আর কত লাশ চাই! by ড. আবদুল্লাহ ইকবাল

দেশে রাজনীতির আকাশে ধোঁয়াশা কেবলই বাড়ছে। কোনো কিছুই অনুমান বা ধারণা করা যাচ্ছে না। কখন, কোথায়, কার ভাগ্যে কী ঘটে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রতিমুহূর্তেই সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। না জানি কখন পেট্রোল বোমার কবলে পড়তে হয়! প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো এলাকায় ঘটছে এমন লোমহর্ষক, পৈশাচিক ঘটনা। যা থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশু-কিশোর-শ্রমিক-দিনমজুর নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। কখনও শোনা যাচ্ছে জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে। যদিও সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কখনও বলা হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক, কখনও বলা হচ্ছে পরিস্থিতি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে আসবে, সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবতা পুরোটাই ভিন্ন। গত এক মাসের অবরোধ-হরতালে সরকার বা বিরোধীদলীয় জোটের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কতটুকু উপলব্ধি হয়েছে, তা সাধারণ মানুষের জানা নেই। তবে দেশের শান্তিপ্রিয় নাগরিকরা যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন, সেটি বোধহয় মেনে নিতে কারোরই আপত্তি থাকবে না। কিন্তু এরপরও সরকারদলীয় এমপি-মন্ত্রীদের বক্তব্য শুনে মনে হয়, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বভাবিক! অন্যদিকে, আন্দোলনকারী বা ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচি দেখে মনে হয় চলমান আন্দোলনকে আরও তীব্রতর করাই তাদের উদ্দেশ্য। অগণিত মানুষের প্রাণহানি বা অগি্নদগ্ধ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুপথযাত্রীর করুণ আর্তনাদ, রাস্তায় পথচারীদের আতঙ্কিত পথচলা_ কোনো কিছুই তাদের নজরে আসে না! অনবরত চলছে বাস-ট্রেন-নৌপথসহ যত্রতত্র পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ। যদিও কোনো পক্ষই এসবের দায়দায়িত্ব নিতে বা স্বীকার করতে নারাজ।
এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষা বছর। এক মাস পেরিয়ে গেলেও দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এসেছে স্থবিরতা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রাথমিক পর্যন্ত সব পর্যায়েই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রভাব প্রকটভাবে পড়েছে। এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে শুরু হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। শুরুর আগেই পরীক্ষা পিছিয়েছে দুই ধাপে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্প মালিকও পড়েছেন হুমকির মুখে। পরিবহন খাত প্রায় ধ্বংসের সম্মুখীন। কৃষক হয়ে পড়েছেন দিশেহারা। একদিকে উৎপাদিত পণ্য যথাসময়ে বা ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে না পারা, অন্যদিকে ঋণের বোঝা! এমন কোনো শ্রেণী-পেশার মানুষ নেই যারা ক্ষতিগ্রস্ত হননি। পুরো দেশ আজ হতাশাগ্রস্ত, আতঙ্কিত। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পেঁৗছেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়তে বাধ্য হতে পারেন। যার মোকাবেলা করতে হবে সরকার ও ২০ দলীয় জোটসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে। শুধু প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করে কেউই জনরোষ থেকে রেহাই পাবেন না। তাই আর দেরি না করে এখনই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, বিশেষ করে দুই নেত্রীর মধ্যে সমঝোতার জন্য সংলাপ জরুরি।
অবরোধ-হরতাল কর্মসূচির এক মাস পেরিয়ে গেলেও ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন শেষ হবে কবে, কখন, কীভাবে তারও কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি নেত্রীর ছোট ছেলের মৃত্যুতে কিংবা ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করেও আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়নি। এ থেকে অনুমান করা যাচ্ছে, আপাতত অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি থেকে দেশবাসী মুক্তি পাচ্ছে না! দীর্ঘায়িত হতে চলেছে হরতাল কর্মসূচি। শোনা যাচ্ছে লাগাতার হরতালও হতে পারে! এমন অবস্থায় দেশবাসী অতিবাহিত করছে সংকটময় মুহূর্ত। কিন্তু এসবের অবসান যে জরুরি সেটিও সবাই জানি ও চাই। কিন্তু আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে বা কতজনকে অগি্নদগ্ধ হয়ে পুড়ে মরতে হবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণটির জন্য?
সহযোগী অধ্যাপক , বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

No comments

Powered by Blogger.