শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। দীর্ঘদিন প্রেসিডেন্ট থাকা মাহিন্দা রাজাপাকসে পরাজয় মেনে নিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাজাপাকসে। কিন্তু আগাম এ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন রাজাপাকসের সরকারের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিরিসেনা। ২০০৫ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন মাহিন্দ রাজাপাকসে। তার শাসনামলেই তামিল বিদ্রোহীরা পরাজিত হয় এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে যান রাজাপাকসে। ধীরে ধীরে তার জনপ্রিয়তা কিছুটা খর্ব হতে থাকে। সর্বোচ্চ দুবার প্রেসিডেন্ট থাকার সাংবিধানিক নিয়ম পরিবর্তন করে তৃতীয়বার জয়লাভের আশায় আগেভাগেই নির্বাচন দেন রাজাপাকসে। এবারের আগাম নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়ার আশা করেছিলেন সরকারি দলের রাজনীতিবিদরা। কিন্তু তেমনটা হয় নি। দীর্ঘদিন পর ক্ষমতার পালাবদল প্রত্যক্ষ করতে চলেছে শ্রীলঙ্কাবাসী। রাজাপাকসের সাবেক সহকর্মী মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ৫১.২ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সিরিসেনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাজাপাকসের সমর্থকদের মতে, তিনি দেশটির বহুদিন ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন, অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করেছেন। তবে তার সমালোচকরা বলছেন, তিনি ক্রমেই কর্তৃত্বপরায়ণ ও দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠছিলেন। অপরদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও সাবেক সহযোগী সিরিসেনাকে নির্বাচনের আগেই শ্রীলঙ্কার তামিল ও মুসলিম নেতারা সমর্থনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন। তবে গতবার রাজাপাকসেকে ভোট দেয়া সংখ্যাগুরু সিংহলীদের ভোটও তিনি পেয়েছেন অনেক। নির্বাচনে জয়লাভের পর তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই প্রত্যেক শ্রীলঙ্কানকে এ বিজয় উদযাপন করতে দিতে হবে, তবে অন্যদের আঘাত বা অপমান না করে। আমি এ প্রক্রিয়া ভালবাসা ও সহানুভূতির মাধ্যমে এগিয়ে নেয়ার জন্য সবার সমর্থন আশা করছি। দুই মাসেরও কম সময়ের আগে, প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে যখন আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন, তখনও এই ফলাফল আঁচ করা ছিল অকল্পনীয়। তখন তার শক্ত প্রতিপক্ষ কেউ ছিলেন না। হঠাৎ করে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিরিসেনা পক্ষ বদল করলেন। তাকে সমর্থন দিলেন বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিক, পরবর্তীকালে সংখ্যালঘু নেতারা। সিরিসেনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে সবচেয়ে প্রধান ছিল, তিনি প্রেসিডেন্টের অসীম ক্ষমতা হ্রাস করবেন। এর ফলে তাকে বহু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সমর্থন দেয়। তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে, নিজের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা। অনেক শ্রীলঙ্কান নতুন প্রেসিডেন্ট পেয়েছেন বলেই না, বরং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কার্যকর আছে বলে খুবই খুশি। এছাড়া ভোট জালিয়াতি, হুমকি ও নির্বাচনী সহিংসতা ছিল খুবই কম, যেমনটা আগের নির্বাচনগুলোয় দেখা গেছে। ভোটার উপস্থিতি কোন কোন জায়গায় ছিল প্রায় ৭০%। নির্বাচনী প্রতিক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে এমন বড় কোন সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। তামিল অধ্যুষিত শক্ত এলাকা জাফনা ও ত্রিনকোমালিতে আগের জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে ভোটার উপস্থিতি বেড়েছে। এর আগে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক নিহতের খবর পাওয়া যেত। তবে এবার মাত্র একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

No comments

Powered by Blogger.