বর্ণবাদী ক্ষয়রোগে ধুঁকছে আমেরিকা

আমেরিকা ‘বর্ণবাদী ক্ষয়রোগে’ আক্রান্ত হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রের সমাজব্যবস্থায় এ ক্ষয়রোগের শেকড় গভীরভাবে প্রোথিত রয়েছে। মানচিত্র বিধ্বংসী এ বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মার্কিনদের একজোট হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বুধবার সাউথ ক্যারোলিনার কৃষ্ণাঙ্গদের একটি গির্জায় শ্বেতাঙ্গ যুবকের বন্দুক হামলায় ৯ জন নিহতের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সানফ্রান্সিসকোর এক বক্তৃতায় ওবামা এসব কথা বলেন।
খবর বিবিসির। ওবামা বলেন, আমরা অনেক উন্নতি করেছি। কিন্তু আমাদের ‘বর্ণবাদী ক্ষয়রোগ’ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। যখন এটা তরুণ সমাজের মনে বিষ ছড়িয়ে দেয়, তখন তা আমাদের আদর্শকে প্রবঞ্চনা করে। গণতন্ত্র তখন কান্না করে।’ অভিযুক্ত খুনি ডিলান স্ট্রমকে নিহতের স্বজনদের ক্ষমা করার ঘটনাকে তাদের ‘বিশ্বাসের কল্পনাতীত প্রতিফলন’ বলে মন্তব্য করেন ওবামা। অস্ত্র আইন পরিবর্তন হবেই : গির্জায় বন্দুক হামলার পর বৃহস্পতিবারই অস্ত্র আইন পরিবর্তন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ওবামা। শুক্রবার সেই বিষয়টি আরও জোরালো ভাবে তুলে ধরলেন। এ দিনের বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘এ ব্যাপারে আমি আশাবাদী। শোকাহত জাতি অবশ্যই অস্ত্র আইন নিয়ন্ত্রণ করবে।’ সানফ্রান্সিসকো মেয়রদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, পরিবর্তন একদিন আসবেই। আইন বদলাতে কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ক্ষুব্ধ ওবামা বলেন, ‘কেবল ২০১৩ সালেই বন্দুক সহিংসতায় ১১ হাজার আমেরিকান নিহত হয়েছে। ২০১২ সালে নিউটাউনে ২৫ জনকে হত্যার পরও আইন করতে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস।’
খুনিকে ‘ক্ষমা করলেন’ নিহতদের স্বজনরা : যুক্তরাষ্ট্রের চার্লসটনে গির্জার ভেতরে গুলিতে নিহত নয় ব্যক্তির কয়েকজনের আত্মীয়স্বজন আদালতে সন্দেহভাজন খুনির সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে গ্রেফতারের পর শুক্রবার রুফকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে চার্লসটনের আদালতে হাজির করা হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি। রুফের বিরুদ্ধে বাইবেল স্টাডি গোষ্ঠীর ওপর গুলিবর্ষণ ও নয়জনকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। শুক্রবার বিকালে শুনানিকালে আদালতের প্রশ্নের উত্তরে নিজের নাম, বয়স ও ঠিকানা নিশ্চিত করেন রুফ। নিজেকে বেকার বলেও স্বীকার করেন। এ সময় বিচারকের আমন্ত্রণে রুফের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার জন্য নিহতদের আত্মীয়স্বজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অশ্রুসিক্ত নয়নে তারা সরাসরি খুনির সঙ্গে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে কথা বলেন। এ সময় রুফের মধ্যে আবেগের কোনো প্রকাশ দেখা যায়নি। চার্চে নয়, কলেজে হামলার পরিকল্পনা ছিল ডিলানের যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনার গির্জায় হামলাকারী ডিলান রুফের চার্লসটন কলেজে হামলার পরিকল্পা ছিল বলে জানিয়েছেন তার বন্ধু ক্রিস্টন ক্রিভেন। শ্বেতাঙ্গ ডিলানের এই কৃষ্ণাঙ্গ বন্ধু জানান, ঘটনার এক সপ্তাহ আগে ডিলান বলেছিলেন, ‘চার্লসটন কলেজের গণজমায়েতে আমি হামলা করব।’ মদ খেয়ে এসব বলেছিলেন বলে মাতালের প্রলাপ ভেবেছিলেন ক্রিস্টন।
এরা দু’জনই বারে নিয়মিত মদ খেতেন। ক্রিস্টন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তুমি এসব কী বলছ? কেন মানুষ মারবে?’ ডিলান আপন মনে বলেছিলেন, ‘মাত্র ৭ দিন। আমার হাতে সময় ৭ দিন।’ এ ঘটনার এক সপ্তাহের মাথায় কৃষ্ণাঙ্গদের গির্জায় ওই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ৯ জন নিহত হন। এদিকে ডিলানের ছোটবেলার বন্ধু জোসেফ মিক জানায়, ডিলান আগাগোড়াই বর্ণবিদ্বেষী। গায়ের রং নিয়েও সে মন্তব্য করত। মনে করত শ্বেতাঙ্গ আর কৃষ্ণাঙ্গরা একসঙ্গে থাকতে পারে না। জোসেফের দাবি, ডিলান বলত ভয়ানক কিছু একটা করবে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ২১ বছরের জন্মদিনে বাবার উপহার দেয়া অর্থে একটা বন্দুক কেনে ডিলান। সেই বন্দুক নিয়েই সে গির্জায় চড়াও হয়েছিল কিনা, তা স্পষ্ট নয়। ডিলানের বন্দুকটি চুপিসারে সরিয়ে রেখেছিল জোসেফ। জোসেফের কথায়, ‘এখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। আমি হয়তো এ ঘটনা থামাতে পারতাম।’ ডিলানের আর এক বন্ধু ডালটন টাইলারের দাবি, রাস্তায় কৃষ্ণাঙ্গদের কটূক্তি করত ডিলান। বলত, সে গণযুদ্ধ শুরু করবে!

No comments

Powered by Blogger.