আদিবাসী ছাত্রনেতা নিজ ঘরে খুন- রাজশাহী ও তানোরে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সভা

রাজশাহীর তানোর উপজেলার ময়েনপুর গ্রামে বাবলু হেমব্রম (২৩) নামের এক সাঁওতাল যুবককে গত বৃহস্পতিবার রাতে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত বাবলু হেমব্রম এবার রাজশাহী কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন। তিনি সান্তাল স্টুডেন্ট ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁর বাবার নাম মহেশ্বর হেমব্রম। গতকাল শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে মরদেহের সুরতহাল প্রস্তুতকারী মুন্ডুমালা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হুমায়ন প্রথম আলোকে বলেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর কাটা গলাটা কেবল চামড়ার সঙ্গে আটকে ছিল। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাবলু হেমব্রমের বাড়ির সামনে আদিবাসী নেতা-নেত্রীসহ শতাধিক আদিবাসী নারী-পুরুষের ভিড়। বাড়িতে ঢুকেই দেখা যায়, ডুকরে কাঁদছেন বাবুলর মা শান্তি টুডু। কাঁদতে কাঁদতে তিনি পুলিশের উদ্দেশে বলছেন, ‘হামার একটাই বিটা, লিয়া যাইতে দিব না। কাটাছিঁড়া করতে দিব না।’
বাবলুর বাবা মহেশ্বর হেমব্রম প্রথম আলোকে জানান, বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে মানুষের আওয়াজে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। দরজা খুলে দেখতে পান ছেলের ঘরের দরজা খোলা। এগিয়ে এসে বাইরের বাড়ির দরজা খোলা দেখে মনে করেন চোরে তাঁর গরু নিয়ে গেছে। চিৎকার করতে থাকেন। ছেলের ঘরে ঢুকে দেখতে পান ছেলে চৌকির পরিবর্তে মেঝেতে পড়ে রয়েছেন। ডেকে কোনো সাড়া না পেয়ে মাথা নাড়াতে গিয়ে বুঝতে পারেন, গলা প্রায় সম্পূর্ণই কাটা। মহেশ্বর হেমব্রম জানান, তিনি ভেবেই কূলকিনারা পাচ্ছেন না যে তাঁর এমন শান্ত ও নরম স্বভাবের ছেলে, যার কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ ছিল না, তাঁকে কেউ এমন নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করতে পারে। ছেলের মৃত্যুতে তাঁর সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।
ক্ষোভ-প্রতিবাদ-কর্মসূচি: নিহত বাবলু হেমব্রমের বাড়ির সামনে উপস্থিত কয়েক শ নারী-পুরুষ সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভা করেন। এতে বক্তব্য দেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন ও রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি বিলম রাজোয়ার। তাঁরা বলেন, দেশে যখনই গোলযোগপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়, তখনই আদিবাসীদের ওপর হামলা হয়। এর সঙ্গে জড়িত থাকে ভূমিদস্যু বা কোনো স্বার্থান্বেষী মহল। তাঁরা এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানান এবং অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের মুখোমুিখ করার দাবি জানান। সভা থেকে আজ শনিবার বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন এবং রোববার রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
অন্যদিকে রাজশাহীর জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল, পথ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে আদিবাসী ছাত্র পরিষদ। এখানে বক্তব্য দেন আদিবাসী নেতা রবীন্দ্রনাথ সরেন, রাজকুমার শাওঁ, ছাত্রনেতা সুবাস হেমব্রম, উজিত মুন্ডা, বাংলাদেশের ওয়ার্কর্স পার্টির নেতা লিয়াকত আলী, ছাত্র মৈত্রীর নেতা মতিউর রহমান প্রমুখ। গতকাল সান্তাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রাজশাহী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়। সান্তাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সমর মাইকেল সরেন বলেন, তাঁরা আজ শনিবার রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সব সংগঠনকে নিয়ে একটি মানববন্ধনের আয়োজন করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.