কনটেইনারের স্তূপ চট্টগ্রামে- ভোগ্যপণ্যের বাজারে ধস ক্ষতি ১২০০ কোটি by মহিউদ্দীন জুয়েল

হরতাল, অবরোধে ধস নেমে এসেছে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। গত ৪ দিনের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে এখানে ক্ষতি হয়েছে ১২০০ কোটি টাকা। কেবল তাই নয়, বন্দরের অভ্যন্তরে ২৫০০ কন্টেইনার পণ্য নিয়ে আটকা পড়ে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন একাধিক ব্যসায়ী নেতা। তারা বলেছেন, এভাবে অবরুদ্ধ পরিস্থিতি চলতে থাকলে তাদের পক্ষে ব্যবসা করা সম্ভব হবে না। কেননা, ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানির কাছে পরিস্থিতির কারণে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হয়েছে। যা একসময় বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি করবে বলে তাদের ধারণা। তাছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য খালাস ও সরবরাহ করতে না পারায় ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। সরজমিনে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন তাদের গড়ে ৪০০ কোটি টাকা লেনদেন হয় ভোগ্যপণ্য বিক্রি করে। এর মধ্যে বেশির ভাগই বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বড় ধরনের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে। যারা নগদ ও চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে ট্রাকবোঝাই করে পণ্যগুলো নিয়ে যায় দূরদূরান্তে। গত কয়েক দিনের অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই ভোগ্যপণ্যের বাজার থেকে কোন গাড়ি চট্টগ্রাম ছেড়ে যেতে পারেনি। যদিও সরকার থেকে পুলিশ প্রহরায় গাড়ি চালানোর ব্যাপারে আশ্বাস দেয়া হয়েছে কিন্তু তাতেও আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান একাধিক ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী নেতারা জানান, বিদেশ থেকে পণ্য নিয়ে জাহাজ ভিড়লেও তা অবরোধের কারণে খালাস হচ্ছে না। ফলে কন্টেইনার জমে থাকার কারণে বাজারে পণ্যের সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। এতে করে দামের ওপরও প্রভাব পড়ছে। যথাসময়ে এসব পণ্য পৌঁছে দিতে না পারায় ক্ষতির মাশুল দিতে হচ্ছে তাদের। বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য খালাস হলেও দূরের গুদামে পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে গত কয়েক দিন ধরে চট্টগ্রাম থেকে বাইরে পণ্য নিয়ে কোন পরিবহন যাচ্ছে না। একই সঙ্গে মহাসড়কে জ্বালাও, পোড়াও এর আশঙ্কায় কোন গাড়িও বন্দর নগরীতে আসছে না। অবরোধের কারণে বেড়ে গেছে ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহনের ভাড়া। হরতাল ছাড়া স্বাভাবিক সময়ে সীমান্ত এলাকা থেকে দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১০০০ ট্রাক প্রবেশ করে আসে দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। বিশেষ করে পিয়াজ, আদা, রসুনসহ কয়েক ধরনের পণ্য সরাসরি আমদানি হয় সড়কপথে। অবরোধের কারণে পিয়াজ পচনশীল হওয়ায় এগুলোর সরবরাহ নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন বড় ব্যসায়ীরা। একই সঙ্গে আদার গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেকে তাই ক্ষতি পোষানোর দুশ্চিন্তা করছেন। ৩ দিন আগে যে পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায়, গতকাল  তা প্রতি কেজি ৪৫ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এভাবে চলতে থাকলেও অন্য পণ্যগুলোর দামও বেড়ে যাবে বলে সচেতন ব্যবসায়ীদের ধারণা। জানতে চাইলে হরতাল অবরোধে ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগির আহমদ। তিনি বলেন, অবরোধের কারণে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে দিন ৩০০ কোটি টাকা। অথচ অন্যসময়ে ১০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয় এখানে। সীমান্ত দিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ যদি কোন নাশকতা হয় তাহলে তার দায়ভার নেবে কে। খাতুনগঞ্জের পিয়াজের আড়তদার মোহাম্মদ হানিফ বলেন, আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। জানিনা এভাবে কতদিন চলবে। অনেক পণ্য পচে যেতে শুরু করেছে। মাল নিয়ে দেশের দূরদূরান্ত থেকে কেউ আসতে চাইছে না। তারা বলেছে রাস্তায় নাকি আগুন দিয়ে গাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। এই অবস্থায় ক্ষতি ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছি না। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের একটি সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে আসা ভোগ্যপণ্যের আড়াই হাজার কন্টেইনার আটকা পড়ে রয়েছে সেখানে। এসব কন্টেইনারের সব ক‘টিতেই ভোগ্যপণ্যসহ নানান প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক জিনিসপত্র রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এসব কন্টেইনার ছাড়িয়ে নিতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। গতকাল সকালে বন্দরের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় সেখানে পণ্যবাহী ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যানের দীর্ঘ লাইন। বাইরে বসে আছেন অন্তত কয়েকশ’ ব্যবসায়ী।

No comments

Powered by Blogger.