রাজনৈতিক অস্থিরতায় ছন্দপতন শিক্ষাব্যবস্থায়

ফের রাজনৈতিক অস্থিরতার কবলে গোটা শিক্ষাব্যবস্থা। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বড় দুই জোটের কঠোর অবস্থানে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বছরের শুরুতে অনেক শিক্ষার্থী জীবনের প্রথম ক্লাসে যেতে পারেনি। এই রাজনৈতিক অস্থিরতায় উদ্বিগ্ন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, গেল দুই বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার একটু আগে ক্লাসসহ শিক্ষাকার্যত্রুম শুরু করা হলেও ফের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ সালে শেষদিক শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা চলেছে ২০১৪ সালে পুরো বছর। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গেল বছর ছুটির দিনেও ক্লাস পরীক্ষা নিয়েছেন তারা। তারপরও সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে এ বছরের শুরু থেকে ক্লাস শুরু করেও তা পারেনি। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে কঠোর অবস্থানের মধ্যে গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে টানা অবরোধ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক, ইবতেদায়ী, মাধ্যমিক, দাখিল ও কারিগরি বিদ্যালয়ে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। দশম শ্রেণীতে রয়েছে আরও প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীর নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার কথা ছিল সোমবার। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকে রয়েছে সোয়া কোটি শিক্ষার্থী, যাদের ক্লাস শুরু হতো এদিন। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকে ২৪ লাখ এবং উচ্চশিক্ষা স্তরে প্রায় ৩০ লাখ ছাত্রছাত্রীও এদিন ক্লাস করতে পারেনি।
এ বিষয়ে রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহানা আরা বলেন, বছরের শুরু দিনই শিক্ষার্থী ক্লাস করতে পারেনি। বছরের শুরুতেই এই  হোঁচট সারা বছর শিক্ষার্থীদের গায়ে লেগে থাকবে। এবার বার্ষিক পরীক্ষার ফল দ্রুত দিয়ে ক্লাস শুরু করেছি। কিন্তু ক্লাসের প্রথম দিনই থেকে অবরোধ। ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের ডায়েরি ও সিলেবাস দেয়া হয়েছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এবার সরকারি ছুটির দিনেও ক্লাস চালানোর কথা ভাবছি। কিন্তু সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হরতাল-অবরোধে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কথা মাথায় রেখে শিক্ষা প্রতষ্ঠানগুলো হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত রাখতে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সংগঠনটির চেয়ারম্যান জিয়াউল কবীর দুলু বলেন, আজকের এই পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক নেতারা দায়ী। জাতি গঠনের কারিগর লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে দু’টি জোট। তিনি বলেন, আমরা এ অপ-রাজনীতির অবসান চাই।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি স্কুল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিডিউল মোতাবেক ক্লাস চললেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি হার ছিল একেবারে কম। আর যারা আসছেন, তারাও সব ক্লাস না করে চলে যাচ্ছেন। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এই অনিশ্চয়তায় মধ্যে স্কুলে পাঠাতে ইচ্ছুক না। অনেকেই সন্তানদের স্কুলে ভ্যানে না পাঠিয়ে নিজেরাই স্কুলে নিয়ে আসছেন। অভিভাবকরা নিজেদের ব্যস্ততার কারণে ক্লাস শেষ না করেই বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। রাজধানীর কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, এই সময় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকার কথা স্কুল প্রাঙ্গণ। সেখানে নিরব সময় পার করছেন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি হার ছিল কম।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুফিয়া খাতুন বলেন, গত সোমবার থেকে আমার স্কুলের প্রথম ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অবরোধের কারণে তা হয়নি। টানা এই অবরোধে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার অনেক কম। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে সাহস পান না অভিভাবকরা। কখন কি হয় ঠিক নেই। বনানী বিদ্যা নিকেতন স্কুলের অভিভাবক মনির হোসেন বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে যেসব সহিংসতা হয় তাতে কোন সাহসে মেয়েকে স্কুলে পাঠাব। কে নিরাপত্তা দেবে? তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুই নেত্রী শুধু নিজেদের স্বার্থে আন্দোলন করেন। তাদের ঘর থেকে বের হয়ে দেখা উচিত হরতাল-অবরোধে মানুষের কত সমস্যায় পড়তে হয়।

No comments

Powered by Blogger.