জৈবপ্রযুক্তিনির্ভর ওষুধ ও পণ্যের বাজারে প্রবেশের প্রস্তুতি নিতে হবে

(জৈবপ্রযুক্তিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী) জৈবপ্রযুক্তিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, বিশ্বজুড়ে জৈবপ্রযুক্তিনির্ভর ওষুধ ও কৃষিপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। একসময় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোই এসব পণ্য উদ্ভাবন ও উৎপাদন করত। এখন চীন ও ভারতের মতো দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলো এ খাতে এগিয়ে আসছে। বাংলাদেশের জৈবপ্রযুক্তিবিদদেরও জৈবপ্রযুক্তির এই জগতে প্রবেশের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও শিল্পের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। রাজধানীতে গতকাল শুক্রবার ‘স্বাস্থ্য এবং কৃষিক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে’-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এ সম্মেলন হচ্ছে। আজ শনিবার দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের শেষ দিন। সম্মেলনের আয়োজক গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশি বায়োটেকনোলজিস্টস (জিএনওবিবি)।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জৈবপ্রযুক্তি গবেষণার ওপর জোর দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন কৃষির জন্য বড় হুমকি। লবণাক্ততা আমাদের উপকূলীয় এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের চাপ সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন করতে হবে।’
মতিয়া চৌধুরী সম্প্রতি সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী জাহাজডুবির কারণে তেল ছড়িয়ে পড়ার বিপর্যয়ের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তেল খেয়ে এর ক্ষতি করার কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে পারে এমন ব্যাকটেরিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নাসরিন আহমাদ বলেন, গবেষণার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জিএনওবিবির প্রতিষ্ঠাতা সমন্বয়ক আহমেদ শামসুল ইসলাম এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) টিকা বিজ্ঞান কেন্দ্রের পরিচালক ফিরদাউসী কাদরী।
আইসিডিডিআরবির বায়োসেফটি ও বিএসএল-৩ ল্যাবরেটরির প্রধান আসাদুল গনি বলেন, বিশ্বে প্রতিবছর দেড় কোটি মানুষ সংক্রামক রোগে মারা যায়। জৈবপ্রযুক্তির উন্নয়ন এবং জৈবনিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে এই মৃত্যু অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।
যুক্তরাজ্যের জৈবপ্রযুক্তিবিষয়ক সংস্থা ইমুউনসিসের পরিচালক মসি আলম বলেন, ২০১৬ সালে বিশ্বে জৈববস্তুনির্ভর ওষুধের বাজার ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এই বাজার ধরার জন্য চীন ও ভারত ইতিমধ্যে গবেষণা এবং শিল্প খাতে প্রস্তুতি নিয়েছে। বাংলাদেশও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে পারলে এই বাজারে অংশ নিয়ে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জৈবপ্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণা বাড়াতে হবে। ওষুধ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানাগুলো জৈবপ্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণা বাড়াতে পারে।
জিএনওবিবির দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এ বছর। এবারের সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪০০ বিজ্ঞানী অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনের শুরুতে পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী বিজ্ঞানী প্রয়াত মাকসুদুল আলমকে মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.