বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৬২ জন- দর্শনার্থীদের ভিড় কমানোর পরামর্শ, শুটিংয়ের চেষ্টা

সামপ্রতিক সময়ে হরতাল ও অবরোধে সহিংসতায় আহত হয়ে ৬২ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি আছেন। তাদের উন্নত চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের চিকিৎসাসেবা উন্নত ও নির্বিঘ্ন করতে ওই ইউনিটে ভিড় কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। গতকাল সকালে ইউনিটের পঞ্চম তলায় কনফারেন্স রুমে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বার্ন ও সার্জারি ইউনিটের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ খন্দকার জানান, অবরোধ ও হরতালে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দগ্ধ হয়ে ১২৩ জন পুরুষ ও নারী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। দগ্ধদের অনেকেরই আবার হাত ও পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বার্ন ও সার্জারি ইউনিটের বিভিন্ন বিভাগে মোট ৬২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া, চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ৫২ জন বাড়িতে চলে গেছেন। মারা গেছেন নয় জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৬২ জনের মধ্যে আইসিইউতে ৭ জন, ২০১ এর ওয়ার্ড বারান্দায় ১৯ জন, মেইল পেইং ওয়ার্ডে ১২ জন, এইচডিইউতে ৮ জন, ২০১ নম্বর ওয়ার্ডে ৯ জন, পোস্ট অপারেটিভে ৫ জন ও কেবিনে ২ জন চিকিৎসাধীন আছেন। দগ্ধদের মধ্যে জাহাঙ্গীর, রাকিব, মরিয়ম, রাজিব ও নূরুন্নবীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সাজ্জাদ খন্দকার জানান, বেশি দগ্ধ রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনার পরিমাণ ক্ষীণ। কেননা, তাদের  শরীরের ফুসফুস ও কিডনি কাজ করে না। শরীর নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন টিস্যুগুলো নিস্তেজ হয়ে যায়। এতে তারা বাঁচা ও মরার সন্ধিক্ষণে থাকে। ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে যারা আহত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই ঢাকার বার্ন ইউনিটে ভর্তি হচ্ছেন। উন্নত চিকিৎসা হওয়ায় বিত্তশালীরাও এখানে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এতে ইউনিটে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। আর বেশি দর্শনার্থী হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। তিনি রোগীদের স্বার্থে এবং তাদের উন্নত চিকিৎসা নির্বিঘ্ন করার জন্য দর্শনার্থীদের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভিড় কমানোর পরামর্শ দেন। ঢাকার বাইরে বার্ন ইউনিটকে শক্তিশালী করার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ৩০ জন চিকিৎসক ও নার্সকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে তারা আবার নিজ কর্মস্থলে ফিরে যাবে। তিনি আরো বলেন, গাইবান্ধার বাসে পেট্রলবোমা হামলায় আগুনে ঘটনাস্থলেই ৪ জন এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ১জন মোট পাঁচজন মারা গেছেন। এ ঘটনায় আরো ১৯ জন আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঢাকার বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা আহতদের উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।
চিকিৎসাধীন মরিয়ম খাতুন রূপার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তার বয়স কম। দগ্ধ হওয়ার পরিমাণ ৪৫ শতাংশ। তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়। তাকে সুস্থ করে তোলার যথাযোগ্য চেষ্টা করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বার্ন ও সার্জারি ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডা. প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ, অবৈতনিক উপদেষ্টা ডা. সামন্ত লাল সেন ও আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শঙ্কর পাল প্রমুখ।
বার্ন ইউনিটে আবারো শুটিংয়ের চেষ্টা: গতকাল দুপুর ১২টায় ‘ভ্রাম্যমাণ শুটিং দল’ নামে একনারীসহ ছয়জন বার্ন ও সার্জারি ইউনিটের অবজারভেশন ওয়ার্ডে  শুটিং করতে যায়। এসময় ওই ওয়ার্ডে ভর্তিরত কয়েকজন রোগীর স্বজন চিৎকার করতে থাকে। খবর পেয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকরা ওই শুটিং দলের সদস্যদের চলে যেতে বলেন। এসময় সেখানে থাকা ফটো সাংবাদিকদের সঙ্গে শুটিং দলের সদস্যদের কথা কাটাকাটি হয়। অবজারভেশন ওয়ার্ডে ভর্তি আহতের স্বজন খাদিজা বেগম জানান, ‘এটা চিকিৎসা দেয়ার স্থান। কোন নাটকের স্থান নয়। শুটিং দলের সদস্যরা ওয়ার্ডে ক্যামেরা নিয়ে ঢোকামাত্র আমরা চিকিৎসকদের খবর দেই। বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শঙ্কর পাল জানান, খবর পেয়ে আমরা অবজারভেশন ওয়ার্ডে যাই। তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়েছে এবং বার্ন ইউনিটে আর না আসতে বলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.