখতে হবে। তিনি স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দের দাবি জানান। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দের অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরে বলেন, শিক্ষা খাতে উন্নয়নের জন্য দরকার ১৬ হাজার কোটি টাকা অথচ দেয়া হয়েছে মাত্র ৪ হাজার কোটি। এ দিয়ে বেতন দেবো নাকি অবকাঠামো উন্নয়ন করবো? এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমাদের জাতীয় উন্নয়নের ৬ ভাগ শিক্ষা খাতে ব্যয় করার দরকার। অথচ এবার বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৩ ভাগ, যা সর্বোচ্চ বরাদ্দকৃত মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অষ্টম। যেখানে ঘাণা, কেনিয়ার মতো গরিব দেশে দেশে শিক্ষা খাতে ব্যয় করা হয় ৩১ ভাগ, সেখানে আমাদের ব্যয়মাত্র মাত্র ৪ দশমিক ৩ ভাগ। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বেড়েছে বিগত সময়ের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ। বর্তমানে আমাদের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫ কোটি ৫২ লাখ। আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী তামাকের ওপর কর বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে শুধু তামাকের কারণে প্রতি মিনিটে দুজন, প্রতি ঘণ্টায় ২৮ জন, প্রতিদিন ৬৮০ জন অর্থাৎ এক বছরে আড়াই লাখ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটছে। আমরা পাহাড় ধস, রানা প্লাজা কিংবা সড়ক দুর্ঘটনার কথা বলি, কিন্তু তামাকের কারণে এত বিশালসংখ্যক মানুষের মৃত্যু নিয়ে কিছু বলি না। পুরো বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্যের দাম সস্তা। তাই তামাকের ওপর অধিক করারোপের মাধ্যমে ব্যবহার কমাতে পারলে অকালমৃত্যু হ্রাস, তামাকজনিত অসুস্থতা-রোগমুক্ত, চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস এবং সরকারের আয় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, সারাবিশ্বে যেখানেই সন্ত্রাস-জঙ্গি দমন এবং নারীর ক্ষমতায়নের কথা ওঠে, সেখানেই বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার নাম আসে। পুরো বিশ্বে সন্ত্রাস দমন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ নেতৃত্বের অবস্থানে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মিথ্যাচার ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতির কারণে বিএনপির নেতাকর্মীরাও তার সঙ্গে নেই। আমরা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সব মিথ্যাচারের জবাব দেবো।
আজ শেষ হচ্ছে বাজেট আলোচনা: আজ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে প্রায় এক মাস ধরে চলা প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শেষ হবে। এর আগে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের বক্তব্য রাখবেন। আগামীকাল জাতীয় সংসদে পাস হবে প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট।

No comments

Powered by Blogger.