শিবির নেতাসহ ঢাকা, কুমিল্লা ও যশোরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৩

নিহত শিবির নেতা জসিম উদ্দিন
ঢাকা, কুমিল্লা ও যশোরে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক শিবির নেতা ও এক বিএনপি নেতাসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার গভীররাত থেকে রোববার ভোর ৪টার মধ্যে এসব বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এছাড়া কুমিল্লায় দুই জামায়াত নেতাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নয়া দিগন্তের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার তালতলা নতুন রাস্তা এলাকায় পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শিবিরের মিরপুর পূর্ব থানা সংগাঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন (২৩) নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত জসিম উদ্দিনের বাবার নাম আবদুর রাজ্জাক। তিনি রাজধানীর কাজী পাড়া মাদরাসায় লেখাপড়া করতেন। তার বাড়ি বরিশাল সদর উপজেলার পূর্ব কোন্দেলপাড়ায়। রাজধানীর মিরপুরের মনিপুরে থাকতেন তিনি।
নিহতের ভাই আনিসুর রহমান জানান, শনিবার সকালে লোক মারফত খবর পাই পুলিশ তার ভাই জসিম উদ্দিনকে ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু কোথা থেকে ধরে নিয়ে গেছে তা জানা যায়নি। পরবর্তীতে শেরেবাংলানগর, মিরপুর ও কাফরুল থানায় যোগাযোগ করলে পুলিশ আটকের কথা অস্বীকার করে। সকালে শেরেবাংলানগর থানা থেকে জানানো হয়, ঢাকা মেডিক্যালে একজনের লাশ পড়ে আছে, সেখানে খোঁজ নিতে পারেন। পরে ঢাকা মেডিক্যালে এসে লাশ শনাক্ত করেন আনিস।
তিনি আরো জানান, জসিম উদ্দিনের চোখের উপরে কপালের নিচে একটি এবং বুকে আরো আটটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। বুকে লাগা গুলিগুলো পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়।
শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুর রব জানান, রোববার ভোর ৪টার দিকে তালতলা নতুন রাস্তা এলাকায় ঘটনাস্থল থেকে জসিমের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার শিবিরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গতকাল বাসায় ফেরার পথে শেরেবাংলানগর থানা পুলিশ রাজধানীর শ্যামলীতে একটি লেগুনা গাড়ি থেকে জসিম উদ্দিনসহ চার শিবির নেতাকর্মী আটকের কথা জানানো হয়। তবে পুলিশ গতকাল আটকের কথা অস্বীকার করে। অপর তিনজন হলেন- ঢাকা পলিটেকনিকের ১ম বর্ষের ছাত্র সজিব, ঢাকা সিটি কলেজের ছাত্র আব্দুল মান্নান ও আব্দুল্লাহ।
এদিকে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এডিসি ওয়াহিদ আলম আজ দুপুরে জানান, শনিবার শ্যামলীতে পুলিশ সার্জেন্টের ওপর ককটেল হামলার অভিযোগে জসিমসহ চারজনকে আটক করা হয়। রোববার ভোরে ডিবি ও পুলিশের একটি যৌথ টিম তালতলা ডাম্পিং স্টেশনের কাছে আটকৃতদের নিয়ে অভিযানে গেলে দুর্বত্তরা তাদের ওপর গুলি চালায়। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে দুই পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে জসিম মারা যায়।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে শিবির নেতা এমদাদ উল্লাহকে গ্রেপ্তারের পর অস্বীকার করে পুলিশ। পরে তিনিও কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
যশোর অফিস জানায়, যশোরে র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে রাজু ওরফে ভাইপো রাজু (২৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত রাজু যশোর শহরের গাড়িখানা রোড এলাকার আজিবর রহমানের ছেলে।
র‌্যাব জানিয়েছে, রাতে রাজুকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে রাজুর সহযোগীরা র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি করে। এ সময় র‌্যাবও গুলি চালায়। গুলি বিনিময়কালে নিজের সহযোগীদের গুলিতে মারা যায় রাজু।
র‌্যাব যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর আশরাফ উদ্দিন জানান, একাধিক হত্যা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলার আসামি রাজুকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করে। রোববার শেষ রাতের দিকে র‌্যাব সদস্যরা তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে বের হয়। ভোর পাঁচটার দিকে শহরতলীর মুড়লিতে যশোর-খুলনা মহাড়কের পাশে পেট্রোল পাম্পের বিপরীতে  ইট ভাটার কাছে পৌঁছা মাত্রই রাজুর সহযোগীরা র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলি বিনিময়কালে পালাতে গিয়ে নিজের সহযোগীদের গুলিতে জখম হয় রাজু। এসময় তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মেজর আশরাফ আরো জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী রিভলবর ও একটি শার্টার গান এবং দুইটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে যশোরের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর এজেডএম ফিরোজের একমাত্র ছেলে অর্নব হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লায় পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে স্বপন মিয়া নামে এক বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। একই রাতে জেলার নাঙ্গলকোটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কারা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে স্থানীয় জামায়াত নেতা বেলায়েত ও বেলালাকে।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ওসি প্রশান্ত পাল জানান, রাত দেড়টার দিকে সদর দক্ষিণ উপজেলার ভাটপাড়া এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ স্বপন মিয়া (৪০) নিহত হয়েছেন। শনিবার সকালে সদর কোর্টবাড়ি এলাকা থেকে স্বপনকে গ্রেফতার করা হয়। রাত দেড়টার দিকে তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে বের হলে ভাটপাড়া এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে স্বপনের সহযোগীরা। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। উভয়পক্ষের গোলাগুলিতে স্বপন গুলিবিদ্ধ হন। রাত ২টার দিকে সদর দক্ষিণ থানার এসআই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আহত স্বপনকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন স্বপন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এবং স্থানীয় নেতা। এসময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে। রাত ৩টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহত স্বপন উপজেলার পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড এলাকার উত্তর রামপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার দৌলখাঁ ইউনিয়নের দুই জামায়াত নেতাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের একজন হচ্ছেন বাম গ্রামের মজুমদার বাড়ির আবদুল হালিম মজুমদারের ছেলে বেলায়েত হোসেন মজুমদার দুলাল (৪৮)। অপরজন হচ্ছেন একই গ্রামের পন্ডিত বাড়ির আলী হায়দার পন্ডিতের ছেলে বেলাল হোসেন পন্ডিত (৪০)।
পুলিশ জানায়, তাদেরকে লদুয়া এলাকা থেকে ১২টি ককটেল ও একটি পেট্রলবোমাসহ আটক করে পুলিশ। শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে তাদের আটক করা হয়। নাঙ্গলকোট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সালাউদ্দিন জানান, লদুয়া এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা নাশকতার চেষ্টা করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযানে গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এসময় পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে ককটেল ও পেট্রলবোমাসহ পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই দু’জনকে আটক করা হয়।
অন্যদিকে আহতদের পরিবার জানায়, পুলিশ তাদেরকে ঘুমন্ত অবস্থায় বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। রোববার সকালে তারা জানতে পারেন বেলায়েত ও বেলালকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কুমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত স্থানীয় জামায়াত নেতা বলায়েত হোসেন দুলাল ও বেলাল হোসেনকে পুলিশ গভীর রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে নাঙ্গলকোট থানায় নিয়ে আসে। পরে তাদের পায়ে গুলি করে গুরুতর আহত অবস্থায় নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। বেলায়েত হোসেন দুলাল কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক এবং বেলাল হোসেন ব্যবসায়ী। তারা দুইজনই স্থানীয় জামায়াতের নেতা বলে জানানো হয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে পরে তাদেরকে রাত ৩টার দিকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার। আহত বেলায়েত ও বেলালকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কারা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.