মাতৃক্রোড় by জয়দীপ দে

জিপিএসের প্রয়োজন ছিল না, তিন রাস্তার মাথার ওপর দাঁড়ানো সেগুনগাছটাই নির্দেশ করে দিত তার অবস্থান। কলোনির ভেতরে ঢোকার বা বেরোবার মুখে একবার তার সঙ্গে দেখা হতো। সেই দর্শন অনিবার্য। তার পরও তা এড়ানোর জন্য হাজারো ফন্দি-ফিকির চলত আমাদের। ও একবার নৌকার ছইয়ের মতো ঘরটার ভেতরে ঢুকলে, এক নিঃশ্বাসে পেরিয়ে যেতাম সেগুনগাছের সীমানাটুকুন। তখনই পেছন থেকে ডাক পড়ত, ও বাজান কুনায় যওর... ইস্কুলোর ঘণ্টা হইচ্ছে নি...। মনে মনে উত্তর করতাম, স্কুলের ঘণ্টা দিয়ে তোমার কাজ কী? তুমি রাস্তায় বসে বসে ‘ও ভাই দু-গা টিঁয়া সাইয্য করি যান’ বলো। কিন্তু উত্তর করার সাহস হতো না। এমনকি পেছন ফেরারও। বরং এক দৌড়ে মিশে যেতাম লোকারণ্যে।
লেংড়ি ছিল আমাদের জন্য এক মূর্তিমান আতঙ্ক। এ রকম একটা শয়তানকে কলোনির মুখে থাকতে দেওয়ার অর্থ কী, সেটাই ঘুরপাক খেত আমাদের মাথায়। প্রশ্নের উত্তর আমরা পেতাম না, উল্টো আরও কিছু ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হতো আমাদের ছোট ছোট বুকগুলোর ভেতর। ‘তাড়াতাড়ি খেয়ে নে’, নইলে লেংড়ি এলে পালানোর শক্তি পাবি না।’
চোখ দুটো গোল গোল করে ভাতের লোকমা ভরা হাতটা নাচাতে নাচাতে মা বলত। সেই ভয়ে অরুচিকর খাবারগুলো দিব্যি গলা বেয়ে নেমে যেত পাকস্থলীতে। আমরা মনে মনে ভাবতাম, বড়োরাই বুঝি এই লেংড়িকে পুষছে আমাদের শায়েস্তা করার জন্য। তার ভয়ে আমরা যেন সব সময় লক্ষ্মটি হয়ে থাকি। এত ভয়, এত উদ্বেগের পরও তাকে নিয়ে ছিল আমাদের রাজ্যের কৌতূহল। খেলার মাঠে দাঁড়িয়ে দেখতাম ওকে। একহারা গড়নের এক মহিলা। গায়ের রং একসময় হয়তো ফরসা ছিল, পরে রোদে-জলে মজে গেছে। সব সময় ছোট্ট একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে থাকে সেগুনগাছটার নিচে। হাঁটে একটা পা ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে। পরনে নোংরা পাটের শাড়ি। লোকজন দেখলে টিনের থালাটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘ও ভাই দু-গা টিঁয়া সাইয্য করি যান’। আমাদের মতো ছোট্ট বাচ্চাদের পেলে সুর পাল্টে যায়। আদুরে গলায় কাছে ডাকে। কিন্তু আমরা ভুলেও সাড়া দিই না তার ডাকে। সাড়া দিলেই বিপদ। কলোনির মা-খালাদের ভাষ্য, লেংড়ি নাকি বাচ্চা কেনাবেচার ব্যবসা করে। অনেকেই তার কাছ থেকে বাচ্চা কিনে নিয়ে পালে।
২. এই বাচ্চা-চোর লেংড়িকে দেখে দেখেই আমাদের বড়ো হওয়া। কিন্তু ওর কোলের বাচ্চাটা কোনো দিন বড়ো হয় না। ছোট্ট একটা দুগ্ধপোষ্য বাচ্চা সব সময় তার বুকের ওমে লেগে থাকে। তখনো এসব বুঝে ওঠার বয়স হয়নি। যেমন বয়স হয়নি ‘লেংড়ির বাচ্চা’ গালিটার অর্থ বোঝার। খেলার মাঠে একটা কিছু হলেই কলোনির একটা বাচ্চা আরেকটা বাচ্চাকে লেংড়ির বাচ্চা বলে গালি দিত। এই গালির ব্যুৎপত্তি আমাদের জানা ছিল না। অনুমান, কারও মা-বাবার দাম্পত্য কলহ থেকে ফসকে গেছে শব্দটা। কিন্তু গালিটা যে খুব অপমানের, সেটা বুঝতে কষ্ট হতো না। এই গালি নিয়ে খুনোখুনির মতো দশা হয়ে যেত। পাড়ার মা-খালারা প্রায় ফিসফিস করে বলত, সাইফুল সাহেবের পোলাটা দেখছেন, একেবারে মা-বাবার মতো হয়নি... আরেকজন কৌতূহলী চোখ মেলে বলত, হবে কেমনে, বাচ্চাটা তো লেংড়ির কাছ থেকে— আমাদের দেখে তারা স্মাগলারদের মতো টুপ করে কথা গিলে ফেলত। আমি বা আমরা অবাক হই, লেংড়ি এত বাচ্চা পায় কই! নিশ্চয়ই এর-ওর বাচ্চা চুরি করে এনে বেচে দেয়। ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসত। লেংড়ির রোদে পোড়া মুখটার সঙ্গে হরর ছবির ডাইনিদের মুখের অদ্ভুত সাদৃশ ভেসে উঠত মনের পর্দায়। ভয়ের চোটে রাতে চোখের পাতাটা পর্যন্ত নামতে চাইত না।
৩. লেংড়ির স্বামীটা সারা দিন ছইয়ের তলায় বসে রান্নাবাটি খেলত। অল্প অল্প ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকত তাদের ছোট্ট ডেরাটা। কাছে গেলে ভাতের বলক দেওয়ার শব্দ শোনা যেত। সেই রান্নার ধোঁয়া, ভাতের বলক আমাদের মনে রহস্যের ইন্দ্রজাল বুনে দিত। মন চাইত, গিয়ে দেখি কী হয় ডাইনির আস্তানায়। কিন্তু সেই সেগুন গাছ, লেংড়ির পোষা লেঠেলের মতো বড়ো বড়ো সবুজ পাতা নাড়িয়ে চোখ পাকাত। শোঁ শোঁ শব্দ আসত দূরের পাহাড়গুলো থেকে। কী জানি, ডাইনিটা এই বুঝি উড়ে এসে ছোঁ মারবে আমাদের পিঠে! নিয়ে যাবে অচিন কোনো দেশে। বিক্রি করে দেবে সেখানকার নিঃসন্তান কোনো বাবা-মায়ের কাছে। কোনো দিন আর ফেরা হবে না এত দিনের পরিচিত গৃহকোণে। মা-বাবার মুখটা স্মরণ করে অবোধ কান্নায় ভেঙে পড়ি। দূর থেকে দেখি, হলদে হলদে দাঁতগুলো বের করে হাসছে লেংড়ি। নোংরা পুঁটলির ভেতর থেকে হাত বের করে ইশারায় ডাকছে আমাকে। চোখ-মুখ বন্ধ করে খিঁচিয়ে একটা দৌড় লাগাই। মায়ের উষ্ণ বুকে মাথা গুঁজে কাঁদি। এর মধ্যেই দেখা গেল লেংড়ি অন্যরূপে হাজির—ছোট্ট একটা করগেটেড বক্সের ওপর গোটা চারেক বৈয়াম সাজিয়ে রেখেছে। তাতে আটানা দামের নাবিস্কো লজেন্স আর গ্লুকোজ বিস্কিট। কাঠি লজেন্স ছিল কি না মনে নেই। আমরা অবাক হয়ে দেখি লেংড়ি দোকান পেতে বসেছে। কিন্তু কে কিনবে তার বিস্কিট-লজেন্স। বাচ্চারা তো ভয়েই তার পাশ ঘেঁষে না। তাই তার পুরোনো পেশাটি ছাড়ল না সে। দোকানে বসে বসেই সে ঘ্যান ঘ্যান করে বলত, ‘ও ভাই দু-গা টিঁয়া সাইয্য করি যান’। এভাবে তার পুরোনো পেশা আর নতুন পাতানো ব্যবসা চলতে লাগল সমান্তরাল।
৪. জাদুটা লজেন্সের না বিস্কিটের মনে নেই। ছোট্ট বাচ্চারা ভয়ের কাটা সরিয়ে আসতে লাগল সেগুনগাছটার গোড়ায়। দিনে দু-চারটা লজেন্স বিক্রি হতে শুরু করল লেংড়ির দোকান থেকে। মা-খালারা এ নিয়ে ভীষণ-উদ্বিগ্ন, সাবধান ওর কাছে যাবি না, যদি নিয়ে পালায় বুঝবি— অমৃতের আকর্ষণে অনেক বড়ো ঝুঁকিও তুচ্ছ হয়ে যায়। আমাদের ক্ষেত্রে সেটাই হতে লাগল। হ্যাংলার মতো গিয়ে আমরা দাঁড়াই তার ছোট্ট পসরাটার সামনে। বুকের সব শক্তি ছেড়ে দিয়ে লেংড়ির কোলের বাচ্চাটা যেন কাঁদে। বাচ্চা সামলাতে সামলাতে আমাদের দিকে তাকায় লেংড়ি। ছাতা-পড়া মুখ উজ্জ্বল করে হেসে ওঠে, ও বাজান লজেন্স নিবা— মনের ভেতরে ভয় দাগ কাটে, ওর লজেন্সে কোনো মন্ত্র পড়া নেই তো! এ তার বাচ্চা চুরির কোনো বাহানা নয় তো? ভয়ে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। উল্টো ঘুরেই ছুট লাগাই। অন্যদের দেখাদেখি একসময় ভয় ভেঙে যায়। আটানায় পাওয়া লজেন্সে লেংড়ি আসলে অমৃত পুরে দিয়েছে। দিনে এক দুইবার ওর দোকানে গিয়ে লজেন্স কিনি। লেংড়ির যতটা না লজেন্স বিক্রির আগ্রহ তার চেয়ে বেশি কথা বলার।
ও বাজান তোঁয়ার নাম কিও...
কোনায় থাহো...
আইজ কি দি ভাইত খাইছো...
রাজ্যের সব প্রশ্ন তার। বিরক্তিতে এড়িয়ে যাই।
৫. আস্তে আস্তে লেংড়ির কথার ফাঁদে পড়ে যাই আমরা। রাজ্যের সব গল্প তার জানা। কোথাকার কোন সোনাগাজি, মহীপাল কিংবা কমলাপুর সদরঘাট...সব সে প্রায়-নিশ্চল পা খানা টেনে টেনে ঘুরে বেড়িয়েছে। সে সেসব গল্প আমাদের বলে। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনি। নোংরা বসনের ছাতা-পড়া মুখের লেংড়িকে আর ডাইনি লাগে না। ভালোই মনে হয়। মনে হয় তার বুকটাও আমাদের মা-খালাদের মতো মমতা দিয়ে গড়া। কেন যেন লেংড়ি আমাকে একটু বেশিই স্নেহ করত। দুটো চাইলে তিনটে লজেন্স ধরিয়ে দিত। ‘আর আটানা তো নাই’ বললে সস্নেহে মাথায় হাত রেখে বলত, লাগবে না। গ্রীষ্ম কিংবা শরতের ছুটি পেলে ঘণ্টা কে ঘণ্টা বসে থাকতাম লেংড়ির দোকানের পাশে। লেংড়ি কোথা থেকে যেন চুরি করে আনা পেয়ারা আমার হাতে দিয়ে খেতে বলত। প্রথম প্রথম সংকোচ হতো, তারপর চেয়ে নিয়ে খেতাম। মা এসব দেখলে বাসায় নিয়ে দু-গালে চটাস চটাস লাগাত। আর অগ্নিগর্ভ মুখ করে বলত, সাবধান ওদিকে যাবি না, লোকে খারাপ বলবে। লেংড়ির সঙ্গে কথা হতো রাজ্যের সব বিষয় নিয়ে। এর মধ্যে এক দিন দেখা গেল তার দোকান বন্ধ। ছইয়ের ভেতরেও কেউ নেই। দিন দুয়েক পর লেংড়ি ফিরল ছোট্ট একটা ইঁদুরের বাচ্চার মতো শিশুকে কোলে নিয়ে। আর আগেরটা হামাগুড়ি দিচ্ছে মাটিতে।
৬. দুপুরে ঘুম পাড়ানো ছিল মায়ের জন্য এক যুদ্ধ। দুপুরে না ঘুমালে রাতে পড়তে বসলে ঝিমুবি, এই অজুহাতে মা ধরেবেঁধে শুইয়ে দিত বিছানায়। ঘুমের ভান করে শুইয়ে থাকতাম। মা রান্না ঘরের কাজ সেরে যেই একটু বিছানায় মাথা দিত, এই সুযোগে ছুট লাগাতাম। বাইরে এসে দেখতাম কেউ নেই পথেঘাটে। মাঠটাও শূন্য। ঝিম ঝিম করছে চারিধার। গুটি গুটি পায়ে হাজির হতাম লেংড়ির ডেরায়। কী বাজান, ঘুম আয় ন— মাথা নাড়াই। লেংড়ি তার নানার পোষা জিনটার গল্প বলে। তার কোলের বাচ্চাটা কিছুক্ষণ কেঁদে ঘুমিয়ে পড়ে। নিঃশব্দ চরাচর। আমি ডুবে যাই লেংড়ির গল্পের জগতে। তার কিছু কথা, কিছু বুঝি কিছু বুঝি না। তবে অবোধ্যটা বোধ্য হয়ে ওঠে তার কথকী ঢঙের কারণে। অজান্তেই কখন মাথাটা রাখি তার কোলে। চারদিকে যেন স্বপ্নের প্রজাপতি ওড়ে। জিন, পাখাওলা ঘোড়া—বোরাক, সোলেমান বাদশা...সবাই এসে ঘিরে ধরে আমাকে। ভুলে যাই কোনো কালে এ কলোনিতে ছিলাম আমি। কারখানার সিটিতে বোরাক, জিন কিংবা সোলেমান বাদশা সবাই ভয়ে পালায়। দলে দলে লোকজন ফিরতে থাকে কারখানা থেকে। লেংড়ি নড়েচড়ে বসে। টিনের থালাটা সামনে টেনে নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করে বলতে লাগে, ‘ও ভাই দু-গা টিঁয়া সাইয্য করি যান’। কেউ তেমন একটা পয়সাকড়ি দেয় না। তাই বলে লেংড়িও থামায় না তার সংগীতচর্চা । মাঝবয়সী এক ভদ্রলোক এসে দাঁড়ায় তার সামনে। দুটো আটানার কয়েন ছুড়ে দিয়ে বলল, ইসমাইল সাবরে মনে আছে। জে। উনি পাঠাইছেন তোমার কাছে। বুইচচি সার। কিন্তু এহন তো বাইচ্চা অইত ন।
এইটা না দাও, পেটের টা দাও...
এর পরের কথোপকথন আর আমার কানে ঢোকেনি। স্তম্ভিত হয়ে চেয়ে রইলাম কোলের বাচ্চাটির দিকে।
৭. সব গল্পের শেষ আছে। আমাদের লেংড়ির গল্পও শেষের দিকে। একবার হইচই পড়ল পাড়ায়। এ কলোনির ওমুকের ছেলে সে কলোনির তমুকের ছেলে উধাও। সাপ্তা খানেকের জন্য আমাদের স্কুলে যাওয়াই বন্ধ হয়ে গেল। মেঘনা না যমুনা কোনো এক নদীর ওপর সেতু তোলা হবে। সে জন্য ছোট ছোট বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এদের নাকি ছুড়ে দেওয়া হবে নদীর বুকে। এতে নাকি তৃপ্ত হবে নদী। অনুমতি দেবে ব্রিজ করার। তাই এই ছেলে ধরার তোড়জোড়। ভয়ে সিঁটিয়ে যাই আমরা। ওয়েলফেয়ার কমিটির মিটিং বসে। আলোচনা হয় এই ছেলে ধরা নিয়ে। সবাই একমত, অনেক হয়েছে, আর লেংড়িকে বাড়তে দেওয়া যায় না। তার সঙ্গে ওই ছেলেধরাদের যোগাযোগ অনেক দিনের। সে এর-ওর জন্য বাচ্চা জুটিয়ে দেয়। কানেকশন না থাকলে কোত্থেকে পায় এই বাচ্চাগুলো। এখন যে বাচ্চারা উধাও হয়ে যাচ্ছে এর পেছনে যে ওর হাত নেই, তারই বা গ্যারান্টি কী। পরের দিন ছিল শুক্রবার। সকালে সবাই জড়ো হলো সেগুনগাছের তলায়। সবাই বলতে সবাই বড়, ছোট, মেজো—সবাই। আমরাও গেলাম আমাদের বাবাদের পিছু পিছু। ওয়েলফেয়ার কমিটির সভাপতি গড়নের দিক দিয়ে যেন ছোটখাটো একটা মাংসের কনটেইনার। প্রথম হুংকারটা এল তার কণ্ঠ থেকে, অনেক দিন তো থাকলা এইবার বিদায় হও।
কিললাই! আঁই কিইচ্চি (করেছি)?
কইছি যাইবা, যাও—
চারদিকে শোরগোল শুরু হলো। কেউ উদ্যত হলো মার দিতে। কেউ গাল ছুড়ল লেংড়িকে। পুলিশের ভয়ও দেখানো হলো। লেংড়ি নাছোড়। সুরে সুরে কাঁদতে লাগল, আঁই যাইতান ন, আঁরে মারি হালাইলেও যাইতান ন...
কিসের জন্য তুই যাবি না, কী আছে তোর এই খানে?
আঁর পোলাপাইন... ইগুনরে দেখি আঁর বুক জুড়ায়। আঁরে মারি হালাইলেও আঁই যাইতান ন... কলোনির ভদ্রলোকেরা থতমত খেয়ে যান। পরস্পর পরস্পরের দিকে চাওয়া-চাওয়ি শুরু করেন।

No comments

Powered by Blogger.