বেদুইন থেকে শীর্ষ ধনী by কাজী আরিফ আহমেদ

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুরন্ত আশা’ কবিতায় বেদুইন হওয়ার যে আকাক্সক্ষা প্রকাশ পেয়েছে, তার কারণ আরব-বেদুইনদের অদম্য সাহস, কর্মস্পৃহা, তাদের হার না মানা মানসিকতা। আরবের মরু অঞ্চলের এ জাতিগোষ্ঠীর মানুষগুলো আজও বাড়িতে বসে না থেকে মরু-প্রান্তরে ছুটে বেড়াতে ভালবাসেন। ‘যাযাবর’ জীবনে তাঁবুই তাদের ঠিকানা। মরুভূমির বুকে উটের পিঠে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে সেখানেই তাঁবু গেঁড়ে রাত যাপন করেন তারা। বাড়িতে ফেরার নেই কোন পিছুটান। কেউ কেউ শহরে পাড়ি জমাচ্ছেন ঠিকই। তবে তারা তাদের অতীত ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ করেন।
তেমনই এক বেদুইন, যিনি জীবনের রূঢ়, মর্মান্তিক বাস্তবতাকে অবিশ্বাস্য এক সাফল্যগাথায় রূপান্তরিত করেছেন, সামান্য এক মেষপালক থেকে পরিণত হয়েছেন বিলিয়নেয়ারে, তিনি আজ বিশ্বের কোটি কোটি তরুণের অনুপ্রেরণা। ইউরোপের শীর্ষ ধনকুবেরদের একজন হলেও, তার চলাফেরা একেবারেই সাধারণ, সাদাসিধা। শুধু ব্যবসায় উদ্যোক্তারা নন, যে কোন পেশার মানুষ তার শোকগাথাকে অভাবনীয় সাফল্যগাথায় রূপান্তরের কাহিনী থেকে প্রেরণা পেতে পারেন। বিবিসির পিটার ডেই খুব কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেছেন মোহেদ আলত্রাদকে। এক বেদুইন, যিনি বিশাল এক সাম্রাজ্যের মালিক। ‘আলত্রাদ’ গ্রুপের শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আজ ১৭০টি। একজন বিলিয়নেয়ার, যিনি তার সততা, মেধা আর পরিশ্রমে নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করেছেন। একই সঙ্গে পরিবর্তন করেছেন তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত ১৭,০০০ কর্মীর ভাগ্য। কর্মীদের সুখকে তিনি নিজের সুখ মনে করেন। পিটার ডে মোহেদ আলত্রাদের সাক্ষাৎকার নেন। গত ১১ই জুন বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে গ্লোবাল বিজনেস অনুষ্ঠানে তা প্রচার করা হয়। ‘অন্ট্রাপ্রানার অব দ্য ইয়ার: আ বেদুইন টার্নড বিজনেসম্যান’ শিরোনামে তার লেখা প্রতিবেদনটি এখানে তুলে ধরা হলো।
মোহেদ আলত্রাদের কাছে তার বয়স জানতে চাইবেন না। তিনি বিলিয়নেয়ার হতে পারেন, তবে নিজের প্রকৃত বয়সটা জানেন না। কোন রেকর্ড নেই। সম্ভবত, মোহেদের বয়স ৬৫ বছরের আশপাশে। মোহেদের অবিস্মরণীয় উত্থানের গল্পটা আমি জেনেছিলাম। গত বছর ‘ফ্রান্সের বর্ষসেরা উদ্যোক্তা’ নির্বাচিত হন তিনি। আরেক দিন তিনি মন্টে কার্লোতে যান। জাতীয় পর্যায়ের ৫২ পুরস্কার বিজয়ীকে পেছনে ফেলে ‘ওয়ার্ল্ড অন্ট্রাপ্রানার অব দ্য ইয়ার’ বা বর্ষসেরা বিশ্ব উদ্যোক্তা নির্বাচিত হন মোহেদ আলত্রাদ। আন্তর্জাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জায়ান্ট ‘আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়াং’ বার্ষিক এ প্রতিযোগিতার আয়োজক।
এক মেষপালকের শত শত কোটি বিলিয়নের পথে যাত্রার গল্পটা তিনি আমাকে বলেছিলেন। তিনি মোটামুটি ভালই ইংরেজি বলেন, ধীরে তবে সাবলীলভাবেই। বেশি ঘুমান না মোহেদ। অজস্র ভাবনা আর নিত্যনতুন আইডিয়া তার মাথায় ঘুরপাক খায়। প্রচুর লেখালেখি করেন তার অতীত ও বর্তমান নিয়ে।
মোহেদের জন্ম সিরিয়ার মরুভূমিতে। তিনি বেদুইন গোত্রের। তার পিতা ছিলেন গোত্রের নেতা। তার মা ছিলেন দরিদ্র, উপেক্ষিত। তার পিতা তার মাকে দুইবার ধর্ষণ করেন। এ সম্পর্কের ফলে পৃথিবীর আলো দেখলেন মোহেদ ও তার ভাই। বড় ভাই নির্মমতার শিকার হলেন। নিজ পিতাই তার ভাইয়ের হত্যাকারী। আর তার ভাগ্যবিড়ম্বিত মা! মোহেদ যেদিন ভূমিষ্ঠ হলেন, সেদিনই চিরবিদায় নিলেন তিনি।
নানীর কাছে অভাব-অনটনের মধ্যেই বেড়ে উঠছিলেন মোহেদ। নানীর ধারণা ছিল, নাতি বড় হয়ে মেষপালক হবে। স্কুলে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু, বাকি শিশুরা যে স্কুলে যাচ্ছে! ওরা লেখাপড়া করছে। ছোটবেলা থেকেই বেশ কৌতূহলী শিশুটি অন্য শিশুদের লেখাপড়া দেখে উৎসুক হয়ে উঠলো। স্কুলের দেয়ালের একটি ফাটলের ফাঁক দিয়ে ক্লাসে উঁকি দিতো ছোট্ট মোহেদ। ব্ল্যাকবোর্ডের লেখাগুলো একনজর দেখতে পেতো সে। কিন্তু, লেখাগুলোর মাথামুন্ডু কিছু বুঝতো না।
অবশেষে, নাছোড়বান্দা মোহেদকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হলো। চটপটে ও বুদ্ধিমান ছেলেটি ভালই করছিল পড়াশোনায়। এতটাই ভাল যে, যখন মেষপালক ছেলেটি ক্লাসে প্রথম হলো, তখন তার সহপাঠীরা একরকম বিদ্রোহ করে বসলো। তারা তাকে বাইরে অনেকটা দূরে নিয়ে গেলো এবং তপ্ত মরুতে একটা বড় গর্ত খুঁড়লো। ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দিলো তার মধ্যে। আগে পড়লো মোহেদের মাথার দিকটা। সহপাঠীরা সেখান থেকে দৌড়ে পালালো। ভাগ্যক্রমে ছোট্ট মোহেদ বেশ কষ্টে সেখান থেকে বেরোতে পারলো। সংগ্রাম করে মানুষের টিকে থাকার এ বিষয়টাকে তিনি বলেন, ‘জীবনের সহজাত প্রবৃত্তি’। তার ভাগ্যের চাকা বদলাতে শুরু করল। নিঃসন্তান স্থানীয় এক দম্পতি মোহেদকে কাছে টেনে নিলেন। স্কুলে গেল মোহেদ আলত্রাদ, ভাল ফল করল। রাকা শহরে বেড়ে উঠতে লাগলো। এ শহরটি এখন কট্টরপন্থি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) স্বঘোষিত খেলাফতের রাজধানী। আইএসের দখলের এ ঘটনা তাকে বেশ কষ্ট দেয়।
৬০ বছর আগেও সিরিয়ার পরিস্থিতি জটিল ছিল। ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে সামরিক স্বৈরশাসন ছিল সে সময়। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলেন মোহেদ। আসনগুলো দ্রুত পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় সুযোগটা হারাতে হয় তাকে। ইউরোপের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি ফ্রান্সের ‘মোন্টপেলিয়ের’-এ ভর্তি হলেন তিনি। নভেম্বরে কনকনে ঠান্ডার এক সন্ধ্যায় সেখানে পৌঁছলেন তিনি। ফরাসি ভাষা জানতেন না। কিন্তু, সেটা তার জন্য বেশি দিন বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ফরাসি ভাষাটা রপ্ত করে নিলেন তিনি।
অবশেষে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি নিলেন। কাজ করলেন ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পেলেন। এরপর তিনি ‘আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি’তে যোগদান করলেন। যে পরিমাণ অর্থ তিনি আয় করতেন, পারিবারিক দায়িত্ব না থাকায় তা খরচ করার কোন বাধ্যবাধতা ছিল না। টাকা জমানো শুরু করলেন তিনি। নিজ ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য উসখুস করছিলেন মোহেদ। এ তাড়নাটা তিনি বরাবরই বোধ করতেন এবং আজও করেন। ফ্রান্সে ফিরে তিনি স্যুটকেস আকৃতির পোর্টেবল বা বহনযোগ্য কম্পিউটার তৈরির একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করলেন। তিনি সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এ প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে তার হাতে আরও পুঁজি এলো।
অবশেষে, মোহেদ এবং তার এক অংশীদার ফ্রান্সে একটি ছোট স্ক্যাফোল্ডিং (ভবন নির্মাণ বা মেরামতের জন্য বাঁশ, কাঠ বা ধাতব নির্মিত বাইরের অস্থায়ী অবকাঠামো, যেখানে শ্রমিকরা দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করেন) ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ক্রয় করেন। এক ফ্র্যাঙ্কের জন্য একগাদা দায়িত্বের বোঝা। এমন বিনিয়োগে লোকসানই হচ্ছিল। তিনি ভাবলেন, উচ্চ প্রযুক্তির না হলেও, স্ক্যাফোল্ডিং সবসময়ই প্রয়োজন হয়। ছোটখাটো ঠিকাদার, যারা তার ইস্পাতের রড ক্রয় করেন বা ভাড়া নেন, তাদের ঠেলাগাড়ি ও সিমেন্ট মিক্সার বা মিশ্রণযন্ত্র  প্রয়োজন হয়। এটা এ ব্যবসার আরেকটি শাখা। পাল্টে গেলো ব্যবসার ধরন। যোগ হলো নতুনত্ব। আর তা ক্রমেই প্রসারিত হতে লাগলো, একের পর এক প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংযোজিত হলো। কর্মীদের পারফরম্যান্সের জন্য বোনাস ঘোষণা করা হলো। ফলে, ব্যবসায় আয় ও মুনাফা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেলো।
মোহেদ আলত্রাদ ব্যবসায় বিনিয়োগ তথা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ বৃদ্ধি করেছেন। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে বরাবরই সচেষ্ট ছিলেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠানে যে কর্মীরা যোগদান করেন, শুরুতেই পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় তাদের সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুন ও নীতিমালা শ্রদ্ধার সঙ্গে মেনে চলতে বলা হয়।
মোহেদ বিদেশেও নিজের ব্যবসার বিস্তৃতি ঘটানো শুরু করলেন। একই ব্যবসা এবং একই নীতিতে অটল রইলেন। ভবন নির্মাণকারী সংস্থাগুলোর যা যা প্রয়োজন, স্ক্যাফোল্ডিং ব্যবসায় নতুন নতুন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সংযোজন করে সে তালিকাটা দীর্ঘ করতে থাকলেন। ৩০ বছরেরও বেশি সময়ে ছোট এ ব্যবসা এতটাই বিস্তৃত হলো যে, আজ আলত্রাদ গ্রুপের মোট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭০টি। প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করছেন ১৭ হাজার মানুষ, আয়ের পরিমাণ ২০০ কোটি ডলার, আর বার্ষিক মুনাফা ২০ কোটি ডলার। নেদারল্যান্ডে আলত্রাদের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গ্রুপকে ক্রয়ের মাধ্যমে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দ্বিগুণ সম্প্রসারিত করেছেন তিনি।
এত ব্যাপক সাফল্য ও সুনাম অর্জনের পরও মোহেদ আলত্রাদ একজন সাধাসিধা ও চিন্তাশীল নেতা। তিনি বলছিলেন, আমি কেন এটা করছি, তা আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন। টাকার জন্য কখনও ব্যবসা করিনি আমি। আমি একটি মানবতাবাদী উদ্যোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, যাতে আমার জন্য যারা শ্রম দিচ্ছেন, তারা সুখী থাকেন। যদি তারা খুশি হন, তারা আরও দক্ষ এবং আরও ভাল পারফর্মার হয়ে ওঠেন। তাদের জীবনটা আরও সুন্দর হয়। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন মোহেদ। তার মতে, প্রতিষ্ঠানগুলোর লক্ষ্য হওয়া উচিত এটাই, আমি যদি খুশি হই, আমি ভাল কাজ করি।
‘ক্যাশ ফ্লো’ থেকেই ব্যবসায় বিনিয়োগ করায় বিশ্বাসী মোহেদ আলত্রাদ। তিনি বলছিলেন, আমরা আমাদের উপার্জনকেই পুনঃবিনিয়োগ করি। ‘আলত্রাদ’ নামে তিনি যে প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করিয়েছেন, সেটি বিচ্ছিন্ন, স্থানীয় বাজারভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যাপক সমন্বয় করে থাকে। তিনি বলছিলেন, একটি প্রতিষ্ঠান একটি পরিচয়, ইতিহাসের একটি অংশ; এর উৎপাদিত পণ্য, খদ্দেররাও। সাধারণভাবে, আমাদের মতো বড় শিল্প গ্রুপগুলোর সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে, তারা যে যে প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয় করে সেগুলো পুনর্গঠন করে বা নতুন করে গড়ে তোলে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর স্ট্যান্ডার্ড বেশি বা কম করে দেয়। এটা আমার একেবারেই ধারণা-বিরুদ্ধ। আর তাই আলত্রাদের প্রতিষ্ঠানগুলো পুরো ইউরোপেই একটি আলাদা জায়গা করে নিয়েছে এবং নিজেদের একটি বিশেষ পরিচয় তৈরি করেছে। তিনি আমাকে বললেন, আপনি যদি কোন নারীর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন, আপনার অভিব্যক্তি হতে পারে এভাবে পোশাক পরিধান করো না, এই মেকআপ ব্যবহার করো না- এ জাতীয়। কোন প্রতিষ্ঠান ক্রয় করার বিষয়টাও ঠিক একই রকম।
তিনি তার বিনিদ্র রাতগুলো বই লিখেই কাটিয়ে দেন। এর মধ্যে কয়েকটি লেখা অর্থনীতি বিষয়ে। তিনি আত্মজীবনীমূলক একটি গ্রন্থও লিখেছেন। ইংরেজিতে তার বইটির নাম অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘বেদুইন’। ফ্রান্সের শিক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তারা এ বইটিকে স্কুলের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ও ব্যাপক চাহিদার কারণে বইটির লাখ লাখ কপি ছাপা হয়েছে। ইউরোপে অভিবাসন যেখানে বড় ধরনের একটি ইস্যু, সেখানে তার উত্থানের গল্প ভিন্ন অনুরণন তুলেছে।
তিনি আমাকে বলছিলেন, আমি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু, আপনি বলতে পারেন আমি ৩,০০০ বছরের জীবন কাটিয়েছি। মরুভূমির এ জীবনের রয়েছে তার নিজস্ব নিয়ম-কানুন, রীতিনীতি, যা আজ থেকে ৩ হাজার বছর আগে সূচিত হয়। আপনার সঙ্গে সুন্দর এ স্থানে কথা বলাটা আমার কাছে বেশ অদ্ভুত ঠেকছে। অদ্ভুত, অচেনা অনুভূতিটা আমার রক্তে, আমার দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি এখন সুখী কিনা। আসলে নয়, বললেন তিনি। আমার জীবনে এমন একটি ঋণ আছে, যা আমি কখনও শোধ করতে পারব না। সেটা হলো, আমার মৃত মাকে জীবনদান করে তাকে আর ফেরাতে পারব না। ১২ বা ১৩ বছরের অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত এক জীবন পেয়েছিলেন তিনি। তিনি দুইবার ধর্ষিত হন। নিজ চোখের সামনে তিনি পুত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু দেখেছেন। আর, আমি দুনিয়াতে আসার পরপরই তিনি পরপারে চলে গেলেন। মাকে নিজের প্রেরণার উৎস বানিয়ে সবসময় নিজের মধ্যে ধারণ করেন। সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় আর অনুপ্রেরণাটা আসে সেখান থেকেই। আর সে সংকল্প লালন করেই আজ তিনি বর্ষসেরা উদ্যোক্তা।

No comments

Powered by Blogger.