বরিশাল বিসিক শিল্পনগর- মন্ত্রীদের আশ্বাসে বন্দী উন্নয়ন

২০১০ সালে বরিশাল বিসিক শিল্প নগরের উন্নয়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। চার বছর পর একই আশ্বাস দিয়েছেন বর্তমান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। তবুও এর উন্নয়ন বলতে কিছু হয়নি। এমন আশ্বাসের মধ্য দিয়েই বরিশাল বিসিক পার করেছে ৫৬ বছর। বরিশাল বিসিক শিল্প নগরের কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিসিক প্রতিষ্ঠার পর এর উন্নয়নে কোনো বরাদ্দ আসেনি। কিছুদিন আগে ১২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তা দিয়ে জরাজীর্ণ বিসিক ভবনের ছাদ ও দুটি পুকুরপাড় সংস্কার করা হয়েছে। সীমানাপ্রাচীর না থাকায় চুরি হচ্ছে লাইনের তার ও অন্যান্য সরঞ্জাম। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রধান সড়ক বাদে বিসিক এলাকার অধিকাংশ সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী। বিসিক ভবনটিও জরাজীর্ণ। গ্যাস নেই। বিদ্যুৎব্যবস্থাও পর্যাপ্ত নয়। সন্ধ্যার পর অধিকাংশ এলাকা থাকে অন্ধকারে। নেই কোনো সীমানাপ্রাচীর। রয়েছে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের উৎপাত। এসব কারণে বরাদ্দ নেওয়ার পরও খালি পড়ে রয়েছে অধিকাংশ প্লট। অধিকাংশ সময়ই সেখানে গরু-ছাগল চরে বেড়ায়।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া ২০১০ সালের ২৪ নভেম্বর পরিদর্শনে এসে বিসিককে আধুনিকায়নের আশ্বাস দেন। ওই সময় তিনি বলেন, বরিশাল বিসিকের আধুনিকায়নে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরের মধ্যে অবকাঠামো, প্রাচীর, সড়ক, নর্দমা ও বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান করা হবে। চার বছরেও মন্ত্রীর ওই আশ্বাসের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। এমন বাস্তবতায় বর্তমান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুও শোনালেন আশ্বাসের বাণী। গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে বরিশাল বিসিক এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদেই বিসিকের সব সমস্যা সমাধান করা হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিকের কয়েকজন ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, বিসিকের উন্নয়নে শুধু মন্ত্রীদের আশ্বাসই পাওয়া গেছে। বাস্তবে উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেই। সে কারণে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। নামমাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে বরিশাল বিসিক শিল্প নগর চলছে।
বরিশাল বিসিক সূত্র জানায়, ১৯৬০ সালের ৯ জানুয়ারি ১৩১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩০ দশমিক ৬১ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে বরিশাল বিসিক শিল্প নগর। মোট সম্পত্তির ৯৯ দশমিক ৯৫ একর ভূমিতে প্লট করা হয়েছে। বাকি সম্পত্তিতে বিসিক ভবন, সড়ক ও নর্দমার জন্য রাখা হয়। ৪৬৩টি প্লটের মধ্যে ৩৩০টি উন্নত, ১৩৩টি অনুন্নত প্লট। ৩৩৯টি প্লট বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উন্নত ও অনুন্নত মিলে মোট ৪৭টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে। চালু হওয়ার পর বন্ধ হয়ে গেছে ২২টি প্রতিষ্ঠান।
বিসিকের শিল্প উদ্যোক্তা অনন্যা ফুডস ও ফ্লাওয়ার মিলের মালিক শামসুদ্দিন আলম অভিযোগ করেন, বিসিকের মূল সমস্যা কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা। এ ছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা, সড়কের খারাপ অবস্থা ও নিরাপত্তার অভাবে উদ্যোক্তারা বিসিকের প্রতি আগ্রহ দেখায় না। বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক নগেন্দ্রনাথ পাল বলেন, আগে শিল্পমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি ছিল মৌখিক। এর কারণে বরাদ্দ আসেনি। এবার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিসিকের অনুন্নত ৩০ একরসহ সব রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, ড্রেন-কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। আগে এর উন্নয়ন না হলেও গত চার বছর ধরে বিসিক এগোচ্ছে। বর্তমানে ২৮ লাখ টাকায় বিসিক ভবন ও আশপাশের কিছু কাজ করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.