‘সরকারই মানব পাচারকারীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে’ -এনআরবির গোলটেবিল

সরকার মানব পাচারকারীদের চিহ্নিত করেছে আবার সরকারই তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্স ইউনিটের (রামরু) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাসনীম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, এ ইস্যুতে থাইল্যান্ডে দোষী প্রমাণিত না হলেও শুধু সন্দেহমূলকভাবে তাদের ৭৫ জনকে আটক করেছে। এমনকি সেখানে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকেও আটক করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে মানব পাচারকারীরা চিহ্নিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে মানব পাচার ইস্যু নিয়ে সেন্টার ফর নন রেসিডেন্স বাংলাদেশী (এনআরবি) আয়োজিত ‘বিদেশে মানব পাচার রোধে বাংলাদেশের প্রস্তুতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। সরকারের নীরব সম্মতিতেই বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে মানব পাচার চলছে মন্তব্য করে অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, সরকারকে এ বিষয়ে আমরা আগেই বলেছিলাম, এমনকি গণমাধ্যমেও আগে এসেছিল। আসলে সবাই দায়িত্ব পালন করেছে, কেবল সরকারই তার জায়গায় নেই। আমরা এ ইস্যুটি নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। সেখান থেকে ইরফরামালি এমন কথাও এসেছে রেমিট্যান্স তো আসছে। মানুষ মারা গেলেও কেউ কেউ তো সেখানে কাজ করছে, রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে।
তিনি বলেন, মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত পুলিশ, জনপ্রতিনিধিরা। এদের নামও চলে এসেছে। এরা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দিচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও এদের তালিকা এসেছে, কিন্তু সরকারই আবার তাদের রক্ষা করছে। তিনি বলেন, সরকার জনপ্রতিনিধিদের দায়মুক্তি দিতে বারবার রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, মানব পাচারের জন্য থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া ব্যবস্থা নিয়েছে। বাংলাদেশ ক্রসফায়ার করছে নিম্নপর্যায়ের দালালদের। তারা দালালদের ধরছে না, কারণ তাতে ওপরের ব্যক্তি চলে আসবে।’ তিনি বলেন, আমাদের আইনেও ঝামেলা রয়েছে। এক আইনে ধরা হচ্ছে আবার অন্য আইনে তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আবার ইচ্ছে করেই এসব অপরাধ অজামিনযোগ্য করা হচ্ছে না।
এনআরবির চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের সাবেক কাউন্সিল চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শাহজাহান খাদেম, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অনুসন্ধান বিভাগের পরিচালক ড. নূর খান, মালয়েশিয়ায় সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. মাসুদ আজীজ, সাংবাদিক ফরিদা ইয়াসমীন প্রমুখ। সভায় তিনটি পয়েন্টে আলোচনা করা হয়। এগুলো হলো সামপ্রতিক মানব পাচারের ঘটনায় বাংলাদেশের কারা কারা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের কি কি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন এবং এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কি কি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের সঞ্চালনায় ইঞ্জিনিয়ার শাহজাহান খাদেম বলেন, মানব পাচার রোধে লোকাল লেভেলে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এছাড়া পাসপোর্ট ছাড়া কেউ যেন দেশে যাওয়া-আসা না করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাপাশি যে বিদেশীরা এসব অপরাধে জড়িত তাদের শাস্তি নিশ্চিত সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। ড. নূর খান বলেন, এটা দুই মাস বা ৬ মাসের ঘটনা না। বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা। আর কতজন এ পাচারের শিকার হয়েছেন তার কোন সংখ্যা নেই। অসংখ্য। এ ঘটনার জন্য তিনি পুলিশ-বিজিবি, কোষ্টগার্ড এবং সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, এটা এতটাই মর্মান্তিক যে ভিকটিমরা জানিয়েছেন, তাদেরকে যখন বিক্রি করা হয় বস্তা হিসেবে বিক্রি করা হয়। মানুষ হিসেবে ধরা হয় না। তিনি বলেন, সেখান থেকে একজন বেসরকারি টেলিকমের কর্মকর্তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। পরে টাকার বিনিময়ে তিনি ছাড়া পেয়েছেন। কিন্তু কোন মামলা হয়নি আজ পর্যন্ত। তিনি আরও বলেন অধিকাংশ ঘটনাই সুনির্দিষ্ট মামলা হয় না। হলেও গাফিলতির কারণে অনিশ্চিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সেগুলো।
বৈঠকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে জি টু জি পদ্ধতিরও সমালোচনাও করা হয়। রিক্রুটিং এজেন্টের মাধ্যমে সরকারি নিয়মনীতির মধ্যে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি করা হলে আজ এত বড় সমস্যা তৈরি হতো না বলে মনে করেন তারা।

No comments

Powered by Blogger.