টানা অবরোধে বিপর্যস্ত জনজীবন

বিরোধী জোটের ডাকা টানা অবরোধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। কিছু রুটে স্বল্প সংখ্যক বাস ছাড়লেও নিরাপত্তাহীনতার কারণে যাত্রীর সংখ্যা ছিল কম। পুলিশ এবং বিজিবির নিরাপত্তার মধ্যেই কিছু বাসে হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ পাহারায় যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হলেও অবরোধকারীদের হামলায় তা ব্যর্থ হয়। এ অচলাবস্থায় বন্দরগুলোয় পণ্যবাহী গাড়ি আটকে থাকায় রাজধানীতে পণ্য সরবরাহ কমে গেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এদিকে গতকাল ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ। অবরোধের চতুর্থ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। রাজধানীতে আইনমন্ত্রীর বাসা লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা। ফেনীতে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। বগুড়ায় পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষে ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে আরও ২ জন। ফেনী, বরিশাল, যশোর, গাইবান্ধা, নেত্রকোনা, মুন্সিগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। নাশকতার আশঙ্কায় সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আটকা পড়েছে পণ্যবাহী ট্রাক। নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, গাজীপুর, ঠাকুরগাঁও, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, চাঁপাই নবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও গণগ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি চেয়ারপারসনকে অবরুদ্ধ রাখা ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ ফরিদপুরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। রাজধানীতে তিনটি গাড়িতে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ:  রাজধানীর পৃথক স্থানে তিনটি গাড়িতে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করছে পুলিশ। এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত ও গতকাল এ ঘটনা ঘটে। সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১টায় গেন্ডারিয়া স্টেশনের পাশের রাস্তায় একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর চালায় কয়েকজন যুবক। ভাঙচুরের পর তারা ওই প্রাইভেট কারে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ওই প্রাইভেট কারটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। পরে ওই প্রাইভেট কারটি পুলিশ গেন্ডারিয়া থানায় নিয়ে যায়। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার রাত ২টায় তেজগাঁওয়ের শিল্পাঞ্চল থানাধীন বিজি প্রেসের সামনে পাটোয়ারী পরিবহনের একটি কার্গোতে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন নাবিস্কোর সামনের রাস্তায় উত্তরাগামী বলাকা পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-জ (১১-১৭০৭) নম্বর একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অপরদিকে, সন্ধ্যার পর ৭টা ২০ মিনিটে নয়াপল্টন স্কাউট ভবনের সামনের সড়কে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের রাজধানীর শাহজাহানপুরের বাসায় আবারও তল্লাশি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সাদা পোশাকধারী সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি দল তার শাহজাহানপুরের বাসায় তল্লাশি চালায়। দলীয় সূত্র জানায়, তল্লাশি চলাকালে বাসায় মির্জা আব্বাস বা তার স্বজন কেউ ছিলেন না। তবে মির্জা আব্বাসের ব্যাপারে বাসার কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রায় আধাঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা চলে যান। উল্লেখ্য, এক সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে তৃতীয় দফায় তল্লাশি চালানো হলো মির্জা আব্বাসের বাসায়। এর আগে ৩ ও ৫ই জানুয়ারি দুই দফায় তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে জানান, বৈঠকের সময় গাজীপুর জামায়াত-শিবিরের ১২ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এদের কাছ থেকে পাঁচটি ককটেল, বিপুল সংখ্যক জেহাদি বই ও সরকারবিরোধী প্রচারপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, গতকাল বিকাল পৌনে ৫টার দিকে মহানগরের নলজানী এলাকায় গ্রেট ওয়াল সিটি আবাসিক প্রকল্পের এক বাড়িতে জয়দেবপুর থানা পুলিশ ওই অভিযান চালায়। নাশকতার জন্য গোপন বৈঠক করতে থাকলে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা সবাই জামায়াত-শিবিরের কর্মী।
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে তার গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রেখে  পেপার সেপ্র করে হত্যার চেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আজ ফরিদপুর শহরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। গতকাল শহরের চরকমলাপুর এলাকার একটি বাড়িতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েল। এ সময় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, ২০-দলীয় জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলাকালে এ প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জ শহরের ভেতর একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সন্নিকটে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বন্ধন পরিবহনের ওই বাসে গতকাল  রাত ৮টা ৫ মিনিটে আগুন দেয়া হয়। তবে আগুন দেয়ার আগে বাসের যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয়। ফলে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জ মণ্ডপাড়া ফায়ার স্টেশনের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসের আগুন নেভায়। কিন্তু এর আগেই বাসের ৯০ ভাগ পুড়ে গেছে। গাড়িটি বিএনপি নেতা মাহাবুল্লাহ তপনের বলে জানা যায়। বাসে আগুন দেয়ার সময়  হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটনো হয়। এতে পুরো শহরময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কে যানবাহন চলাচল।
শহরবাসী বলছেন, স্বাধীনতার পর বহু আন্দোলন সংগ্রামে কখনও শহরের ভেতর যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেনি। এ প্রথম মূল শহরের ভেতর একটি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটলো। এটা আশঙ্কাজনক। সদর মডেল থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ভস্মীভূত বাসটি রেকার দিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জে গতকাল সকালে বিএনপির মিছিল থেকে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশের একজন এসআই বাদী হয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে নিতাইগঞ্জ ট্রাক মালিক সমিতির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাকচালক বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই বিল্লাল হোসেন শিকদারের মামলায় পুলিশের ওপর হামলা, রাষ্ট্রীয় কাজে বাধাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে শুক্রবার সকালের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত নগর বিএনপির সহসভাপতি সুরুজ্জামানকে। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি কর্মী সুমনকে দ্বিতীয় ও তোফায়েল আহমেদকে তৃতীয় আসামি করা হয়। ৪নং আসামি হলো সকালের মিছিলের নেতৃত্বদানকারী নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়। অন্যদিকে একই ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলার বাদী নিতাইগঞ্জ ট্রাক মালিক সমিতির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম। এতে আসামি করা হয় গতকাল সকালের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি কর্মী সুমন ও তোফায়েলকে যথাক্রমে এক ও দুই নং আসামী করা হয়। অপর আসামীরা হলো- নারায়ণগঞ্জ নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ প্রমুখসহ  ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়।
স্টাফ রিপোর্টার. বগুড়া থেকে জানান, বগুড়ার ধুনটের হুকুম আলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবরোধ সমর্থক বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং শটগানের ৫ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে ৩ জন গুলিবিদ্ধ ও ৪ পুলিশ সদস্যসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া পুলিশ ৫ জনকে আটক করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুর ১২টায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা ধুনট-শেরপুর সড়কের হুকুম আলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল করে। জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ এ কে এম তৌহিদুল আলম মামুন ওই মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মিছিল শেষে সড়ক অবরোধ করে সমাবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে অবরোধ সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও শটগানের ৫ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এসময় অবরোধ সমর্থকরা পুলিশের উদ্দেশ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে।  পুলিশের গুলিবিদ্ধ হয়ে উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম, উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎ ও ছাত্রদল নেতা রাজু আহমেদ আহত হয়েছে। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ওই ঘটনায় উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবু তালহা শামীম, বিএনপি কর্মী রফিকুল ইসলাম, ছাত্রদল কর্মী জাহিদুল ইসলাম মধু, রঞ্জু, মিশু, শামীম, মৎস্যজীবী দল নেতা সেলিম আহমেদসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়েছে। এদিকে পুলিশ কনস্টেবল জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল মোমিন, জাহাঙ্গীর হোসেন, ফরিদুল ইসলাম আহত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সংঘর্ষের সময় পুলিশ ধুনট সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বনি আমিন, উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎ, উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সাবেক সভাপতি সেলিম আহমেদ, ছাত্রদল নেতা আলম হাসান ও কাপড় ব্যবসায়ী ইশ্বরঘাট গ্রামের তৈয়বর আলীর ছেলে আব্দুল হান্নানকে আটক করেছে। ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম মামুন বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। লাঠিচার্জে এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রায় ২০জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। ৫জন দলীয় নেতাকর্মীকে অবৈধ ভাবে আটক করেছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এ নগ্ন হামলাই প্রমাণ করে দেশের মানুষের আজ গণতান্ত্রিক অধিকার নেই।  ধুনট থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউর রহমান পিপিএম বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা হুকুম আলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক অবরোধ করে সমাবেশের চেষ্টা করছিল। সমাবেশের নামে রাস্তায় যানবহন চলাচল বন্ধ করতে তারা পরিকল্পনা নিয়েছিল। এজন্য লাঠিচার্জ ও শটগানের গুলি নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। অপর দিকে বগুড়া থেকে দূরপাল্লার বাস-ট্রাক চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিক ও শ্রমিকরা। গতকাল বগুড়া সার্কিট হাউজে মালিক-শ্রমিক ও প্রশাসনের যৌথসভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় মালিক শ্রমিকরা জানান, সড়ক, মহাসড়কে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে তারা সড়ক মহাসড়কে গাড়ি বের করবেন। এ ব্যাপারে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। এ আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বাস ও ট্রাক মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা শুক্রবার থেকে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার বিকাল সোয়া ৩টায় বগুড়া কোচ টার্মিনাল থেকে কয়েকটি বাস ছেড়ে গেছে। বাস মালিক-শ্রমিকরা ৫-৭টি করে বাস ছাড়চ্ছে। বগুড়া ঠনঠনিয়া থেকে একতাসহ কয়েকটি কোচ ছেড়ে গেছে। এছাড়া অন্যান্য কাউন্টার থেকেও গাড়ি ছাড়ছে। এছাড়া ট্রাক মালিকরা বগুড়ার মোকামগুলো থেকে পণ্য নিয়ে ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন স্থানে রওয়ানা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০-দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচিতে পরিবহন সেক্টরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে মালিক-শ্রমিকরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করলে আইনশৃ্‌্‌ঙ্খলা বাহিনী তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতার প্রদানের আশ্বাস দেন। সভায় বগুড়ার জেলা প্রশাসক শফিকুর রেজা বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক, হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তা, র‌্যাব, বিজিবির প্রতিনিধি, মোটর মালিক গ্রুপের সভাপতি আখতারুজ্জামান ডিউক, সাধারণ সম্পাদক সাগর কুমার বায়, মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল লতিফ মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন শেখ হেলাল, ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মান্নানসহ শ্রমিক ও মালিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, নগরীতে পেট্রল ঢেলে আগুন, বিক্ষোভ মিছিল আর গৌরনদীতে ট্রাকে অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে বরিশালে অবরোধের চতুর্থ দিন অতিক্রম করেছে। তবে বেলা বাড়ার পর পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি। দূরপাল্লা এবং অভ্যন্তরীণ রুটে বাস ও লঞ্চ চলাচল করছে। নিরাপত্তায় আজো বাড়তি পুলিশ মোতায়েন আছে। বরিশাল নগরী থেকে ৩ জন এবং গৌরনদী থেকে ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সকাল ৭টায় বগুড়া রোডে পেট্রল ঢেলে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ করে নগর ছাত্রদল। এসময় পুলিশ ৩ জনকে আটক করে। সকালে গৌরনদী উপজেলার গয়নাঘাটা নামক স্থানে একটি ট্রাকে আগুন দেয় অবরোধ সমর্থকরা। এখানের পুলিশ নাশকতারা অভিযোগে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল হোসেন মিয়া এবং নলচিরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জামাল খোন্দকারকে আটক করে। তবে বেলা বড়ার পর আর কোথায়ও পিকেটিং হয়নি। হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মো. রানা জানান, তারা সকাল থেকেই দূরপাল্লার গাড়ি ছেড়েছে। অভ্যন্তরীণ সকল রুটে বাস চলাচল করছে। লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক আছে। নগরীতে গণ পরিবহন আগের মতোই চলছে। নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. আজাদ রহমান জানান, অবরোধ কর্মসূচি থাকায় নগরীতে আজো বাড়তি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বড় ধরনের কোন সহিংসতার খবর নেই বরিশালে।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে অবরোধে চতুর্থদিন একটি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রাক চালক মোহাম্মদ মোস্তফা অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ সমর্থনকারীরা ২০-২৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। পুলিশ একজনকে আটক করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিএনপি’র ডাকা অবরোধের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লেমুয়ায় একটি ট্রাকে ও মোহাম্মদ আলী বাজার এলাকায় একটি কার্ভাডভ্যানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় অন্তত ৮/১০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। ফেনী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার জাহাঙ্গীর আলম জানান, মহাসড়কে পরিবহনে আগুনের খবর পেয়ে দমকল কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। মহাসড়কের লেমুয়ায় পেট্রোল বোমার আগুনে ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-চ-১৮-১১৪৪) চালক কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকার মোহাম্মদ মোস্তফা অগ্নিদগ্ধ হয়। এ সময় দমকলকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে ফেনী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়েছে। এদিকে শহরের সেন্ট্রাল হাইস্কুল মোড়ে ও শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের গ্রীন টাওয়ারের সামনে অবরোধকারীরা সিএনজি অটোরিকশাসহ ১৪/১৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে।
ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল হক জানান, নাশকতার চেষ্টা চালানোর অপরাধে শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে একজনকে আটক করা হয়েছে। মহাসড়কে পুলিশ প্রহরায় পণ্যবাহী ট্রাক ও কার্ভাডভ্যান চালাচল করছে। শহরে তিন চাকার যানবাহন রিকশা, সিএনজি, টমটম চললেও ভারী যানবাহন চলাচল করেনি।
মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি জানান, মনিরামপুরে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বত্তরা। এ ঘটনায় তিন বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার পাঁচাকড়ি হাইস্কুলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বাসচালক ফরিদ হোসেন জানান, ফুলতলার সুপার জুট মিলের যাত্রীবাহী একটি বাস শ্রমিক নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে উপজেলার পাঁচাকড়ি হাইস্কুলের সামনে পৌঁছলে রাস্তার উপর একটি গাছ ফেলে গতিরোধ করে। ৫/৬ জন যুবক বাসটি ভাঙচুর চালায় এবং একপর্যায় পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় মনিরামপুর থানা পুলিশ পাঁচাকড়ি গ্রামের বিএনপি কর্মী সাদ্দাম হোসেন, মোস্তফা কামাল ও তুহিন আহম্মেদকে আটক করেছে।
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসুচির চতুর্থদিন গতকাল অচল ছিল মহানগরী খুলনা। অবরোধের কারণে খুলনা থেকে দূরপাল্লার কোন যানবাহন ছেড়ে যায়নি। তবে লঞ্চ ও  ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। নগরীতে রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল ছিল স্বাভাবিক। নগরীর প্রবেশপথ এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মহানগরীর ৮টি থানায় অতিরিক্ত দেড় হাজার পুলিশ, দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনসহ র‌্যাব’র টহল অব্যাহত রয়েছে।  বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, খুলনা মহানগর সভাপতি ও জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- এডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা, ডা. গাজী আবদুল হক, শেখ খায়রুজ্জামান খোকা, এডভোকেট এসআর ফারুক, বিজেপি’র সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন সেন্টু, জেপি’র সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, জামায়াত নেতা এডভোকেট শাহ্‌ আলম ও খান গোলাম রসুল, বিএনপি নেতা রেহানা ঈসা, স ম আবদুুর রহমান, ফখরুল আলম, আমির এজাজ খান, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, আরিফুজ্জামান অপু, মনিরুজ্জামান মন্টু, শেখ আবদুর রশিদ, মাহবুব কায়সার, আসাদুজ্জামান মুরাদ, জামায়াত নেতা মাওলানা ওলিউল্লাহ, যুবদল নেতা শফিকুল আলম তুহিন, আজিজুল হাসান দুলু, শেখ সাদী, এহতেশামুল হক শাওন প্রমুখ। এর আগে সকাল ৮টার দিকে দৌলতপুর থানা বিএনপি’র এক মিছিল খুলনা-যশোর মহাসড়কের মহসিন মোড় থেকে বের হয়। বিএনপি’র থানা সভাপতি শেখ মোশারফ হোসেন, মহানগর কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, সিরাজুল হক নান্নু, মুর্শিদ কামাল, সাজ্জাদ হোসেন তোতন প্রমুখ মিছিলে নেতৃত্ব দেন।
স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে জানান, নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হাসান মো. নোমানের নেতৃত্বে ঝটিকা মিছিল বের করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন শহর যুবদলের নেতা সবুজ, শহর ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজানসহ জেলা, সদর ও শহর ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মী। এ ছাড়া অবরোধের সমর্থনে খণ্ড খণ্ড মিছিল করেছে সোনাপুর, দত্তেরহাট, মাইজদী বাজারের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। অবরোধের কারণে নোয়াখালী থেকে দূরপাল্লার বাসসহ সব যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। নাশকতার আশঙ্কায় নোয়াখালীতে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ১৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত জেলা পুলিশ প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ১৭ জনকে আটক করে। আটকদের মধ্যে বিএনপির ১৩, জামায়াতের দু’জন ও শিবিরের দুই নেতাকর্মী রয়েছেন। অন্যদিকে ঢাকার কাজীর পাড়ায় দুর্বৃত্তদের পেট্রল বোমায় শিক্ষিকা সামছুন্নাহার দুই সন্তানসহ মারাত্মকভাবে দগ্ধ হওয়ার প্রতিবাদে ও আহতদের সুচিকিৎসায় সরকারি সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতার দাবিতে মানববন্ধন করেছে হাতিয়া শিক্ষক সমিতি। গতকাল দুপুরে হাতিয়া উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি উপজেলা শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি জানান: বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পলাশবাড়ীতে অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ সময় যানবাহন ভাঙচুর  রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় অন্তত ২১টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয় ও একটি ট্রাক খাদে পড়ে যায় এবং ২টি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থল থেকে ও প্রত্যক্ষদর্শী  জানায় রাতে পুলিশ প্রহরায় বেশকিছু যানবাহন রংপুর থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। গাড়িগুলো পলাশবাড়ী মহেশপুর এলাকায় পৌঁছালে অবরোধকারীরা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। অবস্থা সামাল দিতে রাবার বুলেট ও বেশকিছু টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কে উল্লাপাড়া উপজেলার চৌকিদহ ব্রিজের কাছে অবরোধ সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুই জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এরা হলেন- উল্লাপাড়ার উলিপুর গ্রামের শিবিরকর্মী জান্নুল ও চৌকিদহ গ্রামের আবদুল বাতেন। এদেরকে গুরুতর অবস্থায় সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে জেলা শিবিরের সভাপতি সোলায়মান হোসেন ও অফিস সম্পাদক কিবরিয়াকে আটক করেছে। এদের বাড়ি সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায়। এ সময় পুলিশ তিনটি ককটেল, বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ, তিনটি ছুরি, ব্যানার ও একটি ডিসকভার মোটরসাইকেল উদ্ধার করে।  প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অবরোধ সমর্থক একদল জামায়াত-শিবির  নেতাকর্মী চৌকিদহ ব্রিজের কাছে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে অবরোধকারীরা পুলিশের উপর আক্রমণ চালায়। এ সময় তারা কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনায়। পরে পুলিশ শর্টগানের ৪ রাউন্ড গুলি ছুড়লে অবরোধকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
চাঁপাই নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ভারত থেকে আমদানিকৃত ৪৫টি কাঁচা পণ্যের গাড়িসহ সাড়ে ৩শ’ অন্যান্য পণ্য ভর্তি আটকা পড়েছে বলে পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিঙ্ক লিমিটেডের কো-অর্ডিনেটর টিপু জানিয়েছেন। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকালে ভারতের মহদীপুর স্থলবন্দর থেকে ২৫টি পিয়াজভর্তি ট্রাক, ১২টি ফলের ট্রাক, ১টি আদা ভর্তি ট্রাকসহ ভুট্টা-ভুসির কিছু ট্রাক প্রবেশ করে। কিন্তু সোনামসজিদ স্থলবন্দর এলাকায় কোন বাংলা ট্রাক না থাকায় আমদানিকৃত পণ্য আটকা পড়ে রয়েছে পানামা ইয়ার্ডের ভেতরে। আগের আমদানিকৃত কাঁচা পণ্যভর্তি ট্রাক গত বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি’র প্রহরায় ৮১টি পণ্যভর্তি ট্রাক ছেড়ে যাওয়া আমদানিকৃত পচনশীল পণ্যবাহী দু’টি ট্রাকে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। তারপরও এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ভারতের মহদীপুর স্থলবন্দর থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আমদানিকৃত কাঁচা পণ্যভর্তি ট্রাক প্রবেশ করিয়েছেন। অন্যদিকে ভারতের মহদীপুর স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী ভূপতি মণ্ডল জানান, মহদীপুর স্থলবন্দরে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে ৫ শতাধিক পণ্যভর্তি ট্রাক।
স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, অবরোধের চতুর্থদিনে যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় আরও একটি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। টঙ্গীবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জগলুল হালদার ভুতুর মালিকানাধীন দিঘীরপাড় ট্রান্সপোর্ট পরিবহনের একটি বাসে বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় এ আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এদিকে, বাসটি আগুন দেওয়ার কয়েক মিনিট পর একই সড়কের পঞ্চবটি ও শাসনগাঁও এলাকার মাঝামাঝি স্থানে একই পরিবহনের আরও ১ টি যাত্রীবোঝাই বাস ভাঙচুর করা হয়। দিঘীরপাড় পরিবহনের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ জগলুল হালদার ভুতু জানান, গতকাল সকালে মুন্সীগঞ্জ শহরের লিচুতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩০-৩২ জন যাত্রীবোঝাই করে দিঘীরপাড় পরিবহনের একটি বাস ঢাকার গুলিস্তানের উদ্দেশে রওনা দেয়। বাসটি নারায়ণগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীর পার্শ্ববর্তী সড়কে পৌঁছলে বাসটির গতিরোধ করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বাসের ভেতর আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়কে আধাঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি: নেত্রকোনা জেলা শহরের নাগড়া মোড়ে বৃহস্পতিবার রাতে একটি বিআরটিসি বাসে আগুন  দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ সরকারদলীয় শতাধিক নেতাকর্মী রাতেই জেলা শহরের ছোটবাজারস্থ বিএনপিদলীয় কার্যালয়সহ বিএনপি নেতাদের বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে। সূত্র জানায়, জেলা শহরের নাগড়া মোড়ে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে একটি  বিআরটিসি বাসে দুবৃর্ত্তরা আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই বাসটি ভস্মীভূত হয়। এ ঘটনার পর পরই সরকারদলীয় শতাধিক নেতাকর্মী ছোটবাজারস্থ বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ার টেবিলসহ সকল আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। হামলাকারীরা রাতেই শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় বিএনপি নেতা আবদুল ওয়াহাব ভূঁইয়া, শাহের পাঠানসহ বেশ কয়েকজনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে। জেলা বিএনপি’র সভাপতি সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দিন খান হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান: অবরোধে নাশকতার আশঙ্কায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি, কমলনগর, চন্দ্রগঞ্জ থানাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছে বিজিবি।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান: বিএনপির ডাকা ৪র্থ দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঠাকুরগাঁওয়ে ঢিলেঢালাভাবে চলছে। বিএনপির কোন নেতাকর্মীদের পিকেটিং, মিছিল, সমাবেশ করতে দেখা যায়নি। এদিকে রাতভর অভিযান চালিয়ে নাশকাতার আশঙ্কায় পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের ৮ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন দুলাল, সাদেকুল, হুরুন-অর-রশিদ, আরিফুল, সাইদুল, আলতাফুর, মিজান ও লোকমান। গতকাল দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটে বড় কোন যানবাহন চলাচল না করলেও হাল্কা যানবাহন চলাচল করছে। অবরোধের কারণে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে দূরপাল্লার যাত্রীরা। ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি এ কে এম মেহেদী হাসান জানান, জেলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জে ছাত্রদল-পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা করেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় সদর থানায় এসআই আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে এ মামলা করেন। জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নূরুল ইসলাম নুরুলকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।
জুড়ী (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ এনে মৌলভীবাজারে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা এম নাসের রহমান, বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু ও জেলা জামায়াতের আমীর আবদুল মান্নানসহ ২০ দলীয় জোটের ১৩০ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে আড়াই শ’ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার পুলিশ বাদী হয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় এ মামলা করে। এদিকে, গত ৫ই জানুয়ারি রাতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ, জামায়াত, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে জেলার মদন জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুর রহমান, নেত্রকোনা সদরে ৪, বারহাট্টায় ১, খালিয়াজুরীতে ১, আটপাড়ায় ২ ও মোহনগঞ্জে ৩ জন। নেত্রকোনা পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন খান জানান, নাশকতা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, বড়লেখা উপজেলা সদরে ৫ই জানুয়ারি আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ৩৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিভিন্ন-শ্রেণীপেশার মানুষের দাবি, দ্রুত জনপ্রিয় এ পৌর মেয়রের ওপর থেকে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার কার হোক। জানা গেছে, ৫ই জানুয়ারি বিএনপি ও ২০ দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলার বড়লেখা উপজেলা শহরে বিএনপির স্থানীয় কার্যালয় থেকে বিএনপি মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এ সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি শান্ত করতে পৌর মেয়র প্রভাষক ফখরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এলে পুলিশ মেয়রের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। এসআই বিনয় ভূষণ রায় বাদী হয়ে মেয়রকে ১নং আসামি করে মোট ৩৮ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ এবং ৫০ জনকে অজ্ঞাত রেখে মামলা করেন।

No comments

Powered by Blogger.