অভিভাবকদের উদ্বেগ : দায় কার! by তোফাজ্জল বিন আমীন

দেশের বিরাজমান জ্বালাও পোড়াও অবরোধ হরতাল ক্রমেই বেড়ে চলছে। মানুষের চোখেমুখে আজ আতঙ্কের ছাপের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছে। প্রতিদিনই নিরীহ মানুষের নৃশংস মৃত্যুর ঘটনা জনমনে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সীমা ছেড়ে যাচ্ছে। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশে কোথাও আজ নিরাপত্তা নেই। আছে শুধু ভয়ভীতি আর অসহায় মানুষের করুণ আর্তনাদ। এই চরম ধ্বংসযজ্ঞ ও মৃত্যুর দায়ভার রাষ্ট্র কি কোনোভাবে এড়াতে পারে? গুম, খুন, ক্রসফায়ার আর অপহরণের এই দেশে যত চাপ আছে সব জনগণের ওপর। অথচ পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো শক্তিই জনগণের মতামতকে উপো করে গায়ের জোরে বেশি দিন মতায় টিকে থাকতে পারেনি। জোর-জুলুম, ভয়ভীতি তথাকথিত ক্রসফায়ারের মাধ্যমে মতার সিঁড়িতে বেশি সময় অবস্থান করা যায় না। কারণ অস্ত্রের ভাষা আর জনতার ভাষা এক নয়। এ দেশের হাজারো অভিভাবকের মতো উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বোধ করছি এসএসসি ও সমমানের পরীা নিয়ে। এবারের পরীা এমন একটি সময়ে শুরু হতে যাচ্ছে যে সময়টা শিার্থীদের জন্য সুখকর নয়। ইতোমধ্যে সরকারের শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঘোষণা দিয়েছেন অবরোধের মধ্যে নির্ধারিত সময়েই পরীা শুরু হবে। তিনি আরো একধাপ এগিয়ে অবরোধ ডাকা দলগুলোর উদ্দেশে বলেছেন, আল্লাহর দোহাই, খোদার দোহাই, মানবতার দোহাই আমাদের ছেলেমেয়েদের নির্বিঘেœ পরীা দেয়ার ব্যবস্থা করে দিন। তিনি বিরোধী দলের প্রতি খোদার দোহাই মানবতার দোহাই দিতে পারলেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে বলতে পারলেন না সমস্যার সমাধান না করতে পারলে সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত হবে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি সম্মান রেখে প্রশ্ন রাখতে চাই, দেশের এই নারকীয় পরিস্থিতির জন্য কি শুধু বিরোধী দল দায়ী নাকি মহাজোটের ক্ষমতা পিপাসুরা দায়ী? আমরা রাষ্ট্রের জনগণ। আমাদের নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টি রাষ্ট্রের, বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের নয়। এই মন্ত্রীর আমলে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে যে অনিয়ম হয়েছে তা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। নিকট অতীতে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীার ফল প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক ভালো ফলাফল করেছে। সে জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। দেশের ইতিহাসে এবারের মতো এত প্রশ্নপত্র ফাঁস অতীতে আর কোনো সময়ে হয়েছে বলে আমার জানা নেই। পঞ্চম শ্রেণীর পরীা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই প্রশ্নপত্র ইন্টারনেটে পাওয়া গেছে। যারা এগুলো আগে থেকেই পেয়েছে, তাদের প্রস্তুতি ও পরীা দেয়া এবং যারা পায়নি তাদের পরীা দেয়ার মধ্যে যে কত তফাৎ তা লিখে শেষ করা যাবে না। ফলাফল প্রকাশের পর শিামন্ত্রী বলেছেন, সবাই তো আর ওই প্রশ্ন পায়নি। প্রশ্ন হলো- কিছুসংখ্যক ছেলেমেয়েই বা পাবে কেন? প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে শিামন্ত্রী যখন শিার উন্নয়নের নামে বেলুন উড়ান তখন মনে দাগ কাটে। কী দতা নিয়ে শিা মন্ত্রণালয় এসব পরীার ব্যবস্থা করেন তা দেখে অবাক হতে হয়। সারা দেশের মানুষ, বিশেষ করে শিার্থী কিশোর-কিশোরীদের মা-বাবার কাছে এসব ঘটনা যে কত বেদনাদায়ক তা বোঝার মতাও বোধ করি এই সরকারের নেই। যদি থাকত তাহলে অপরাধীদের সাজা একটু হলেও দেখতে পেতাম। রাজনৈতিক বিরোধী মতের নেতাদেরকে যদি রিমান্ডে নেয়া যায় তাহলে যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন তাদেরকে রিমান্ডে নিতে বাধা কোথায়? দেশের আইনের অবস্থা যে মোটেও ভালো নয় তা বোধহয় মন্ত্রী মহোদয় চোখে দেখতে পারছেন না। আইনের শাসন যদি ভালো থাকত তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অপরাধী ধরার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করতে হতো না। যে বাহিনী নিজেরা নিজেদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা আবার আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেবে কিভাবে। এই চিন্তায় উদ্বিগ্ন আমাদের অভিভাবকেরা। এই অস্থির পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেয়ার বিষয়টি রীতিমতো এক যুদ্ধের শামিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে সরকারের উচিত পেশিশক্তি দিয়ে নয়, সমঝোতার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করা। যাতে করে আমাদের পরীক্ষার্থীরা ভয়হীনভাবে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারে। আশা করি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার বিষয়টি উপলব্ধি করে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নিয়ে ২৮ লাখ অভিভাবকের উদ্বেগ দূর করতে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে।
তোফাজ্জল বিন আমীন  tofazzul1982@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.