রোহিঙ্গা সংকট ও শুমারি- মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর বিকল্প নেই

দুর্গত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের মানবিক আবেদনে সাড়া দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক ঘটনা। তবে রোহিঙ্গারা বোট পিপল হিসেবে সাম্প্রতিক কালে বিশ্ব গণমাধ্যমে ঝড় তোলার আগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগের বাইরেই ছিল। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যাতে এই বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ বাড়ে। তবে সরকারের ‘রোহিঙ্গাশুমারি’র উদ্যোগ ইতিবাচক। বহির্বিশ্বের কাছে সমস্যাটি তুলে ধরতে সঠিক তথ্য-প্রমাণ থাকা প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের একটি অংশের রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে এর অন্তর্নিহিত কারণ দূর করার আহ্বান তাৎপর্যপূর্ণ। চলতি সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির কাছে লেখা এক চিঠিতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান-দলীয় ২৩ কংগ্রেস সদস্য সমুদ্রে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার ‘সংকটের অন্তর্নিহিত কারণের’ প্রতি নজর দিতে মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তাঁদের এই মনোভাবকে আমরা স্বাগত জানাই। এই আহ্বানের পর এখন জাতিসংঘের মহাসচিব সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে সমস্যা সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেন। এটি লজ্জাজনক যে বিদেশে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণের জন্য বিশ্বসম্প্রদায় যতটা সোচ্চার, সে তুলনায় ওই মূল কারণ চিহ্নিত করা এবং সমাধানের বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে গেছে।
মিয়ানমার এর আগে ১৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিককে জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে ‘বিদেশি’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল, তখনো আমরা বিশ্ববিবেক জাগ্রত হতে দেখিনি। একটি জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এ ধরনের ঘোষণা কেবল জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী নয়, মানুষের জন্মগত অধিকারের প্রতিও চরম অবজ্ঞার শামিল। ‘রাষ্ট্রহীন’ হয়ে পড়া অনগ্রসর ও অব্যাহতভাবে নিপীড়িত রোহিঙ্গারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই যেকোনো মূল্যে দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নিয়েছে। তাদের প্রতি বাংলাদেশ মানবিক হবে কিন্তু অনির্দিষ্টকাল তাদের বোঝা বহন করতে পারে না। এ কারণেই ‘মূল কারণ’ দূর করে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.