বিরোধীদের ওপর দমনপীড়ন বন্ধ করুন

অবিলম্বে বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর দমনপীড়ন ও একচেটিয়া গ্রেপ্তার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এছাড়া সংস্থাটি গণমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে সরকারের প্রতি। বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে এসব আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের উচিত অবিলম্বে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও বিরোধী দলের সদস্যদের একচেটিয়া গ্রেপ্তার বন্ধ এবং গণমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা। সম্প্রতি সারা দেশে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলগুলোর শত শত কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের বিতর্কিত নির্বাচনের বছরপূর্তিতে বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সরকারের পক্ষ থেকে এ অভিযান আসে। সংস্থাটির এশিয়া পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন- সরকারের নির্বিচার বলপ্রয়োগ, ঢালাও গ্রেপ্তার এবং সেন্সরশিপ শুধু বিরাজমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিকে আরও উসকে দেবে। তিনি আরও বলেন, জনগণকে সুরক্ষা দেয়ার বাধ্যবাধকতা কর্তৃপক্ষের রয়েছে; কিন্তু সেটা এমনভাবে করা প্রয়োজন যেটা মানবাধিকার আর আইনের শাসনকে ছুড়ে ফেলে দেয় না। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ৩রা জানুয়ারি থেকে তার কার্যালয়ে কার্যত অবরুদ্ধ। তিনি গৃহবন্দি নন- সরকার এমন দাবি করলেও নিরাপত্তাকর্মীদের ভারি বহরের অবস্থান সেখানে রয়েছে, ফটক তালাবদ্ধ আর তাকে বের হতে দেয়া হয়নি। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ঘোষণা দিয়েছেন, অগ্নিসংযোগ হামলার জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এ সপ্তাহে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটি দুর্নীতি মামলার বিচার শুরু হয়েছে। তাকে ঘিরে যে নিরাপত্তাব্যুহ রয়েছে সে কারণে তিনি আদালতে হাজির হতে পারেননি। ৬ই জানুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ঢাকার প্রেস ক্লাব থেকে বের হওয়ার পর গ্রেপ্তার করা হয়। ক্ষমতাসীন দল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে দুই কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই দিন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আরও দু’জন নিহত হন। এছাড়া বিএনপির অনেক নেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া কর্তৃপক্ষ বিরোধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে মনে করা হয়- এমন গণমাধ্যমকে টার্গেট করেছে। ৭ই জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়েছে একুশে টিভির চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে। তারেক রহমানের সরকারবিরোধী বক্তব্য সম্প্রচারের একদিন পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরই সরকার কোন ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই তারেক রহমানের কোন বক্তব্য সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকার অভিযোগ করেছে, বিরোধী নেতা-সমর্থকরা সহিংসতা আর অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু তাদের এ দাবির পক্ষে কোন যথার্থ তথ্য দেখাতে পারেনি। একই সঙ্গে এইচআরডব্লিউ বলেছে, প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সহিংসতা পরিহার করতে দলীয় নেতাকর্মীর প্রতি বিরোধী দলগুলোর নেতাদের আহ্বান জানানো উচিত। ২০১৪ সালের নির্বাচনকালীন তীব্র সংঘাতে পণ্ড হয়। এতে শত শত মানুষ নিহত ও আহত হয়। সে সময় বিরোধীদের বেশকিছু সহিংস প্রতিবাদের জবাবে সরকার অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযান চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং ঢালাও গ্রেপ্তার করে। ব্রাড অ্যাডামস বলেন, সাম্প্রতিক এ কণ্ঠরোধমূলক অভিযানের আগে থেকেই সরকারের সমালোচনা করার বিষয়টি হুমকির মুখে ছিল। আর একটি টিভি স্টেশনের মালিককে গ্রেপ্তার এবং ওই চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া ওই সরকারের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য নয়, যারা নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে দাবি করে।

No comments

Powered by Blogger.