উন্নতির ছোঁয়া লাগেনি- কাউন্সিলর বলেন, নাগরিক সুবিধা দিতে ফান্ড লাগে by অরূপ দত্ত

ফুটপাত নেই। ৩০ ফুট রাস্তার প্রায় অর্ধেক অংশজুড়ে আবর্জনার
কনটেইনার ও মোটরসাইকেল গ্যারেজ। বাকি অংশে যানবাহন ও
মানুষের চলাচল। রামকৃষ্ণ মিশন রোড আনসার ক্যাম্প
এলাকা থেকে গতকাল বিকেলে তোলা ছবি l প্রথম আলো
নির্বাচনের প্রায় দুই মাস পরও উন্নতির কোনো ছোঁয়া লাগেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে। বরং বর্ষার মধ্যে রাস্তা খুঁড়ে বিশাল গর্ত করায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে। ওয়ার্ডের ১২টি রাস্তার অবস্থা বেহাল। বিশুদ্ধ পানির জন্য রোজার মধ্যে ছোটাছুটি করছে লোকে। যখন-তখন বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। ঘটছে স্কুলের জায়গা দখলের ঘটনা।
হাটখোলা, টিকাটুলী, কে এম দাস লেন, অভয় দাস লেন, রামকৃষ্ণ মিশন রোডের কিছু অংশ, পেয়াদাপাড়া এলাকা নিয়ে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড। লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। গতকাল শনিবার ওয়ার্ডের এলাকাগুলো ঘুরে ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব সমস্যার কথা জানা যায়। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ময়নুল হক এলাকাবাসীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাদের সব ধরনের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবেন। নির্বাচিত হওয়ার পর গতকাল বিষয়টি তাঁকে মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘নাগরিক সুবিধা দিতে হলে ফান্ড লাগে, সিটি করপোরেশন এখন পর্যন্ত কোনো ফান্ড দেয়নি। আমি কী করতে পারি?’
স্কুলে স্থাপনা ভেঙে জায়গা দখল: কে এম দাস লেনে কাজী আরেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের কর্মচারীদের থাকার ঘরসহ মোট ১০টি স্থাপনা ভেঙে দিয়েছে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লোকজন। এলাকাবাসী জানান, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষে শপথ অনুষ্ঠানের পর থেকে ভাঙা শুরু হয় এবং ১০ জুনের মধ্যে দখল নেওয়া হয়। সেখানে এখন স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যরা যেতে পারছেন না। গতকাল দুপুরে কে এম দাস রেললাইনের পাশে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল চৌহদ্দির বেশির ভাগ স্থাপনাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
স্কুল পরিচালনা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ আলী খান প্রথম আলোকে বলেন, স্কুলের জায়গার মধ্যে আবদুস সোবহান নামের এক ব্যক্তির দুই কাঠা জমিতে চারটি ঘর ছিল (দাগ নম্বর ১২১২৭), সেগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের সঙ্গে ছিল আরও ছয়টি স্থাপনা। সবই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সভাপতি অভিযোগ করেন, স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
জানতে চাইলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলার বিষয় স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এখানে কিছু টাউট-বাটপার বসবাস করে স্কুলের এবং এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছিল। তাদের তাড়িয়ে অবৈধ স্থাপনাগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। জায়গাটি সিটি করপোরেশনের। সিটি করপোরেশনই নতুন স্থাপনা তৈরি করে স্কুল পরিচালনা করবে। তবে স্কুলের নাম হিসেবে কাজী আরেফের নামই বহাল থাকবে।
বর্ষায় খোঁড়াখুঁড়ি ও জলাবদ্ধতা: অভয় দাস লেন তারা ভবনের সামনে রাস্তার মাঝখানে বিশাল গর্ত খুঁড়ে পাকা বক্স করা হয়েছে। এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে মাস খানেক আগে এই গর্ত খোঁড়া হয়। এলাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে বলে দোকানি ও বাসিন্দারা জানান। ফ্যান্ডস টাওয়ারের ফ্ল্যাট মালিক শিবব্রত রায়, অনন্যা ডিপার্টমেন্ট স্টোরের ব্যবস্থাপক মো. এরশাদসহ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ১১ জুনের প্রবল বৃষ্টির পর অভয় দাস লেন মসজিদের সামনে থেকে সেন্ট্রাল উইমেন কলেজ পর্যন্ত পুরো এলাকা তলিয়ে ছিল। পরের দিনগুলোর মাঝারি বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ ডি এম কামরুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘জলাবদ্ধতা ঠেকাতে আমরা নিয়মিতই কাজ করছি।’ তারাবাগের সামনে রাস্তা খোঁড়া হয় ভাঙা পাইপ মেরামতের জন্য। তবে সেটা দীর্ঘদিন যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে— বিষয়টি কর্তৃপক্ষের জানা ছিল না, ঠিকাদার জানেন।’
বেহাল রাস্তা, মেরামতে তহবিল নেই: ওয়ার্ড এলাকায় ১২টি রাস্তা ও অলিগলি রয়েছে, যেগুলো পুরো বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে রামকৃষ্ণ মিশন রোডের জর্জ গলি বলে পরিচিত রাস্তা চলাচল করতে গিয়ে ভাঙাচোরা গর্তে যানবাহন উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। গতকাল দুপুরে এই প্রতিবেদকের সামনেই একটি রিকশা উল্টে যেতে যেতে রক্ষা পায়। আরোহী রবিউল আহমেদ ওই স্থানেই নেমে হেঁটেই বাসার উদ্দেশে রওনা হন। একই অবস্থা দেখা যায় কে এম দাস লেনের বাকি রাস্তা, রেললাইনসংলগ্ন তিনটি রাস্তায়।
পানি-বিদ্যুতের কষ্ট: ওয়ার্ড এলাকায় পানির কষ্ট নির্বাচনের আগের তুলনায় আরও বেড়েছে। গতকালও বিশুদ্ধ পানির জন্য রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে, বালুর মাঠ পাম্পে স্বামীবাগ পাম্প এলাকার গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা যায়। অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা হয়। সবারই কথা হচ্ছে, পানির সরবরাহ কম, তার ওপর দুর্গন্ধ।
ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, পানির সমস্যা কমাতে আরেফ হাসপাতালের কাছে একটি গভীর নলকূপ বসানো হবে। এতে পানির দুর্গন্ধ কমবে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ যেন অবৈধ লাইন নিতে গিয়ে পাইপ ফুটো করতে না পারে, সে জন্য ওয়াসার পাশাপাশি গ্রাহকদেরও সচেতন হতে হবে।
বিদ্যুতের সমস্যাও ভোগাচ্ছে এলাকাবাসীকে। কখনো ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ, কখনো বেশি ভোল্টেজ, কখনো সরবরাহ বন্ধ। সম্প্রতি টানা আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে রাখা সাপ্তাহিক বাজারের মাছ-মাংস নষ্ট হয়ে বলে অভিযোগ করেন পেয়াদাপাড়ার বাসিন্দা আবদুল আলীম। ৬৪/বি-এর বাসিন্দা অজয় হালদার বলেন, ইদানীং কোনো দিন তিন-চারবার বিদ্যুৎ চলে যায়।

No comments

Powered by Blogger.