বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বলা হয়েছে, সরকারি হয়রানি ও প্রতিশোধের ভয়ে অনেক সাংবাদিক নিজেরাই সরকারের সমালোচনামূলক লেখা সেন্সর করেন। সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ বলে দাবি করেছে তারা। তা ছাড়া ব্যাপক আকারে দুর্নীতির সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তার ও আটক রাখার সমালোচনা করা হয়েছে। গত বছর ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনকে বিতর্কিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে পারে নি। বিশেষ করে সমালোচনা করা হয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, অনেকাংশে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। সিলেটে অনিতা ভট্টাচার্যের ওপর নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের নির্যাতনের ঘটনারও সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টারও পরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালের ঘটনাবলি নিয়ে বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্ট প্রকাশ করে। বিশ্বের ১৯৯টি দেশের ওপর ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বাংলাদেশ অধ্যায়ে গত বছর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি কেমন ছিল, তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, কয়েক মাসের রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সহিংসতার পর গত বছর ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন। বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও তার মিত্র জোট ওই নির্বাচন বর্জন করে। তারা সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। ওই নির্বাচনে জাতীয় সংসদের অর্ধেকেরও বেশি আসনে নির্বাচিত হন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ওই নির্বাচনকে বিতর্কিত হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তারা বলেন, বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জনের ফলে তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। রিপোর্ট প্রকাশের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তার পরই প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী টম মালিনোস্কি। তার কাছে বাংলাদেশের সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল জানতে চান- এ রিপোর্টের জন্য সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে ধন্যবাদ। আমি মুশফিকুল ফজল। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আমার প্রশ্ন। আপনি কি মনে করেন যে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সন্তোষজনক? বাংলাদেশ যেহেতু গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং জনগণের অধিকার নিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তার প্রশ্নের জবাবে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী টম মালিনোস্কি বলেন, বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনি নিশ্চয়ই রিপোর্টটা পড়বেন। আমি এখন যেটা বলতে পারি তা হলো- ২০১৪ সালের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তি থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা, নাগরিক সমাজের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছি আমরা। রাজনৈতিক অচলাবস্থার শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং সহিংসতা বন্ধে আমরা তাদের আহ্বান জানিয়েছি। এ সহিংসতায় দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হয়েছে। নিরপরাধ মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে সহিংসতা ব্যবহার নিয়ে আমরা অত্যন্ত শক্ত ভাষায় নিন্দা জানিয়েছি। একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আয়োজনের সুযোগ দেয়ার বিষয়ে সরকারের দায়িত্বের কথাও বলেছি। আইনশৃঙ্খলার প্রতি হুমকিগুলোর প্রতি যথাযথ মাত্রার শক্তি ব্যবহারের কথাও আমরা সরকারের কাছে তুলে ধরেছি।
মানবাধিকার বিষয়ে ওই রিপোর্টে বাংলাদেশে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতন, খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তার, আটক রাখার বিষয় তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে একজন সুপরিচিত স্থানীয় এক রাজনীতিকসহ সাতজনকে প্রকাশ্যে অপহরণ ও হত্যার বিষয় তুলে ধরা হয়। বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলার প্রতি দুর্বল শ্রদ্ধা থাকায় বাংলাদেশে ব্যক্তিবিশেষ, সরকারি কর্মকর্তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন। এ ক্ষেত্রে তাদের দেয়া হয় দায়মুক্তি। ওই রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতা থামে নি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে গত বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর সময়কালে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১২৪ জন নিহত ও ৬০৮৭ জন আহত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আন্তঃকোন্দলে সৃষ্ট সহিংসতা ঘটেছে ৭৭টি। এতে নিহত হয়েছেন ২২ জন ও আহত হয়েছেন ৯৯৬ জন। বিরোধী দল বিএনপিতে এ রকম ঘটনা ঘটেছে ১৩টি। এতে তিনজন নিহত ও ৮৩ জন আহত হয়েছেন। রাজনৈতিক কারণ বাদে এর বেশির ভাগই ঘটেছে অপরাধবিষয়ক ঘটনায়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও ঘটেছে অনেক সহিংসতা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে নীলফামারীতে বিএনপি ও জামায়াতের একদল সমর্থক আওয়ামী লীগের নেতা আসাদুজ্জামান নূরের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ আছে। আসাদুজ্জামান নূর বর্তমানে সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী। ওই হামলায় নূর রক্ষা পেলেও অন্য ৫ জন নিহত হন। নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় অধিবাসীরা রাস্তার পাশে, ভবনের পাশে তিনজনের মৃতদেহ দেখতে পান। এরা নূরের ওপর হামলার মূল সন্দেহভাজন। এর মধ্যে দুটি মৃতদেহের শরীরে ছিল বহু আঘাতের চিহ্ন। তৃতীয়জনের শরীরে একটিমাত্র গুলির চিহ্ন ছিল। সংবিধান ও আইনে নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা, অমানবিক ও মর্যাদাহানিকর আচরণ ও শাস্তি নিষিদ্ধ থাকলেও স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠনগুলো ও স্থানীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, র‌্যাব, পুলিশসহ নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্যাতন, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করেছে হুমকি, প্রহার ও বৈদ্যুতিক শক। এমনকি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা কোন কোন সময়ে ধর্ষণ করেছে ও যৌন নির্যাতন করেছে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের মতে, নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছরের প্রথম ৯ মাসে নির্যাতন করায় মারা গেছেন ১০ জন। এর জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে সরকার অভিযোগ গঠন করেছে বা অভিযুক্ত করেছে বা শাস্তি দিয়েছে- এমন ঘটনা বিরল। ওই প্রতিবেদনে দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট তুলে ধরা হয়। বলা হয়, সিলেটে একটি শিশু অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে গত বছর ৭ই নভেম্বর পুলিশ গ্রেপ্তার করে অনিতা ভট্টাচার্য নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়। পুলিশের কাছে তার স্বামী অভিযোগ করেছেন, রিমান্ডের সময় কোতোয়ালি থানা পুলিশ ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম ও সাব-ইন্সপেক্টর হাসিনা আখতার আঁখি মদপান করতে বাধ্য করে অনিতাকে। এ ক্ষেত্রে তারা পাইপ ব্যবহার করে তাকে মদপান করায়। তখন অনিতার গলায় বুুট দিয়ে চেপে ধরে মনিরুল ইসলাম। অন্যদিকে হাসিনা আকতার আঁখি তার যৌনাঙ্গে লাঠি দিয়ে নির্যাতন করে। তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় ওই থানা থেকে ওসি মনিরুল ইসলাম ও হাসিনা আকতার আঁখিকে প্রত্যাহার করে। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, মার্চ মাসে পিরোজপুরের নাজিরপুরে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর এক টিনেজ ছেলে ও একটি মেয়েকে নগ্ন হতে বাধ্য করে। বাধ্য করে অশালীন পোজ দিতে। এরপর সেই দৃশ্য ধারণ করে মোবাইল ফোনে। এরপর পুলিশের ওই কর্মকর্তা ওই টিনেজ মেয়েকে ধর্ষণ করে। ওই সাব-ইন্সপেক্টর ও অন্যরা এরপর ওই দুই টিনেজকে বিয়ে করতে বাধ্য করে। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জেলের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জেলখানায় বন্দিতে উপচে পড়ছে। সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। অতিরিক্ত বন্দি রাখায় জেলখানার পরিবেশ হয়ে উঠেছে জীবনের জন্য হুমকি। নেই যথাযথ পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। অধিকারের মতে, এসব অবস্থার কারণে নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অধিকারের মতে, সেপ্টেম্বরে নিরাপত্তা হেফাজতে মারা গেছেন ৩৯ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে ৩০শে জুন পর্যন্ত এমন মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের। মিডিয়া ও মানবাধিকারবিষয়ক পর্যবেক্ষকদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, অক্টোবরে জেলখানায় বন্দি ছিল ৬৫ হাজার ৬৬২। দেশের ৬৮টি জেলখানার ধারণক্ষমতা এ ক্ষেত্রে ৩৪ হাজার ১৬৭। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর প্রিজন স্টাডিজের হিসাবে, বন্দিদের মধ্যে শতকরা ৬৯ ভাগকেই আটক রাখা হয়েছে বিচারের আগে অথবা তাদের বিচার চলছে। জেলখানায় অতিরিক্ত বন্দি রাখায় সেখানে বন্দিরা শিফট করে ঘুমায়। নেই পর্যাপ্ত টয়লেট সুবিধা। সব বন্দির রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা পানি পাওয়ার অধিকার। মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থাগুলো ও মিডিয়া বলছে, অনেক বন্দিই এ সুবিধা পায় না। জেলখানার ভেতর অথবা একই ভবনে যে জেলখানাগুলো রয়েছে সেখানকার পরিস্থিতিতে ভিন্নতা দেখা যায়। কোথাও তাপমাত্রা অনেক বেশি। নাজুক ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। আর রয়েছে বন্দিতে ঠাসা। অনেক ক্ষেত্রে কিশোর অপরাধীকে রাখা হয় বয়স্কদের সঙ্গে। নিয়মিতভাবে কর্তৃপক্ষ পুরুষ ও নারী বন্দিকে আলাদা রাখে। আইন অনুয়ায়ী নারীদের (যারা ধর্ষিতা, পাচারের শিকার, সংসারে নির্যাতিত) অপরাধী নারীদের থেকে আলাদা রাখার কথা। কিন্তু কর্মকর্তারা সব সময় তাদের আলাদা রাখে না। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস বা অন্য স্বতন্ত্র কোন মানবাধিকারবিষয়ক পর্যবেক্ষককে জেলখানা পরিদর্শনের অনুমতি দেয় না সরকার। তবে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে শুধু বিদেশী বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয়। মাসে জেলখানা পরিদর্শনের জন্য সরকার একটি কমিটি করে দেয়। কিন্তু ওই কমিটি কি দেখতে পেয়েছে তা প্রকাশ করা হয় না। কোন কোন সময় জেলা জজরাও জেলখানা পরিদর্শন করে থাকেন। বাংলাদেশে পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তাদের। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করা। কিন্তু প্রয়োজনে সিভিল অথরিটির সহায়তায় তারা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করে। কোন ব্যক্তিকে ৩০ দিন আটক রাখার ক্ষমতা আছে সরকার বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের। এতে জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কোন কোন সময় কর্তৃপক্ষ বন্দিকে দীর্ঘ সময় আটক রাখে। একজন ব্যক্তিকে কেন আটক করা হয়েছে তা ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে বাধ্য একজন ম্যাজিস্ট্রেট। নিয়ম অনুযায়ী একজন বন্দির মামলা যাচাই করার জন্য চার মাস পরে একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকতে হবে। খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক প্রতিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগেও গ্রেপ্তার করা হয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াাই সরকার আটক করে। কখনও কখনও এর উদ্দেশ্য তার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা। গত বছর একটি জনসভায় জাতীয় নির্বাচনকে প্রহসন বলার সামান্য পরেই ৭ই জানুয়ারি পুলিশ গ্রেপ্তার করে বিএনপির অন্যতম উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেনকে। তিনি একজন সুপরিচিত অ্যাটর্নি। ২০১৩ সালের এক প্রতিবাদ সমাবেশের সময়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। ৩রা ফেব্রুয়ারি তাকে জামিন দেয়া হয়। পরে খন্দকার মাহবুব হোসেনের ঘটনার সঙ্গে কোন সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না পেয়ে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পুলিশ প্রত্যাহার করে আগস্টে। জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা সিটি ইউনিটের সহকারী সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয় ১০ই আগস্ট। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১৩ সালে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে আটক অন্য ১৫৪ জনের সঙ্গে রাখা হয় তাকে। তাকে ২০১৪ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে চারবার গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সুপরিচিত একজন মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী বলেছেন, আটক রাখা অবস্থায় মাসুদকে কোথায় রাখা হয়েছে তা ছিল অজানা। তার সঙ্গে আইনজীবীদের সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয় নি। তার আইনজীবীদের তার সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয় নি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জেল কর্তৃপক্ষ স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়কার অপরাধে ফাঁসি কার্যকর করে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার। তবে এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করা হয়। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশী আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তাকে অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইন সংশোধন করে বিবাদীদের আপিল করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। এরপর তাদের আপিলে সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশন কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তিকে বাড়িয়ে তার ফাঁসির রায় দেন। যদিও কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশনের অধিকারের বিষয়টি আদালত গ্রহণ করেন। সেপ্টেম্বর মাসে ২০১৩ সালে মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। এ সময় তাদের আরও সতর্ক হতে বলা হয। স্বাধীনতাযুদ্ধে অপরাধীদের বিচার চলতেই থাকে। নভেম্বর পর্যন্ত কোন রায় দেয়া হয় নি। এ সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আলাদা আলাদা মামলায় জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে। একই সময়ে জামায়াতের আরেক নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশন। এসব ঘটনায় জামায়াত দেশজুড়ে হরতাল আহ্বান করে। বিরোধীদলীয় নেতাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই রাজনৈতিক কারণকে ব্যবহার করা হয়েছে। সরকার কিন্তু ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অভিযোগের বিচার শুরু করে নি। সিভিল জুডিশিয়াল ব্যবস্থায় দুর্নীতি ও বাইরে থেকে প্রভাব বিস্তার বড় সমস্যা। ১৯৭৪ সালের অপদখলীয় সম্পত্তি আইনে অধীনে যারা জমি হারিয়েছেন, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে কোন পদক্ষেপ নেয় নি সরকার। ওই রিপোর্টে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, সংবিধান মতপ্রকাশ ও মিডিয়ার স্বাধীনতা দিলেও অনেক ক্ষেত্রে সরকার এসব অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। মুক্ত মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। সরকারের হয়রানি ও প্রতিশোধের ভয়ে অনেক সাংবাদিক সরকারের সমালোচনায় সেলফ সেন্সরশিপ মেনে চলেছেন। ওই প্রতিবেদনে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বলা হয়, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে যারা তাতে সরকার যুক্ত থাকায় ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে প্রধান বিরোধী দল। এতে সংসদের অর্ধেকের বেশি আসনে প্রার্থী নির্বাচিত হন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এ ছাড়া অনেক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নামমাত্র। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অনেক ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন নি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। বিরোধী দল তাদের দাবি মেনে নিতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি হয়ে ওঠে উত্তেজনাপূর্ণ। নিরপেক্ষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা প্রত্যক্ষ করেছেন নির্বাচনী কেন্দ্রে কমপক্ষে ১০০ সহিংসতা। কোন কোন ক্ষেত্রে ভোটারদের বাধা দেয়া হয়েছে। আবার ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৫ আসন নিয়ে ক্ষমতা ফিরে পান। নির্বাচন বর্জন করায় পার্লামেন্টে বিএনপির কোন আসন নেই। এতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। তাদের রয়েছে ৩৬টি আসন। তারা ক্ষমতাসীন জোটের শরিক। সরকারকে সমর্থন করে এমন দলগুলো অর্জন করে বাকি আসনগুলো। শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিসভায় স্থান দেন অন্য দলের প্রতিনিধিদের। অনেক সূত্র জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ৫ দফায় অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় নির্বাচন। এতে দেখা দেয় সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন ও অনিয়ম। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ব্যালটবাক্স পূর্ণ করছে, এমন ছবি অনেক পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। দলনিরপেক্ষ সংগঠন বাংলাদেশ ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ এ নির্বাচনের মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা এতে ব্যাপক জালিয়াতি, সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের কথা বলেছে। এতে বলা হয়, বিএনপির বর্জনের কারণে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। যেসব আসনে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে নির্বাচন কমিশন শতকরা ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে বলে দেখিয়েছে। অথচ ২০০৯-এর নির্বাচনে ভোট পড়েছিল শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি। কোন ভোটারই ১৫৩ আসনের নির্বাচনে কোন ভোট দেন নি। কারণ, সেখানে মাত্র একজন প্রার্থীই ছিলেন। অনেক ক্ষেত্রেই সরকার বিরোধী দলকে জনসভা করতে দেয়ার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করেছে। বিরোধী দলের কোন সভা-সমাবেশের খবর সম্প্রচারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত দেয়। তার বিরুদ্ধে আপিল করেছে জামায়াত। তা এখনও অব্যাহত আছে। রিপোর্টে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বলা হয়, আইন অনুযায়ী স্বতন্ত্র বিচারব্যবস্থা থাকার কথা। তবে, সংবিধানের একটি ধারায় নিম্ন আদালতের বিচারিক নিয়োগের ওপর নির্বাহী শাখার কর্মকর্তাদের এখতিয়ার দিয়েছে। এতে বিচারবিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে। পাল্টা জবাব হিসেবে অন্যত্র বদলি হওয়ার রিপোর্ট করেছেন কয়েকজন বিচারক। সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী সংসদদকে হাইকোর্ট বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা দিয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে এটা পাস হয়। নভেম্বর পর্যন্তও বাস্তাবায়নের আইন লেখা হয়নি। আর অন্তত একটি আইনি চ্যালেঞ্জ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
দুর্নীতি আর জমে থাকা অনেক মামলার কারণে আদালতের বিচার প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হচ্ছে। আর বর্ধিত দীর্ঘসূত্রতা কার্যত বিচারপ্রার্থী অনেকের ন্যায় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে সাক্ষীদের ওপর প্রভাব বিস্তার, অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং তথ্যপ্রমাণ গায়েব হয়ে যাওয়া। মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা বলছেন ম্যাজিস্ট্রেট, আইনজীবী আর আদালত কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ দাবি করে থাকে। সমাবেশ করার স্বাধীনতা নিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, সরকার সাধারণত সভা সমাবেশের অনুমতি দিয়ে থঅকে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে সভা সমাবেশ আয়োজনে বাধা দিয়েছে। আইন সরকারকে চার জনের বেশি ব্যক্তির জমায়েত হওয়া নিষিদ্ধ করার সুযোগ দেয়। প্রতিবাদ ও সমাবেশ আয়োজন করার আগ দিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মানবাধিকার এনজিওদের মতে কর্তৃপক্ষ এ ধারাটি ক্রমাগতভাবে বেশি ব্যবহার করেছে। প্রায়ই পুলিশ বা ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা বলপ্রয়োগ করে সমাবেশ ভেস্তে দিয়েছে। ৩রা মে, সংসদ ভবনের সামনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধন বন্ধ করে দেয়া পুলিশ। প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজকরা বলেছেন, তারা এর অনুমতি নিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে লিখেছিল। এর আগের প্রতিবাদ কর্মসূচিগুলোর জন্য অবশ্য তাদের সেটা করতে হয়নি। পুলিশ তাদের ব্যানার জব্দ করে নেয়। ওই ব্যানারগুলোতে ন্যায়বিচারের আহ্বান জানানো হয়েছিল কোন সরকারবিরোধী বিষয়বস্তু ছিল না। ২২শে মে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিএনপির একটি সভা করতে পুলিশ বাধা দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি অডিটোরিয়াম বন্ধ করে দেয় পুলিশ। অংশগ্রহণকারীদের প্রবেশ করতে না দেয়ায় সভা বাতিল করা হয়। গণমাধ্যম রিপোর্টে বলা হয়, পুলিশের দাবি ওই সভা করার অনুমতি বিএনপির ছিল না। তবে বিএনপির মুখপাত্র বলেছেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ অডিটোরিয়ান আটকে রাখার কোন কারণ দেখায়নি। বিএনপির এক সদস্য বলেছেন, অক্টোবর মাসের শুরু থেকে কর্তৃপক্ষ তাদের দলের সমাবেমশের অনুমতি প্রত্যাখ্যান করেছে  কমপক্ষে ২০ বার। অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ যখন অনুমতি দিয়েছে তখন সমাবেশ আয়োজন করার মতো সময় ছিল না। সরকারে দুর্নীতি এবং স্বচ্ছতার ঘাটতি প্রসঙ্গে বলা হয়, আইনে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির জন্য সাজার বিধান রয়েছে। কিন্তু সরকার এ আইন কার্যকরীভাবে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো, গণমাধ্যম, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং অন্যান্য সংগঠন সরকারের দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করেছে। কর্মকর্তরা প্রায়ই দুর্নীতিমূলক চর্চায় লিপ্ত হয়েছে এবং এসব অপরাধ থেকে দায়মুক্তি পেয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থা দুদক। ২০১০ সালের বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকার দুদকের কাজ খর্ব করেছে আর  দুর্নীতি মোকাবিলায় সংস্থাটির কাজ ব্যাহত করেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ জাতিসংঘের একটি রিপোর্টের উদ্ধৃত করে বলেছে ২০১১ সালে সরকার দুদককে ১০,৫৩৬ টি মামলা প্রত্যাহার করতে বলেছে। ১৬তম সংবিধান সংশোধনী সংসদীয় অভিশংসন ক্ষমতা বর্ধিত করে নিয়ে গেছে দুদক, নির্বাচন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশ (এনএইচআরসি) এবং অন্যান্য সাংবিধানিক কমিশন পর্যন্ত। নাগরিক সমাজের অনেকে বলেছেন যে সরকার দুর্নীতি মোকাবিলায়  আন্তরিক নয়। আর তারা দুদককে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় ব্যবহার করছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বলেছে, দুদকের কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সংস্থাটিকে ‘দন্তহীন বাঘ’-এ (টুথলেস টাইগার) পরিণত করেছে। ২০১৩ সালে দুদক আইন সংশধোনীতে আগাম সরকারি অনুমোদন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার কর্তৃত্ব দুদকের কাছ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা সেতু দুর্নীতি কেলেঙ্কারি নিয়ে সকল অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয় দুদক। কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলেছিল, তাদের তদন্তকারীরা দুর্নীতি তদন্তে অভিযুক্তদের জড়িত থাকার কোন তথ্যপ্রমাণ পায়নি। সরকার অনেক সময় বিচার ব্যবস্থার ওপর রাজনৈতিক চাপ দিয়েছে। আর বিরোধী নেতাদের সম্পৃক্ততা আছে এমন কিছু কিছু মামলার কার্যক্রম এগিয়েছে অনিময়িত রীতিতে। বিচারব্যাবস্থায় দুর্নীতি অব্যাহতভাবে গুরুতর একটি সমস্যা। আর বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সম্পদের হিসাব প্রকাশ প্রসঙ্গে বলা হয়, সংসদের প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের কাছে ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব দিয়ে থাকে। কিছু রাজনীতিক অজানা সূত্রে অর্জিত পুঞ্জিভূত অর্থ নিয়ে বলেছে সম্পদের হিসাবের এফিডেভিটে তারা ভুল করেছে। এরপর ওই রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রত্যাহার করে নেয় দুদক। বছরের প্রথম আট মাসে দুদক প্রায় ১৬০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রত্যাহার করেছে বা তাদের ছাড়পত্র দিয়েছে। এদের বেশির ভাগই রাজনীতিক বা সরকারের কর্মকর্তা।
মানবাধিকার লঙ্ঘন অভিযোগের আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি তদন্ত নিয়ে সরকারী দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়, বিস্তৃত পরিসরের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সাধারণত স্বতন্ত্রভাবে কাজ করেছে, তদন্ত পরিচালনা করেছে এবং মানবাধিকার ঘটনাগুলো নিয়ে তাদের প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার গ্রুপগুলো কখনও কখনও সরকারের কড়া সমালোচনা করলেও তারা একই সঙ্গে কিছু সেলফ সেন্সরশিপ চর্চা করেছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকর্তারা সাধারণত সহযোগিতামূলক ছিলেন না বা সাড়া দেননি। ২০১৩ সালে অধিকারের একটি রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর থেকে এখনও সরকার অব্যাহতভাবে তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। ওই রিপোর্টে হেফাজতে ইসলামের এক সমাবেশে মৃতের যে সংখ্যা বলা ছিল তা আনুষ্ঠানিক সংখ্যা ও অন্য ধারণা থেকে বেশি ছিল। ওই সমাবেশে সরকারি বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের বিষয়টি বিশ্বাস করেন অনেক স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষক। অধিকার সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান এবং প্রেসিডেন্ট নাসিরুদ্দিন এলান জামিনে মুক্তি পেলেও তাদের সংস্থার রিপোর্ট থেকে উদ্ভব হওয়া অভিযোগগুলো এখনও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। হয়রানি, আর্থিক হিসাবে তদন্ত এবং সংস্থার বিদেশী অনুদানে নিষেধাজ্ঞার বিষয়গুলো জানিয়েছে অধিকার। এছাড়াও হয়রানির শিকার হয়েছেন অধিকার কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা দাবি করেছেন তাদের টেলিফোন, ই-মেইল আর গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিত নজরদারি রাখছেন নিরাপত্তা কর্মীরা। বৈষম্য, সামাজিক নির্যাতন প্রসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়, আইনে নারীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু বৈষম্যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়াও আইনে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে নির্যাতনকারীদের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রক্রিয়া অনুসরণের কথা বলা আছে। রয়েছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান। অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বাধ্যবাধকতা। আর এসব ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলা করলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যর্থ হলে তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। তবে এসব আইনের প্রয়োগ ছিল বেশ দুর্বল। নারী, শিশু, সংখ্যালঘু, শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি, আদিবাসী ও সেক্সুয়াল মাইনরিটি প্রায়ই সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। এছাড়াও রিপোর্টে শ্রমিক অধিকার প্রসঙ্গে বিদ্যমান নানা প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭শে আগস্ট গ্লোবাল ট্রাউজার্স ফ্যাক্টরিতে লোহার রড দিয়ে এক নারী ইউনিয়ন অর্গানাইজারকে প্রহার করে মুখোশধারী ব্যক্তিরা। তার স্বামীকেও কারখানার বাইরে মারধর করা হয়। এতে করে ওই নারী কর্মী মাথায় আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ইউনিয়ন আয়োজকদের বক্তব্য অনুযায়ী, পুলিশ প্রাথমিকভাবে ওই দম্পতির অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এছাড়া রিপোর্টে শিশুশ্রম বন্ধের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.