প্রতিবাদকারীদের মৃত্যুর তদন্ত, আটককৃতদের মুক্তির আহ্বান অ্যামনেস্টির

বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই প্রতিবাদকারীদের নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্ত এবং আটককৃতদের মুক্তি দিতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে বিশিষ্ট একজন সাংবাদিক এবং একজন বিরোধী দলের নেতা। আপাতদৃষ্টিতে প্রতীয়মান বিরোধী বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে এ সপ্তাহে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার রাতে পুলিশ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যু হয়। সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬ ব্যক্তি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নিহত হয়েছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ গবেষক আব্বাস ফয়েজ বলেন, অবিলম্বে এসব মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ ও স্বতন্ত্র তদন্ত শুরু করা এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের এক বছর পর আবারও বাংলাদেশে অস্থিরতা ফিরে এসেছে। ওই নির্বাচন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে। বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছিল। নির্বাচনের বছরপূর্তিতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সমর্থকদের রাজপথে নেমে অবরোধ পালনের আহ্বান জানান। পুলিশ ৫ই জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয় থেকে বের হতে দেয়া হয় নি। সপ্তাহের শুরুতে একুশে টিভির চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আটক হয়েছেন দলের অনেক নেতাকর্মী। সংস্থাটি বলেছে, এ দুজনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত- এমন অনেক ইঙ্গিত রয়েছে। মঙ্গলবার একুশে টিভিতে খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানের বক্তব্য সম্প্রচারের কয়েক ঘণ্টা পরই গ্রেপ্তার করা হয় আবদুস সালামকে। তার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনের অধীনে অভিযোগ আনা হয়েছে। নভেম্বর মাসে এক নারীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, পতিতাবৃত্তি নিয়ে একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করার ফলে তার সম্মানহানি হয়েছে। পরে একটি আদালত তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে গণমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এদিকে মির্জা ফখরুলকেও এ সপ্তাহে আটক করা হয়। দলের এক সভায় যোগ দেয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জনৈক পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সম্পৃক্ততা সন্দেহে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম সহিংস কোন কর্মকাণ্ডের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন বা সম্পৃক্ত হয়েছেন এমন কোন প্রমাণ নেই। আব্বাস ফয়েজ বলেন, এসব গ্রেপ্তার বাকস্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন তুলে ধরে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করতে হবে। নিজের অধিকার চর্চার কারণে কাউকে স্বেচ্ছাচারী গ্রেপ্তার, হয়রানি বা হুমকি-ধমকি দেয়া হবে না- সেটা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে তা করতে হবে। বিবৃতির শেষে বলা হয়, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নিয়মিত বাংলাদেশে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকীর্ণ হয়ে আসার বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। সরকার সমালোচকদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ এবং সম্প্রচার না করতে সংবাদপত্র এবং টিভি সম্পাদকরা চরম চাপে রয়েছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের বছরপূর্তিতে পুলিশ সব রকম সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পুলিশ বলেছে, তারা সরকার ও বিরোধী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ প্রতিহত করতে চায়। এ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিএনপি সমর্থক ও তাদের বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গত কয়েক দিনে ঢাকাসহ অনেকগুলো শহরে একাধিক বাস ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে বিরোধী সমর্থকদের বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালে বিরোধী দলের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে একশ’রও বেশি মানুষ নিহত হয়। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ উন্মুক্ত গুলি চালায়। সেসব মৃত্যুর কোনটাই এখনও যথাযথ তদন্ত বা বিচার করা হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.