দুপুর থেকেই ক্রেতার ভিড় by মোশতাক আহমেদ

রাজধানীর বেইলি রোডের ইফতারির বাজারও জমে উঠেছে।
শ খানেক পদের ইফতারসামগ্রী পাওয়া যায় এখানে l ছবি: প্রথম আলো
ইফতারের সময় তখনো প্রায় চার ঘণ্টা বাকি। কিন্তু রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উত্তর পাশে অবস্থিত প্রসিদ্ধ ফখরুদ্দিন রেস্টুরেন্টে ইফতারি বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। ঐতিহ্যবাহী কাচ্চি বিরিয়ানি-তেহারির পাশাপাশি হরেক রকম ইফতারি বিক্রি হচ্ছে এখানে। গতকাল শনিবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে এ চিত্র দেখা গেল।
ফখরুদ্দিন রেস্টুরেন্টের পরিচালকদের একজন আবদুল মালেক জানালেন, দুপুর ১২টায় রেস্টুরেন্ট খোলা হলেও বেচাকেনা শুরু হয় বেলা একটায়। এখানে পেঁয়াজু থেকে শুরু করে প্রায় ৪০ রকমের ইফতারি বিক্রি হয়। তবে বেশি বিক্রি হয় খাসির মাংসের হালিম। মাঝারি আকারের পাত্রে হালিমের দাম ৩০০ টাকা ও বড়টার দাম ৫০০ টাকা।
ফখরুদ্দিন রেস্টুরেন্টে ইফতারি কিনতে ব্যস্ত ইস্কাটন এলাকার বাসিন্দা খন্দকার মাজেদুল হক বললেন, ‘এখানকার খাবারের মান ভালো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তাই এখানে আসি।’
শুধু ফখরুদ্দিন রেস্টুরেন্ট নয়, কিছুদূর এগিয়ে গেলে দেখা গেল বেইলি রোডের বিভিন্ন খাবারের দোকানেই ইফতারি বেচাকেনা হচ্ছে। নাটকপাড়া হিসেবে পরিচিত বেইলি রোড এখন ভোজনরসিকদের জন্যও প্রসিদ্ধ। পাশাপাশি পোশাকের জন্যও এই এলাকা এখন আলাদাভাবে পরিচিত। এ জন্য অনেকে পোশাক কিনতে এসে খাবারের স্বাদও নেন। এখানে আছে অনেক ফাস্টফুডের দোকান। রোজায় অনেকে ফাস্টফুডের সঙ্গে ইফতারি যুক্ত করে ব্যবসা করছেন। এখানকার ইফতারির দাম তুলনামূলক চড়া। রয়েছে আভিজাত্যের ছোঁয়াও।
বেইলি রোডে ৩২ বছরের পুরোনো একটি প্রসিদ্ধ ইফতারির দোকান ক্যাপিটাল ইফতার বাজার। এখানে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বেশ কিছু খাবার বিক্রি হচ্ছে। শামি কাবাব, সুতি কাবাব, জাম্বো রোস্ট, ব্রেন মসল্লা, খাসির পা থেকে শুরু করে ইলিশ মাছের পোলাও রয়েছে এই দোকানে। প্রায় ১০০ ধরনের খাবার আছে এখানে।
ইফতারি কিনতে আসা সিদ্ধেশ্বরী এলাকার নাসিম খান বললেন, ‘সব দিন তো আর আসা হয় না। মেয়েরা বলল, তাই এখান থেকে ইফতারি নিতে এসেছি। এই দোকানের খাবারের গুণগত মান তুলনামূলক ভালো।’
ক্যাপিটাল ইফতার বাজারের প্রতিনিধি শরফুদ্দিন জানালেন, প্রায় ৩২ বছর ধরে তাঁরা এখানে ইফতারি বেচাকেনা করছেন। পাঁচ টাকা দামের পেঁয়াজু থেকে শুরু করে সব ধরনের ইফতারি তৈরি করা হয় এখানে। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য নতুন ঢাকায় আনা হয়েছে।
নবাবি ভোজ নামে আরেকটি খাবারের দোকানে গিয়ে দেখা গেল বেশ ভিড়। শাহি হালিম, নবাবি ক্ষীরসা ফালুদাসহ রকমারি সুস্বাদু খাবার রয়েছে এখানে।
ফাস্টফুডের দোকানগুলোতেও দেখা গেল ইফতারি বিক্রির আয়োজন। গোল্ডেন ফুড, রেড কোর্টসহ কয়েকটি দোকানে ইফতারি বিক্রি হচ্ছে।
বেইলি রোডের পিঠাঘরে হরেক রকম পিঠার পাশাপাশি হালিমসহ বেশ কিছু ইফতারি বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাও অনেক। পিঠার মধ্যে রয়েছে লবঙ্গ লতিকা, মাল পোয়া, রস ফুল, ক্ষীর পুলি, বিবিখানা, সূর্যমুখী ইত্যাদি।
বেইলি রোডের পূর্ব পাশে শান্তিনগর মোড়ের দিকে আরও কয়েকটি ছোট দোকানে ইফতারি বিক্রি হচ্ছে।
ভেজালবিরোধী অভিযান: পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের ভ্রাম্যমাণ আদালত বিকেলে ওই এলাকার কয়েকটি খাবারের দোকানে অভিযান চালায়। এর মধ্যে স্কাইলার্ক নামে একটি খাবারের দোকানের রান্নাঘর থেকে ব্যবহৃত তেল বিক্রির দায়ে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর মো. আজিম জানান, ভোক্তা অধিকার আইনের অধীনে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পিঠাঘরকে ফুটপাতে হালিম বিক্রির জন্য সতর্ক করা হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বিকেলে বেইলি রোডের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, খাবারে ভেজাল মেশানো যাবে না—এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। ভেজালের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। কেউ খাবারে ভেজাল মেশালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জরিমানা করা হবে, প্রয়োজনে জেলহাজতে পাঠানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.