মুস্তাফিজ রূপকথায় নয়া ইতিহাস by ইশতিয়াক পারভেজ

নতুন ইতিহাস গড়লেন সাতক্ষীরার ছেলে মুস্তাফিজ। ভারতের কাছে মুস্তাফিজ যেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক। প্রথম খেলায় পাঁচ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় খেলাতে ছয়। জীবনের প্রথম দুই খেলাতেই ১১ উইকেট-ইতিহাস গড়তে আর কি চাই। জিম্বাবুয়ের ফাস্ট বোলার ব্রায়ান ভিটোরি ২০১১তে বাংলাদেশের বিপক্ষেই অভিষেকের দুই খেলাতে পাঁচ, পাঁচ করে ১০ উইকেট নিয়ে এক ইতিহাস গড়েছিলেন। মুস্তাফিজ ১ উইকেট নিয়ে সেই রেকর্ডকেই ম্লান করলেন। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন মুস্তাফিজের বরাদ্দ থেকে আর একটি বল বাকি ছিল। অবশ্য তখন ভারতের আট উইকেটের পাঁচটিই তার দখলে। অধিনায়ক ধোনি হয়তো মনে মনে বৃষ্টিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন খানিকটা স্বস্তির জন্য। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয় ৪৩.৫ ওভারে, তখন ধোনির দলের সংগ্রহ ৮ উইকেট হারিয়ে ১৯৬ রান। প্রায় ২ ঘণ্টা পর খেলা শুরু হলে তার ওভারের শেষ আর বৃষ্টির পর প্রথম বলেই রবিন্দ্র জাদেজাকে সরাসরি বোল্ড করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় তুলে নেন মুস্তাফিজ। এরপরের ওভারেই ভারত অলআউট ২০০ রানে। ৪৩ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট নিয়ে তাদের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে দেন ১৯ বছর বয়সী বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজ। ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ভারতকে প্রথম ছয় খেলাতে কোন দল অলআউট করতে পারেনি। সেমিফাইনালে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তারা অলআউট হয়। এরপরই তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে খেলতে আসে ভারত। আর দুটি খেলাতেই অলআউট ভারতের বিশ্বখ্যাত ব্যাটিংলাইন।
এই পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত মুখোমুখি হয়েছে ৩১ বার। এতে ভারত আগে ব্যাট করেছে ১১ বার, যার মধ্যে গতকালসহ অল আউট হলো চারবার। আর পরে ব্যাট করতে নেমে অলআউট হয়েছে দুইবার। কিন্তু এক সিরিজে ভারতকে বাংলাদেশ এবারই প্রথম পরপরই দুই বার অলআউট করতে পারলো। গতকাল টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিতে ভাবেননি ভারতের অধিনায়ক ধোনি। কিন্তু তাদের জন্য মুস্তাফিজ যে আতঙ্ক হয়ে অপেক্ষা করছে তা হয়তো ভাবতেও পারেন নি। দিনের প্রথম ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে পয়েন্টে সাব্বির রহমানের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন রোহিত শর্মা। প্রথম ম্যাচে ৬৩ রান করা শর্মা ভাবতেই পারেননি দ্বিতীয় ম্যাচেও তাকে আউট করবেন মুস্তাফিজ। ভারতের ও নিজের নামের পাশে শূন্য নিয়ে মাঠে ছাড়েন দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করা এই ওপেনার। এরপর আরেক ওপেনার শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে ভারতের সহঅধিনায়ক বিরাট কোহলি দলের হাল ধরেন। দুজনের ৭৪ রানের জুটিতে ভর করে ভাল অবস্থানের দিকে যেতে শুরু করে ভারত। কিন্তু সেই মুহূর্তে টাইগার অধিনায়ক নাসির হোসেনের হাতে বল তুলে দেন। প্রথম ওভারে কোন উইকেট না পেলেও নিজের দ্বিতীয় ওভারেই পার্টটাইম এ স্পিনার নিজের সেরা শিকার হিসেবে আউট করেন বিরাট কোহলিকে। নাসিরের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ার আগে ২৭ বলে ২৩ রান করেন তিনি। মুস্তাফিজকে একটি ছক্কাও হাঁকান তিনি। প্রথম ম্যাচে দলের অধিনায়ক ধোনি পরে ব্যাট করে ম্যাচ বাঁচাতে পারেননি। তাই দ্বিতীয় ম্যাচে দলের বিপর্যয় সামাল দিতে মাঠে নামেন আগেভাগেই। ২১তম ওভারে নাসির হোসেন আবারও আঘাত হানেন ভারত শিবিরে। অধিনায়কের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৩৫ রানের জুটি ভেঙ্গে দেন তিনি। ৫৩ রান করা শিখর ধাওয়ান নাসিরের বলে এগিয়ে এসে খেলতে চেয়ে পারেননি ধাওয়ান। তার ব্যাটের কানায় ছুঁয়ে আসা বল তালুবন্দি করেন লিটন দাস। ওয়ানডেতে এটাই লিটনের প্রথম ক্যাচ। পরের ওভারে আম্বাতি রাইডুকে শূন্য রানে বিদায় করেন রুবেল হোসেন। তার বলে কাট করতে গিয়ে নাসিরের ক্যাচে পরিণত হন রায়ানের বদলে সুযোগ পাওয়া রাইডু। ১১০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে শুরু করে ভারত।
এরপর পাওয়ার প্লের প্রথম ওভারে (৩৬তম) দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে ফিরেন মুস্তাফিজ। নিজের তৃতীয় বলেই ৩৪ রান সুরেশ রায়নাকে লিটনের গ্লাভসবন্দি করেন তিনি। ৪০তম ওভারে দারুণ এক স্লোয়ারে মহেন্দ্র সিং ধোনির প্রতিরোধ ভাঙেন মুস্তাফিজ। তার বলে সৌম্যকে সহজ ক্যাচ দেন ধোনি। ৪৭ রান করে ধোনি আউট হয়ার আগে রায়নার সঙ্গে ৫৩ ও জাদেজার সঙ্গে ১১ রানের জুটি গড়েছিলেন। ঠিক তার পরের বলে অক্ষর প্যাটেলকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মুস্তাফিজ। সুযোগ এসেছিল আরেকটি ইতিহাসের। কিন্তু হয়নি, তার হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তবে হ্যাটট্রিক ঠেকালেও তার তোপ থেকে বাঁচতে পরেননি অশ্বিন। পরের ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে লিটনের ক্যাচে পরিণত করেন মুস্তাফিজ। কিন্তু তিনি ওভারটি শেষ করতে পারেননি বৃষ্টির কারণে। বৃষ্টির পরও যেন বৃষ্টির মতোই ঝরতে শুরু করে ভারতের উইকেট। স্কোর বোর্ডে মাত্র ৪ রান যোগ হতেই শেষ হয় ইনিংস। কারণ ৪৩.৫ ওভারে একটি বল বাকি থাকতে খেলা বন্ধ হয়েছিল। আর ওভারটি শেষ করতে এসেই ১৯ রান করা জাদেজাকে আউট করে নিজের ষষ্ঠ উইকেটটি তুলে নেন মুস্তাফিজ। আর ভুবেনেশ্বর কুমারকে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেটটি তুলে নেন পেসার রুবেল হোসেন।

No comments

Powered by Blogger.