শমসের মবিন রিমান্ডে- সিলেটে হরতাল

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল বিকালে পুলিশের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক। শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এ কে এম সাইদুল হক ভূঁইয়া বিকালে শমসের মবিনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। অন্যদিকে বিএনপির আইনজীবীরা শমসের মবিন চৌধুরীর জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানির পর বিচারক তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ ও শমসের মবিন চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে সিলেটে রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় শমসের মবিন চৌধুরীকে বনানীর ডিওএইচএসের মসজিদ রোডের ৯২/এ নম্বর বাড়ি থেকে আটক করে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের পূর্ব বিভাগ। এ সময় শমসের মবিনের স্ত্রী শাহেদা ইয়াসমিন ডিবি পুলিশের সদস্যদের কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চান। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি সেখানে গেলে ডিবি পুলিশের সদস্যরা শমসের মবিনকে আটক করে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান জানান, ২৪শে ডিসেম্বর রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে নেত্রকোনা-১ আসনের এমপি ছবি বিশ্বাসের ওপর হামলা এবং তার গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। এ ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা এবং পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করে। দায়েরকৃত মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শাহবাগ থানা সূত্র জানায়, ওই মামলার এজাহারে আসামির তালিকায় ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আবদুল আওয়াল মিন্টু, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম থাকলেও শমসের মবিনের নাম নেই। তাকে আটকের খবরের পড়েই তার পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়স্বজনসহ বিএনপির বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন। তবে কাউকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে তার জন্য ওষুধ ও কাপড় নিলেও কোন খাবার গ্রহণ করেনি পুলিশ। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় শমসের মবিন চৌধুরীকে শাহবাগ থানার পরিদর্শক শহিদুল হক ভূঁইয়া ঢাকা মহানগর হাকিম ইমদাদুল হকের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন পিপি আবদুল্লাহ আবু। আর আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও অ্যাডভোকেট মাসুদ তালুকদার। শুনানিতে আবদুল্লাহ আবু আদালতে বলেন, আসামিকে পুলিশ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে নাশকতার সৃষ্টিতে উসকানি দিয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নাশকতার অনেক গোপন তথ্য বের হয়ে আসবে। আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া শমসের মবিনের জামিন আবেদন করে আদালতকে বলেন, ছবি বিশ্বাসের ওপর হামলার ঘটনায় শমসের মবিনকে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে অথচ ওই মামলায় এজাহারে তার নাম নেই। পুলিশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তার জামিনের বিরোধিতা করেন। তখন আদালতে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত হলে আদালত শমসের মবিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। শমসের মবিন চৌধুরীর স্ত্রী শাহেদা ইয়াসমিন চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, শমসের মবিন চৌধুরীর নামে কোন মামলা নেই। কোন ওয়ারেন্ট বা অভিযোগ ছাড়াই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কাল সিলেটে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল
সিলেট অফিস জানায়, শমসের মবিন চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কাল (রোববার) সিলেট জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জেলা এবং মহানগর বিএনপি। গতকাল সন্ধ্যায় সিলেট জেলা এবং মহানগর বিএনপির যৌথসভায় এ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নূরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ এম এ হক, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম, জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুল গাফ্‌ফার, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব বদরুজ্জামান সেলিম, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাবীবুর রহমান হাবীব, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহমদ, যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, যুগ্ম আহ্বায়ক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ন কবির শাহীন, আজমল বখত্‌ চৌধুরী সাদেক, মহানগর বিএনপির সদস্য মিফতাহ সিদ্দিকী, এমদাদ হোসেন চৌধুরী ও ডা. নাজমুল ইসলাম প্রমুখ। সিলেট বিএনপি আহূত রোববারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালকে সফল করার জন্য সিলেটবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আওয়ামী অবৈধ সরকার জুলুম, নির্যাতনের সব সীমা অতিক্রম করে চলেছে। বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে টানা অবরোধ সফল হতে দেখে সরকার উন্মাদ হয়ে একের পর এক শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করছে। হামলা-মামলা-নির্যাতন চালিয়ে চলমান আন্দোলন নস্যাতের বাকশালী ষড়যন্ত্র জাতি সফল হতে দেবে না। অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে হবে। এদিকে, সকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা ও মহানগর বিএনপি। মিছিল থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ও ছাত্রদল নেতা আবদুল্লাহ সাফি সাহেদের মুক্তির দাবি জানানো হয়। মিছিল ও সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান হাবিব, মিফতাহ সিদ্দিকী, মাহবুব চৌধুরী, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন, যুবদল নেতা হোসেন আহমদ রুহুল, বিএনপি নেতা মামুনুর রহমান মামুন, আল মামুন খান, রুহুল কুদ্দুস হামজা, সিরাজুল ইসলাম, মো. কাওছার চৌধুরী, আজিজুর আহমদ আজিজ, আলী রুবেল, ওয়াহিদুস সামাদ পাপ্পু, মনজুর হোসেন মজনু, রুবেল আহমদ, গিয়াস উদ্দিন, মাহবুব আলম, মামুন আহমদ মজনু, মর্তুজা আহমদ, কাওছার হোসেন রকি, হোসেন খান এমাদ, এমরান হোসেন লিটন, রুমেল আহমদ, নুরুল হোসেন, আরিফ হোসেন জয়, নাহিদ হোসেন, রাসেল আহমদ, শাহীন শাহ, মন্‌জুর আহমদ, জাহাঙ্গীর আহমদ, রুবেল আহমদ, জুবেল আহমদ, জামাল আহমদ, সজল আহমদ প্রমুখ। এদিকে, দক্ষিণ সুরমায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তবে পুলিশ আসার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীরা দৌড়ে পালিয়ে যান। সকাল ৯টায় দক্ষিণ সুরমার পুরনো রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ সফল করতে বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ সুরমার পুরনো রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় যান জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কয়েক নেতাকর্মী। তারা পুরনো রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করেন। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তারা টায়ারে আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ আগুন নিভিয়ে ফেলে। অবরোধ চলাকালে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপি নেতারা বলেছেন, অবৈধ আওয়ামী সরকার দেশপ্রেমিক জনতার আন্দোলন দমিয়ে রাখতে হামলা-মামলা-গ্রেপ্তার-নির্যাতনের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। গতকাল ২০ দলীয় জোট কেন্দ্র আহূত টানা অবরোধ চলাকালে দক্ষিণ সুরমায় ঢাকা-সিলেট রাজপথ অবরোধ করে মিছিল-সমাবেশ করেছেন দক্ষিণ সুরমা বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মিছিল-পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতারা এ কথা বলেন। মিছিল-পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপি-ছাত্রদল-যুবদল নেতাদের মধ্য থেকে আলাউদ্দিন আলাই, শাহ মাহমুদ আলী, আবদুর রহিম, আশরাফ বাহার, আবদুল আহাদ, রুহুল আহমদ কালাম, মোশতাক আহমদ, আবদুল মুক্তাদির খান, দেলোয়ার আহমদ, মামুন আহমদ, আল-মামুন, আশরাফ উদ্দিন আলিম, খলিল আহমদ, আলাউদ্দিন, আবু রায়হান রাজু, মো. শাহজাহান আহমদ, আবদুর রশিদ, জাকির আহমদ, মেহেদী হাসান সাজাই, মাসুদ আহমদ ও সোহাগ আহমদ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.