হাজার দীঘি ভরাট চলছেই- কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছেন না ভরাটকারীরা by প্রণব বল

টিনের বেড়া দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে হালিশহরের
রামপুরের হাজার দীঘি। এটি আশপাশের মানুষের
পানির একমাত্র ভরসা l সৌরভ দাশ
নগরের হালিশহরের রামপুরে হাজার দীঘি ভরাট বন্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। কিন্তু কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছেন না ভরাটকারীরা। স্থাপনা নির্মাণের জন্য দীঘি ভরাট চলছেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দীঘির দুই পাশ থেকে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। মাঝখানে কিছু অংশ পানি রেখে বাঁশ ও টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। বেড়া পর্যন্ত দুই পাশ এখন মাটিতে ভরাট করা হয়ে গেছে। এক পাশে একটি টিনশেড ঘরও বানানো হয়েছে। ওই ঘরে ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা থাকেন। মাঝখানে থাকা সামান্য পানিতে স্থানীয় লোকজন গোসল করছেন।
মো. রফিক নামে এক ব্যক্তি গোসল করছিলেন দীঘিতে। তিনি বলেন, ‘মাস খানেকের বেশি সময় ধরে দীঘি ভরাট করা হচ্ছে। এই দীঘির পানি স্থানীয় লোকজন গোসল ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করেন। এখানে ওয়াসার পানি আসে না। দীঘিই আমাদের ভরসা।’
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই মাস ধরে প্রায় দুই একরের এই দীঘির ভরাটকাজ চলছে। এখন দক্ষিণ পাশের দীঘি ভরাট করা হচ্ছে স্থাপনা নির্মাণের জন্য। বছর খানেক আগে উত্তর দিকের দীঘির কিছু অংশ ভরাট করা হয়েছিল। দীঘি ভরাটের আগে পাম্প দিয়ে কিছু পানি সেচ করে ফেলা হয়। এরপর ট্রাকভর্তি বালু ও মাটি এনে ফেলা হয় দীঘিতে। রাতের বেলায় এই মাটি ফেলা হচ্ছে।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দীঘি ভরাট বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও নগর পুলিশ বরাবরে আবেদন জানানো হয়েছে। পুলিশ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে জলাশয় ভরাটের সত্যতাও পেয়েছে। তবু এটি ভরাট বন্ধ হয়নি।
হালিশহর থানার পরিদর্শক মো. সাইফুদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘মাঝখানে একবার সেখানে ভরাটকাজ করার সময় আমরা কয়েকজনকে আটক করেছিলাম। এরপর কিছুদিন বন্ধ ছিল। এখন যদি আবার দীঘি ভরাট করে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘আমরা হাজার দীঘি ভরাটের সত্যতা পেয়েছি। তাদের প্রথমে নোটিশ দিয়েছি। পরে এ ব্যাপারে পরিবেশ আদালতে একটি মামলাও হয়েছে। তারপরও যদি কাজ চলে, আমরা আরও কী কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া যায় দেখব।’
এদিকে দীঘির ভরাট বন্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে রিট করা হলে আদালত ৭ জুন নিষেধাজ্ঞা দেন। বেলা চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বেলার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ শুনানি শেষে ঐতিহ্যবাহী হাজার দীঘি ভরাট বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভরাট অংশ পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে এনে তা সংরক্ষণের নির্দেশনাসহ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রুল জারি করেছেন।
দীঘি-সংক্রান্ত নথিতে দেখা যায়, মধ্য রামপুরের আবদুল হাকিম মিয়া ওয়াক্ফ এস্টেটের মালিকানাধীন এই দীঘিটি। ওয়াক্ফ এস্টেটের বর্তমান মোতয়াল্লি রফিক মিয়া। একই এস্টেটের অধীনে পাশাপাশি দুটি দীঘি। আগে দুটি মিলে একটি ছিল। ২৫-৩০ বছর আগে মাঝখানে বাঁধ দিয়ে দুটি দীঘিকে ভাগ করা হয়। দুটিই হাজার দীঘি নামে পরিচিত।
স্থানীয় লোকজন জানান, জহিরুল ইসলাম, মো. ইলিয়াছ ও মো. হোসেনসহ কয়েকজন এই দীঘি ভরাটের কাজ তদারকি করছেন। তাঁদের মধ্যে ইলিয়াছ রফিক মিয়ার ভাতিজা। ভরাটের জন্য কোনো দপ্তর থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়নি।
জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রথম দিকে ভরাটকাজের সঙ্গে ছিলাম। এখন ইলিয়াছ এসব দেখাশোনা করছেন। ভরাট করে ওখানে ভবন করা হবে বলে শুনেছি।’
অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মো. ইলিয়াছ বলেন, ‘দীঘি ভরাটের সঙ্গে সেভাবে আমি জড়িত নই। তবে আপনি দীঘির ওখানে এসে আমাকে ফোন দেন তারপর সামনাসামনি কথা বলব।’
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে রফিক মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.