লাখো মানুষের প্রতিবাদ মিছিল

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে একটি ব্যঙ্গ সাপ্তাহিক কার্যালয়ে ইসলামপন্থী বন্দুকধারীদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বৃহস্পতিবার নিহতদের স্মরণে দেশজুড়ে লক্ষাধিক মানুষ সমবেত হয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন নগরীতে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়েছেন। ইন্টারনেটে ব্যাপক হারে ‘আই অ্যাম শার্লি’ (আমিই শার্লি) লিখে হ্যাশ ট্যাগযুক্ত করে নিহতদের জন্য শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ সাতজনকে আটক করেছে। অভিযুক্ত তিনজনের মধ্যে সন্দেহভাজন কনিষ্ঠ হামলাকারী পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। বুধবারের ওই ঘটনায় ১২ জন নিহত হয়। খবর এএফপি, বিবিসি ও ফ্রান্স টুয়েন্টিফোরের। ফ্রান্সে বৃহস্পতিবার জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দ। বুধবার সন্ধ্যায় টেলিভিশনে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন। পাশাপাশি বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকার ঘোষণাও দেয়া হয়। ভাষণে ওলান্দ বলেন, ‘এই নারী ও পুরুষরা তাদের সেই বিশ্বাসের জন্য প্রাণ দিয়েছেন যা ফ্রান্সে ছিল, আর তা হচ্ছে স্বাধীনতা। আজ তারাই আমাদের বীর।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে ঐক্য। কোনোকিছুই আমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারবে না, কোনোকিছু আমাদের থামাতে পারবে না এবং কোনোকিছুই আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।’ বুধবার কালাশনিকভ রাইফেল ও রকেট লঞ্চার নিয়ে মুখোশ ও কালো পোশাক পরা তিন ব্যক্তি হামলা চালায়। এতে পত্রিকাটির অন্যতম প্রধান সম্পাদক স্তেফান শার্বনেয়ার, তিন ব্যঙ্গ-চিত্রশিল্পী উয়োলিন্স্কি, তিনু ও কাবু এবং পুলিশ সদস্যসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশের সন্দেহের তালিকা অনুসারে ওই হামলায় অংশ নেয়া ব্যক্তিরা হল দুই ভাই সাঈদ কোউয়াচি (৩৪) ও শরিফ কোউয়াচি (৩২) এবং হামিদ মুরাদ (১৮)। এর মধ্যে হামলায় অংশ নেয়া সন্দেহভাজন কনিষ্ঠ ব্যক্তি মুরাদ উত্তর ফ্রান্সের শার্লেভিল মেজিরেস পুলিশ স্টেশনে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে। পুলিশ বাকি দু’জন সন্ত্রাসী সাঈদ কোউয়াচি ও শরিফ কোউয়াচির ছবি প্রকাশ করেছে।
তাদের গ্রেফতারে এখন বিভিন্ন জায়গায় সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাদের দু’জনের কাছে অস্ত্র রয়েছে এবং তারা বিপজ্জনক বলে পুলিশ জানিয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার বিক্ষুব্ধ জনতা ঘটনাস্থল থেকে মাত্র আধা মাইলখানেক দূরত্বে অবস্থিত প্লেস দ্য লা রিপাবলিকে ঢুকে পড়ে। পুলিশ জানায়, প্যারিসে কমপক্ষে ৩৫ হাজার মানুষ নিহতদের স্মরণে এক প্রার্থনা সভায় মিলিত হন। লিওন ও তুলুস নগরীতে প্রায় ১০ হাজার লোক জড়ো হয়। বিশ্বনেতাদের নিন্দা, ইউরোপজুড়ে সতর্কতা : ফ্রান্সের কার্টুন পত্রিকায় হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বনেতারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, এ ঘটনা কাপুরুষ শয়তানের কাজ। সন্ত্রাসীরা মুক্ত গণমাধ্যমকে ভয় পায়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে এটাকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন বলে অভিহিত করেছে। পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, এই নৃশংসতার কোনোভাবে ন্যায্যতা দেয়া যায় না। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি তার গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দের কাছে পাঠানো এক শোক বার্তায় রানি ও তার স্বামী এ ঘটনায় হতাহতদের জন্য শোক প্রকাশ ও প্রার্থনা করেন। এদিকে ইউরোপজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.