খুলনার ৩৪ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫১১ কোটি টাকা শীর্ষে বেসিক ব্যাংক

খুলনার সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের ৩৪ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫১১ কোটি টাকা। খেলাপির তালিকায় সরকারি পর্যায়ের কৃষি ব্যাংক এবং সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক শীর্ষে রয়েছে। জেলার ৯ উপজেলায় ১ লাখ ১২ হাজার ৫০ জন ঋণখেলাপি। এর মধ্যে কৃষকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। ঋণ আদায়ের জন্য খেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ছাড়াও দফায় দফায় চিঠি দেয়া হচ্ছে। জেলায় ঋণ আদায় কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। ঋণ আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় জেলা কৃষি ঋণ বিতরণ কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ধান, আলুর ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, হিমায়িত খাদ্যের আন্তর্জাতিক বাজার সংকুচিত হওয়া এবং পাটকলের পণ্য অবিক্রীত থাকায় গ্রাহকরা খেলাপি ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। জেলা কৃষি ঋণ কমিটির সূত্র জানান, ৯ উপজেলায় ৩৪টি ব্যাংকের মে পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫১১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তার মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণের পরিমাণ ৩৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সরকারি পর্যায়ের কৃষি ব্যাংকের ২৩৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ। এ ব্যাংকের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ ১২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের খেলাপি  ঋণের পরিমাণ ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। কমিটির সদস্য সচিব ও কৃষি ব্যাংকের উপ-মহাব্যস্থাপক শরীফ ইকবাল হামিদ জানান, সরকারি পর্যায়ের ব্যাংকগুলো জেনারেল সার্টিফিকেট আদালতে ও উপজেলা আদালতে মামলা দায়ের করেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছে। সার্টিফিকেট মামলা তুলে নিষ্পত্তি করার জন্য সমঝোতা বৈঠক হচ্ছে। নতুন করে মামলা দায়ের করার ব্যাপারে ব্যাংকের শাখাগুলোকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। খেলাপি ঋণগ্রহীতারা পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করলে সেক্ষেত্রে সুদ মওকুপের চিন্তা করা হচ্ছে। রূপালী ব্যাক খুলনা অঞ্চলের উপ-মহাব্যবস্থাপক মৃধা ইউসুফ আলী জানান, খেলাপি আদায়ে প্রতি মাসে সভা করে ঋণ পরিশোধের জন্য গ্রাহকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ অঞ্চলে ২৮টি শাখায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ ব্যাংকের শীর্ষ খেলাপির তালিকায় রয়েছে মহসীন জুটমিল ও বায়োনিক সি ফুডস। সোনালী ব্যাংক জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম জানান, খেলাপি ঋণ আদায়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ নিয়মিত পরিশোধ করার জন্য গ্রহীতাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বেসিক ব্যাংক খুলনা শাখার উপ-মহাব্যস্থাপক দেবাশীষ কর্মকার জানান, খেলাপি আদায়ের জন্য অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বকেয়া আদায় করার জন্য ১০টি মামলা দায়ের করা হয়। খেলাপিদের ঋণ পরিশোধে ৬ মাস সময় বাড়ানোর জন্য প্রধান কার্যালয়ে আবেদনও করা হয়েছে। এ ব্যাংকের অধিকাংশ খেলাপি ঠিকাদারি পেশায় জড়িত। অগ্রণী ব্যাংক তেরখাদা উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপক মো. রফিউল কবির এ প্রতিবেদককে জানান, খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য গ্রাহকদের চিঠি দেয়া হয়েছে। সার্টিফিকেট মামলার ধার্য দিনে উপস্থিত থেকে বকেয়া পরিশোধের জন্য গ্রহীতাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উপজেলার ৮শ’ কৃষকের কাছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই কোটি টাকা। জেলা ঋণ বিতরণ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. মোস্তফা কামাল কমিটির মাসিক সভায় ঋণ আদায় কার্যক্রম বেগবান করার পরামর্শ দিয়েছেন। যেসব ব্যাংকের ঋণ আদায় সন্তোষজনক নয় তাদের দ্বিপাক্ষিক মতবিনিময় সভা করার পরামর্শ দিয়েছেন। সার্টিফিকেট মামলার ক্ষেত্রে নির্ধারিত দিনে তদারকি করতে নির্দেশনা দেন। তিনি মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়ানোর নির্দেশও দেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছেন, ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়া, বিশ্ববাজারে হিমায়িত চিংড়ির মন্দাভাব ও পাটকলগুলোর উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না হওয়ায় সংশ্লিষ্টরা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.