বিচারক সংকটে আদালত by মিজানুর রহমান

একদিকে অমীমাংসিত মামলার বিশাল জট, অন্যদিকে বিচারক সংকট, রয়েছে পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব। কয়েকবছর ধরেই উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে দেশের সব ধরনের আদালতে বিচারকার্য পরিচালনা করা হচ্ছে বিচারক সংকটের মধ্য দিয়ে। সুপ্রিম কোর্টের খোদ আপিল বিভাগের ২টি বেঞ্চের কার্যক্রম চলছে ৭ বিচারপতি দিয়ে। উচ্চ আদালতের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগ এবং অধস্তন আদালতে মোট ৩০ লাখ অমীমাংসিত মামলা রয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা শপথ নেয়ার পর গত ১৮ জানুয়ারি প্রথম কার্যদিবসে আইনজীবীদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে মামলা জটের সংখ্যা উল্লেখ করে বর্তমান বিচারকের সংখ্যা দ্বিগুণ করার কথা বলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
দৈনিক মানবকণ্ঠের জেলা প্রতিনিধিদের প্রেরিত তথ্যে দেখা যায়, দেশের প্রায় সকল জেলায় রয়েছে বিচারক সংকট। সুনামগঞ্জ জেলার জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বর্তমানে প্রায় ২৩ হাজার মামলা মীমাংসার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু এ জেলার আদালতগুলোতে এজলাস সংকটসহ বিচারকের ১০টি পদ দীর্ঘদিন যাবত শূন্য রয়েছে। এ প্রতিবেদনে সুনামগঞ্জ, জামালপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, নওগাঁ ও পাবনা জেলার আদালতের অবস্থা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. মফচ্ছির মিয়া বলেন, বিচারকের পদ শূন্য থাকায় বেশিরভাগ মামলার কোনো সমাধান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া এজলাস সংকটে এক এজলাসে দুইজন করে বিচারক বসিয়ে মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করায় বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বিচার প্রার্থীরা।
জামালপুর জেলায় ১৫ হাজার মামলা জট রয়েছে। কিন্তু জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ১৩ জন বিচারকের মধ্যে চারটি পদ দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য রয়েছে। জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম জামাল আব্দুন নাসের বলেন, বিচারক সংকটের কারণে আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোর সমাধান দেয়া বিলম্বিত হচ্ছে। জেলার সাতটি উপজেলায় বিচারকার্য যেভাবে চলছে মামলা নিষ্পত্তি হতে প্রায় ৪০ বছর সময় লাগবে।
ফৌজদারি আর দেওয়ানি মিলে বর্তমানে যশোরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার। বর্তমানে এই জেলায় ৯টি হত্যা মামলা চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এখানেও রয়েছে বিচারক সংকট।
জয়পুরহাটে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত জটে আটকে পড়া মালার সংখ্যা ১৪ হাজার ২৪৬টি। এ জেলায় ১৮ জন বিচারকের মধ্যে ৭টি পদ শূন্য।
১৯৬৮ সালে নির্মিত কুষ্টিয়া জেলা আদালতে এজলাসের সংখ্যা মাত্র ১৪টি। বিচারকের তুলনায় এজলাসের সংখ্যা কম হওয়ায় একই দিনে একই এজলাসে একাধিক বিচারক বিচারকার্য পরিচালনা করেন। ফলে দীর্ঘ সময় লাগছে একটি মামলার বিচার কাজ  শেষ হতে। এ জেলার আদালতে প্রায় ২২ হাজার দেওয়ানি মামলা ও প্রায় ২৫ হাজার ফৌজদারি মামলার বিচার কাজ চলছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা জজ ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও রয়েছে বিচারক সংকট। দু’টি আদালতে অন্তত ৫ জন বিচারকের পদ শূন্য রয়েছে। চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রায় সাত হাজার মামলা রয়েছে। তবে জেলা জজ আদালতের মামলার পরিসংখ্যান জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা সারোয়ার আলম।
নোয়াখালীতে ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ৩৪ হাজার ৩শ’ ৫৪। এ জেলায়ও রয়েছে বিচারক সংকট। নওগাঁ দেওয়ানি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে প্রায় ২৭ হাজার মামলা। নওগাঁয় বিচারকের মোট পদ রয়েছে ২৯টি। এর মধ্যে শূন্য রয়েছে ১১টি পদ। পাবনা জেলা জজ আদালত ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোট ৩৯ হাজার মামলা বিচারাধীন আছে। এ জেলার জজ আদালতে ৪ জন এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২ জন বিচারকের পদ শূন্য রয়েছে। এখানে রয়েছে ২টি এজলাস সংকটও। উল্লেখিত জেলার আদালতসমূহের ন্যায় বিচারক সংকট রয়েছে দেশের প্রায় সব আদালতেই।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক সম্প্রতি রাজশাহী জেলার আদালতসমূহ পরিদর্শন করেন। এই পরিদর্শনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বিরাজমান বিপুল মামলাজট সংক্রান্ত সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ন্যূনতম পাঁচ হাজার বিচারক এই মুহূর্তে নিয়োগ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন আইন কমিশন।

No comments

Powered by Blogger.