জঙ্গিদের কাছে নতি স্বীকার করব না : প্রধানমন্ত্রী

(প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক রোটারি শান্তি সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন : বাসস) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতিকে অপরাজেয় অভিহিত করে দেশব্যাপী চলমান সহিংসতার জন্য দায়ী অপরাধী চক্রকে পরাজিত করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি অপরাজেয়। অন্যায়ের কাছে কখনো পরাজয় মানেনি। এবারো তারা পরাভূত হবে না। জঙ্গিদের কাছে আমরা কখনো নতি স্বীকার করব না।
তিনি বলেন, হরতাল ও অবরোধের নামে এ হিংস্র হায়েনাদের দেশব্যাপী মানুষ হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা রুখবই। সন্ত্রাসের হোতাদের পরাজিত করেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করব ইনশাআল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে হোটেল র‌্যাডিসনে আন্তর্জাতিক রোটারি শান্তি সম্মেলন-২০১৫-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এ কথা বলেন।
রোটারি কাব ঢাকা মহানগর আয়োজিত এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন রোটারি ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত কে আর রবিনদ্রন।
রোটারি ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩২৮১-এর জেলা গভর্নর সাফিনা রহমান ও একই সংগঠনের ৩২৮২-এর জেলা গভর্নর প্রকৌশলী এম এ লতিফ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং এতে সম্মেলনের সভাপতি আফতাবুল ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা দেন ও ঢাকা মহানগর রোটারি কাবের সভাপতি নিয়াজ রহিম ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বিদায়ী গভর্নর এম আউয়াল ইনভোকেশন পাঠ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাঙালি জাতি কখনই উৎপীড়কদের কাছে মাথা নত করেনি। ১৯৫২ সালে রক্তের বিনিময়ে বাঙালি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছে, ১৯৬৯ সালে নিপীড়ক স্বৈরাচারী আয়ুব সরকারের পতন ঘটিয়েছে, ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা মাতৃভূমির স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি।’
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষতি কাটিয়ে দেশ যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন তারা আবারো একাত্তুরের কায়দায় মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যুদ্ধাপরাধী ও সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ছুটছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, রাজনীতি কার জন্য? রাজনীতি তো সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য। কিন্তু নিরীহ মানুষকে এভাবে হত্যা করে কী অর্জন করতে চায় বিএনপি-জামায়াত।
তিনি বলেন, তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এটা তাদের ভুল। তাদের এ ভুলের খেসারত জনগণকে দিতে হবে কেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘাতকদের পেট্রলবোমা হামলায় প্রায় ৫৫ জন পুড়ে মারা গেছেন। কয়েক শ’ মানুষ হাসপাতালের বেডে অমানুষিক নরক যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন। পোড়া মানুষের গন্ধে বার্ন ইউনিটের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এসব অমানবিক কাজ কারা করছে তা দেশবাসী জানেন। রাজনীতির নামে সাধারণ মানুষকে এভাবে পুড়ে মারার মতো নৃশংসতা এ দেশের মানুষ আগে আর কখনো দেখেনি।
বাংলাদেশের মানুষ উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ পছন্দ করে না এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সব সময় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে যাচ্ছি। কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন যাতে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতা পরিচালনা করতে না পারে সে ব্যাপারেও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রধানমন্ত্রী সব প্রতিকূলতার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় রোটারিয়ানদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এ আশাবাদ প্রকাশ করেন, তারা ধনী-দরিদ্র, যোগ্য-অযোগ্য, ক্ষমতাবান ও ক্ষমতাহীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারী দেওয়াল অপসারণ করে সারা বিশ্বের শান্তির জন্য কাজ করে যাবেন।
তিনি বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে সমাজের একটা অংশকে পশ্চাদপদ রেখে উন্নয়ন বা শান্তি স্থাপন কোনোটাই সম্ভব নয়। বিত্তবান ও শিক্ষিত মানুষেরা এগিয়ে এলে সমাজ থেকে নিরক্ষরতা, অশিক্ষা, কুসংস্কার এবং কূপমণ্ডুকতা দূর করে শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
‘আত্মত্যাগের ঊর্ধ্বে সেবা’ এই ব্রত দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে রোটারি সামাজিক উন্নয়ন ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এক শতাব্দির অধিক সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সংগঠনটি বাংলাদেশেও বিভিন্ন আর্থসামাজিক খাতে প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে। রোটারিরা নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়ঃপ্রণালী উন্নয়ন, গুরুতর রোগব্যাধি দূরীকরণ, প্রসূতি ও নবজাতকের সেবা, শিক্ষা ও স্বাক্ষরতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

No comments

Powered by Blogger.