‘দুই ফারুকে’ আটকে গেল ‘খান পরিবার’- টাঙ্গাইলে ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হত্যায়ও ছাত্রলীগ নেতা বাপ্পার হাত!

জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার সন্তান যখন পুরো বেকায়দায়; ঠিক সেই মুহূর্তে বেরিয়ে এলো আরো একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। এবার বেরিয়ে এসেছে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ফারুক হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ততার কথা। আওয়ামী এই খান পরিবারের ছোট ছেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার নির্দেশ ও অর্থায়নেই ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ফারুককে হত্যা করা হয়। বাপ্পার দেহরক্ষী শাহজাহান মিয়া আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে চেয়ারম্যান ফারুককে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেন। শাহজাহান মিয়া গত ২ ফেব্রুয়ারি সোমবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য প্রকাশ করেন। ফলে ‘দুই ফারুকে’ আটকে গেল টাঙ্গাইলের প্রভাশালী এই ‘খান পরিবার’। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর খুন হন ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক।
এর আগে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যাকাণ্ডের সাথেও বাপ্পাসহ তাদের চার ভাই সম্পৃক্ত বলে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া আনিসুর রহমান রাজা ও মোহাম্মদ আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর থেকে বাপ্পা এবং খান পরিবারের অন্য তিন ভাই টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, টাঙ্গাইল পৌরমেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ও টাঙ্গাইল চেম্বার নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের গ্রেফতারে এখনো অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
এরই মধ্যে গত ২ ফেব্রুয়ারি সোমবার শহরের কলেজপাড়া এলাকার ভাড়া বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন বাপ্পার দেহরক্ষী শাহজাহান মিয়া। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি তাকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদেই শাহজাহান মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে  সম্মত হন। পরে গোয়েন্দা পুলিশ গত ৫ ফেব্রুয়ারি তাকে আদালতে হাজির করে। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট লুনা আক্তার ওইদিন শাহজাহান মিয়ার জবানবন্দী রেকর্ড করেন।
আদালত ও মামলার তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, শাহজাহান জবানবন্দীতে জানিয়েছেন, তিনি আগে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। পরে বাপ্পার দেহরী হিসেবে দায়িত্ব নেন। বাপ্পা তাকে দায়িত্ব দেনÑ দাইন্যা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ফারুককে হত্যার। বাপ্পার নির্দেশেই শাহজাহান তার আরো কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর ভোরে শহরের বটতলা বাজারে গুলি করে ও কুপিয়ে ফারুককে হত্যা করে।
রফিকুল ইসলাম ফারুকের মৃত্যুর পর তার ভাই আজাহারুল ইসলাম লাবু মিয়া বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে। গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) অশোক কুমার সিংহ চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি তদন্ত করছেন।
এ ব্যাপারে মামলার বাদি লাবু মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার ভাইয়ের হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাহজাহানের গ্রেফতার হওয়ার কথা শুনেছেন। স্বীকারোক্তি দেয়ার বিষয়ে কিছু জানেন না। তবে তদন্তকারীদের প্রতি তার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে বলে তিনি জানান।
রফিকুল ইসলাম ফারুক নিহত হওয়ার পর তার ভাই এই মামলার বাদি আজাহারুল ইসলাম লাবু মিয়া উপনির্বাচনে দাইন্যা ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এ ব্যাপারে গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর গোলাম মাহফীজুর রহমান বলেন, শাহজাহান জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে সব এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। রফিকুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অন্যদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে।

No comments

Powered by Blogger.